নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত নির্যাতন!
'ফুলপরির মুখে ভয়ঙ্কর সেই ৫ ঘণ্টা, মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি!'
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- ভিডিও ভাইরাল হলে তুই ফাঁস দিয়ে মরবি-ফুলপরির মুখে ভয়ঙ্কর সেই ৫ ঘণ্টা, মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি-মানবজমিন
- ইবি ছাত্রী নির্যাতন: মিলেছে প্রভোস্টের অবহেলা, প্রক্টরের উদাসীনতার প্রমাণ - বাংলাদেশ প্রতিদিন
- ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে নির্যাতন: ছাত্রলীগের ২ নেতার ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ -ইত্তেফাক
- নানা অভিযোগের মধ্যে আরও ৯৪৭ বাসে ই-টিকেটিং চালুর ঘোষণা-প্রথম আলো
- বিদ্যুৎ চুক্তির নামে সরকার সম্পূর্ণ লুটপাট চালাচ্ছে: ফখরুল-যুগান্তর
- ওয়াদা করুন, আবারও নৌকায় ভোট দেবেন : প্রধানমন্ত্রী -কালের কণ্ঠ
কোলকাতার শিরোনাম:
- ‘কার ছত্রছায়ায় দেশকে লুটছেন আদানি?’ ‘ছাতা ধরা’ প্রসঙ্গে মোদির কটাক্ষের পালটা খাড়গের-সংবাদ প্রতিদিন
- রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগ সমস্যার আপাতত জট খুলল-আনন্দবাজার
- রাজ্যের মন্ত্রী বনাম কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দ্বন্দ্বে দুষ্কৃতী তাণ্ডব দিনহাটায়, উদ্বেগ জানালেন রাজ্যপালও-গণশক্তি
শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি-
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান গোলাপের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৯টি বাড়ি কেনার অভিযোগের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?
২. আবার অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলিরা তাণ্ডব চালিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- ইসরাইলি সেনাদের ছত্রচ্ছায়ায় তারা এই তাণ্ডব চালায়। কী বলবেন বিষয়টি নিয়ে?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
ভিডিও ভাইরাল হলে তুই ফাঁস দিয়ে মরবি-ফুলপরির মুখে ভয়ঙ্কর সেই ৫ ঘণ্টা, মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি-মানবজমিন
লাথি, ঘুষি। জামা খুলতে বাধ্য করা। ভিডিও ধারণ। হুমকি। ভয়ঙ্কর পাঁচ ঘণ্টা। মানবজমিনের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরি। অমানবিক, লোমহর্ষক বিবরণ। ১২ই ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১১টা। ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা তার দুই অনুসারী দিয়ে গণরুমে ডেকে নেন ফুলপরিকে। সেখানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি শুরু হয়। যে যেভাবে পেরেছে মেরেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আলপিন দিয়ে আঘাতও করা হয়।
ফুলপরি বলেন, আমি তাদের হাত-পা ধরে কাঁদতে থাকি। একজন চোখের সামনে আলপিন ধরে। হুমকি দেয় চোখ গলে দিবে। অন্যরা তাকে নিবৃত্ত করে। এত মার দিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি মরে যাচ্ছি। অন্তরা মারছিল আর বলছিল, তুই বলেছিলি তোর বাবা নাকি সরকারি চাকরিজীবী? তখন আমি বলি, এটা বলিনি আমি। তখন আরও বেশি মারে। এবং বলে বলিসনি? তখন এত মারছিল যে, সহ্য করতে না পেরে বলি, জ্বি বলেছি। মাথায় খুব মারছিল। গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস দিচ্ছিল। চেপে ধরেছিল। আমি হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করি। নিচে পড়ে গিয়ে কান্না করছিলাম। তখন মুখের ভেতর গামছা ভরে দেয়। রাত ২টা পর্যন্ত এভাবে গণরুমে টানা মারার পর ডাইনিং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েও মারতে শুরু করে। ছাত্রলীগ নেত্রী তাবাসসুম নিজেকে উদ্দেশ্য করে খুব খারাপ গালি লিখেন। পরে সেটা আমাকে পড়তে বলেন। আমি বলি, না এগুলো পড়বো না। এরপর ভীষণ মারতে থাকে।
একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে পড়ি। তারা সেটা রেকর্ড করে। তখন তাবাসসুম বলছিল, আমি খারাপ মেয়ে (গালি), এটা বলার তোর সাহস হয় কীভাবে। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাবাসসুম, নদী এরা মারছিল। এক পর্যায়ে বলি পানি খাবো। এ সময় ডাইনিংয়ের মেঝেতে পড়ে থাকা একটি নোংরা গ্লাসে পানি খেতে দেয়। চুপ করে থাকলে মারে। কান্না করলেও মারে।
তখন ছাত্রলীগের নেত্রী, প্রভোস্ট স্যারদের উদ্দেশ্যে বাজে কথা বলতে বলে। পরে সেটা ভিডিও করে। শরীরে থাকা জামা খুলতে আমাকে বাধ্য করে। সবকিছু খুলে ফেলার চেষ্টা করে। পরে জামা তুলে সেটা ফোনে ভিডিও করেন। শরীরের আঘাত করা স্থানগুলো যখন খুব ফুলে যাচ্ছিল তখন মাথায়-গায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল। আমাকে নিয়ে মজা করছিল। বলছিল খালি গায়ে শরীর দুলিয়ে নাচ। বলি, আমি নাচতে পারি না। তখন লাথি মেরে আমাকে ফেলে দেয়। বলে, ক্যাম্পাসের ছেলে-ভাইদের দিয়ে তোর সঙ্গে খারাপ কাজ করাবো। এখানে তোকে ফাঁসি দিয়ে রেখে দিলে কে কী করবে? আমার থেকে একটি লিখিত নেয় এই মর্মে, আমার যদি কিছু হয় তাহলে হলের কোনো আপু দায়ী থাকবে না। মারধরের শেষ পর্যায়ে আমাকে দশ মিনিট সময় দিয়ে বোঝাচ্ছিলেন, তুই কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলবি না। ক্যাম্পাসে সবসময় আমাদের কথামতো চলবি। আমাদের কাছে যে ভিডিও আছে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দিবো। এটা ভাইরাল হলে তুই ফাঁস দিয়ে মরবি। তোর বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। কিছু করতে পারবে না। তোর এখানে কেউ নেই। রাত পৌনে চারটা পর্যন্ত এ নির্যাতন চলে।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরি বর্তমানে গ্রামের বাড়ি পাবনায় বাবা-মায়ের কাছে অবস্থান করছেন। ফুলপরি বলেন, আমার এক স্যার ছিল। আজাদ স্যার। স্যারের কাছে গিয়েছিলাম হলে যেন আমার একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেন। হলের বাইরে মেসভাড়া-খাওয়ার খরচ জোটানোর সামর্থ্য নেই আমার। স্যার পরবর্তীতে আমার ডিপার্টমেন্টের স্যারের কাছে সিটের কথা বলে পাঠান। এখান থেকে মূলত তাদের ক্ষোভের শুরু। হল থেকে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা আমাকে বের করে দিতে চেয়েছে, সেখানে স্যারেরা এ সময় একটি সমাধানের ব্যবস্থা করলে তিনি ক্ষেপে যান। সকল ক্ষোভ একত্রিত করে আমার ওপর ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। একদম শেষ পর্যায়ে আমাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে বলেন, এখানে শুয়ে থাকবি। আত্মহত্যা করবি না কিন্তু। ওখানে দেখি আমার ফোনটা পড়ে আছে।
আপুকে রাত ৪টা ১৪ মিনিটে একটি এসএমএস করি, আমার অবস্থা ভালো না, কীভাবে হল থেকে বের হবো। আমাকে হল থেকে বের করে নিয়ে যাও’। পরে নিচতলার পূর্বদিকে থাকা একটি বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিনতলায় আমার রুমে যাই। ব্যাগে প্রায় ৫শ’ টাকার মতো ছিল, সেটা নিয়ে বোরকা পরে এক আপুকে বলি আমার ক্লাসে যেতে হবে। তখন আমাকে তিনি যেতে দেন। এরপর হল থেকে বেরিয়ে আমি বাসস্ট্যান্ডে এসে পাবনার একটি বাসের টিকিট কেটে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে কাউকে কিছু বলিনি। বাবা-মা সবাই ভেবেছে বরাবরের মতোই স্বাভাবিক আছি। পরে ভাইয়াকে বললে তিনি আমাকে রাগ করে বলেন, আগে বলিসনি কেন? এরপরই মূলত পুরো বিষয়টি সবাই জেনে যায়। ওখানে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ মোট ৫ জন ছিলেন। যাদের মধ্যে ৪ জন আমাকে মারধর করে। আরেকজন ভয় দেখিয়েছেন। সরাসরি মারেননি।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুলপরির বাবা মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সেটা শোনার পর বাবা-মা হিসেবে আমাদের কতোটা খারাপ লেগেছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যারা এই অন্যায় এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনের মাধ্যমে ন্যায় এবং সুষ্ঠু বিচার আশা করছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবে না। আমরা চাই প্রচলিত আইনে আদালতের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু বিচার। মামলা করার বিষয়ে আমাদের চিন্তা আছে। অবশ্যই মামলা করবো। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নিজে এতিম ছিলাম। নানীর কাছে মানুষ হয়েছি। পড়ালেখা করতে পারিনি। তাই অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করছি। কোনো ঈদে ওদেরকে নতুন জামা দিতে পারিনি। শুধু সন্তানদের সঠিক শিক্ষায় মানুষ করতে চেয়েছি। যেন ওরা দেশ এবং সমাজের মানুষের কল্যাণ করতে পারে।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের মেয়ে ফুলপরি। সাড়ে ২৩ শতাংশ জমির ওপর একটি ঘর আর পুকুর এটাই তাদের সম্বল। পাটখড়ি আর টিনের বেড়ার তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতেই কোনোভাবে বসবাস করছেন ফুলপরি এবং তার পরিবার। চার ভাইবোনের মধ্যে ফুলপরি তৃতীয়। বাবা ভ্যানচালক। ভাই-বোন সবাই বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করছে। বড় ভাই মো. হযরত আলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে পাস করে এখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বড় বোন হোসনেআরা খাতুন পাবনা মহিলা কলেজ থেকে পাস করে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই মো. ওমর আলী দশম শ্রেণির ছাত্র। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে পাস করে কোনো ভর্তি কোচিং ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনান্সে সুযোগ পেলেও অনেক আশা করে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ২০২১-২২ ভর্তি হন ফুলপরি। মা তাসলিমা খাতুন গৃহিণী।
ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত, নির্দেশদাতা সানজিদা-প্রথম আলো
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা পেয়েছে আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। আর প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারা গোছের বলে প্রতিবেদনে এসেছে।
এ ছাড়া ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ওই ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পৃথক তদন্ত কমিটি।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট আগামীকাল বুধবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাঁকে জানাতেও বলেছেন আদালত। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামের যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত, নির্দেশদাতা সানজিদা
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ফুলপরীকে র্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্করজনক ঘটনা সংঘটনের হুকুমদাতা। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্করজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত এবং তাঁদের দ্বারা ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন।
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। আর বলা হয়, সরাসরি নির্যাতন করেন হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও ময়াবিয়া। তাবাসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয় যে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় উর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করেন। তবে কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গণরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আল আমিন কর্তৃক ফুলপরীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রভোস্টদের গাফিলতি, প্রক্টরের উদাসীনতা
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির ভাষ্য, তাবাসসুম ফুলপরীকে ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে বলেন। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে দেখা করে.....তাবাসসুম এটিকে বেয়াদবি হিসেবে মনে করেন। এ কারণে তাবাসসুম ব্যক্তিগতভাবে ফুলপরীর ওপর রাগান্বিত হন। এটিই তাবাসসুম প্রচার করেন, ফুলপরী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, তাবাসসুমের নেতৃত্বে ১০৫ নম্বর রুমে পিংকীর উপস্থিতিতে ফুলপরীকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় অন্য মেয়েদের উপস্থিতিতে গণরুমে হেনস্তা করা হয়। আজেবাজে কথা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে অন্তরার উপস্থিতিতে রাত নয়টার দিকে ৩০৬ রুমে (ফুলপরীর বক্তব্যে গণরুম) নিয়ে ফুলপরীকে মেয়েদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ গালিগালাজ এবং আজেবাজে কথা বলে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি সেই রাতে ৩০৬ নম্বর রুমে থাকা মেয়েদের প্রত্যেককে ফুলপরীকে একটা করে চড় মারতে নির্দেশ দেন অন্তরা। ফুলপরীর মুঠোফোন কেড়ে নেন লিমা ও তাবাসসুম। নির্যাতনের একপর্যায়ে ফুলপরী অন্তরার পা ধরতে বাধ্য হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফুলপরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অন্তরার নির্দেশে তাঁকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়।
অন্তরার জোরজবরদস্তির কারণে প্রভোস্ট ফুলপরীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন বলে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। বলা হয়েছে, এরপর প্রভোস্ট হলে উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, ময়াবিয়াসহ অন্যান্য মেয়েরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করেন। পরে ফুলপরীকে প্রভোস্ট শামসুল আলম বরাবর মুচলেখা দিতে বাধ্য করা হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি ফুলপরীর জবানবন্দি গ্রহণের সময় তাঁর বাঁ গালে কালো দাগ দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে এসেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্টার আবদুর রাজ্জাক, শাখার কর্মকর্তা হামিদা খাতুন, আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা ও ফুলপরী ইস্যুতে গাফলতি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারা গোছের বলে প্রতিবেদনে এসেছে।
বিদ্যুৎ চুক্তির নামে সরকার সম্পূর্ণ লুটপাট চালাচ্ছে: ফখরুল-যুগান্তর
পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হওয়ার পরেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার প্রসঙ্গ আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মঙ্গলবার সকালে যুবদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিকে নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে লড়বে বিএনপি। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই পতন হবে সরকারের। ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে চড়া মূল্যে জ্বালানি কেনার সমালোচনাও করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে বিদ্যুৎ নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি নিয়ে আজ দেশি-বিদেশি সব বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি অপ্রয়োজনীয় ও অসম চুক্তি। যেখানে বাংলাদেশ শুধু পয়সা দিয়ে যাবে। কোনো লাভ পাবে না।
তিনি বলেন, সরকার এ ধরনের চুক্তি মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ লুটপাট করে যাচ্ছে। মোটকথা, এ সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই তারা লাগামহীন দুর্নীতি করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা পরিপূর্ণভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
নানা অভিযোগের মধ্যে আরও ৯৪৭ বাসে ই-টিকেটিং চালুর ঘোষণা-প্রথম আলো
রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে আরও ৯৪৭টি বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার থেকে তা কার্যকর হবে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। রাজধানীতে তৃতীয় পর্বে বাসে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালুর বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আগে চালু হওয়া ই-টিকেটিং ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এখনো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এনায়েত উল্যাহ বলেন, তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। যাত্রীরাও যেন টিকিট ছাড়া ভাড়া না দেন।
এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
ভারতই দেখাল পথ? ৩০দিনের মধ্যে সরকারি ডিভাইস থেকে Tiktok মোছার নির্দেশ আমেরিকার-সংবাদ প্রতিদিন
চিনা অ্যাপ টিকটক নিয়ে ভারতের অবস্থান নিতে চলেছে আমেরিকা । মাত্র ৩০ দিনের মধ্যেই সমস্ত সরকারি ডিভাইস থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে টিকটক, এমনই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের সরকারি কর্মীদের জন্য টিকটক নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে একাধিক দেশ টিকটক নিষিদ্ধ করেছে। সোমবারেই নতুন করে এই চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে কানাডা সরকার। ভারত-সহ একাধিক দেশের তরফেই অভিযোগ, টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে ইউজারদের সমস্ত তথ্য পাচার করছে চিন। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে চিনা টেক সংস্থাটি।
২০২০ সালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল চিনা সংস্থাটি। পরে আদালতের সিদ্ধান্তে সেই দেশে নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি টিকটক। এবার আইন করে টিকটক বন্ধের পথে হাঁটছে আমেরিকা।
‘কার ছত্রছায়ায় দেশকে লুটছেন আদানি?’ ‘ছাতা ধরা’ প্রসঙ্গে মোদির কটাক্ষের পালটা জবাব খাড়গের-সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, কার ছত্রছায়ায় দেশকে লুটছেন আদানি? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষের পালটা জবাব দিয়ে এই প্রশ্নই তুললেন মল্লিকার্জুন খাড়গে । কংগ্রেস সভাপতির মতে, দেশ থেকে কোম্পানি রাজ দূর করতে তেরঙ্গার ছায়ায় দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিল কংগ্রেস। ভারতে যেন কোনও কোম্পানি আধিপত্য বসাতে না পারে, তার জন্যও প্রাণপণে লড়াই করবে তাঁর দল। প্রসঙ্গত, কর্ণাটকে একটি জনসভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষীয়ান নেতা হলেও তাঁর মাথায় ছাতা ধরা হয় না। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা ছায়া পান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “কর্ণাটকের ভূমিপুত্র মল্লিকার্জুন খাড়গেজির প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করা সত্ত্বেও তাঁকে সম্মান দেয়নি দল। ছত্তিশগড়ের সম্মেলনে তাঁর মাথায় ছাতা ধরা হয়নি। অথচ তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে অন্য ব্যক্তির ভাগ্যে ছাতার ছায়া জুটেছিল।” এই ঘটনার একদিন পরেই পালটা দিয়ে মুখ খুললেন কংগ্রেস সভাপতি।
টুইট করে খাড়গে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, কার ছত্রছায়ায় থেকে আপনার পরম বন্ধু দেশের আকাশ-পাতাল সব লুট করে নিচ্ছে? আমরা তো তেরঙ্গার ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কংগ্রেসি, যারা কোম্পানি রাজের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা এনেছিল। দেশকে আবার কোম্পানি শাসনের অধীনে যেতে দেব না।”
আদানি ইস্যুতে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মানলেও এখনও কমিটি গঠন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।”মোদিজি একটা কথা বলুন, আদানি ইস্যুতে যৌথ কমিটি কবে গঠন করবেন? প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন কংগ্রেস সভাপতি। তবে এই প্রসঙ্গে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি কেন্দ্রের তরফে।
রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগ সমস্যার আপাতত জট খুলল-আনন্দবাজার পত্রিকা
অবশেষে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার জট খুলল। মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনে বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই নিয়োগ জটিলতা কাটানো হল ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের কার্যকালের মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করিয়ে। এই সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করা হবে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৮