খোদাসচেতন ব্যক্তি সঠিক পথ চিনেতে দ্বিধান্বিত হন না
রমজান: খোদাপ্রেমের অনন্য উৎসব (পর্ব- ৪)
রমজানের রোজা রাখার উদ্দেশ্য হল তাকওয়া বা খোদাভীতি তথা খোদা-সচেতনতা অর্জন। মহান আল্লাহ এ জন্যই রোজা ফরজ করেছেন মুমিনদের জন্য। একই কারণে রোজা রাখা অতীত যুগের তথা ইসলাম-পূর্ব যুগে নবী-রাসুলদের অনুসারী বা উম্মতের জন্যও ফরজ করা হয়েছিল বলে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
আর যারা খোদাভীরু বা মুত্তাকি তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক পুরস্কার রয়েছে। যেমন, তারা পরকালে বেহেশত পাবেন তথা পরকালীন সুখ ও সমৃদ্ধি কেবল তাদের জন্যই নির্ধারিত বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। আর যারা খোদাভীরু নন তাদের পরিণতি হবে দোযখ বা নরক।
কথা হল নগদ পুরস্কার কি রয়েছে খোদাভীরুদের জন্য? পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতের শেষাংশে মহান আল্লাহ বলছেন:
আল্লাহকে ভয় কর,তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন আল্লাহ সব কিছু জানেন।- অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করলে তিনি তোমাদের শিক্ষক হয়ে যাবেন। আর মহান আল্লাহ হচ্ছেন এমন একজন শিক্ষক যিনি সব কিছু জানেন। সব শিক্ষকের বড় শিক্ষক এবং সব শিক্ষকদের শিক্ষক হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কখনও কখনও মানুষের মধ্যে আত্মিক অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন। ফলে মানুষ সাধারণত যা ইচ্ছা করে তার বিপরীত পদক্ষেপ নিয়ে বসে। যেমন, আপনি গাড়ি চালিয়ে একটি বিশেষ পথে গন্তব্যের দিকে সাধারণত রওনা হন, কিন্তু কোনো একদিন ভিন্ন পথে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হলেন। মহান আল্লাহই আপনার মনের মধ্যে পরিবর্তন এনে ভিন্ন পথে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। এখানে আপনার নিজের কোনো পূর্ব-নির্ধারিত ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত ছিল না। আবার কখনও মহান আল্লাহ আপনার জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
হযরত ইমাম বাকির -আ থেকে বর্ণিত, কেউ যদি যা জানে তার আলোকে কাজ করে তাহলে আল্লাহ তাকে এমন কিছু শেখাবেন যা সে জানে না। আমরা অনেকেই জানি বা শুনেছি যে বাবা মায়ের অবাধ্য হয় তার হায়াত ও রিজিক কমে যায়। আর এটা জানার পরও কি আমরা বাবা মায়ের কোনো নির্দেশ কি অগ্রাহ্য করতে পারি? আমরা জানি যে তাহাজ্জতের নামাজ মহান আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয় এবং চেহারাকে নুরানি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কি আমরা এই নামাজ ত্যাগ করে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি? এভাবে আমরা যদি খোদাভীরু হওয়ার চেষ্টা করি বা সাধনা করি তাহলে মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের উন্নতির পথ ও সুপথ লাভের পথ দেখিয়ে দিবেন।
আসলে মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার কোনো ম্যাজিক পিল বা সূত্র নেই। মহান আলেমদের কাছে গিয়ে আপনি যদি বলেন যে আমাকে এমন কিছু শেখান যাতে আমি আল্লাহর ওলি হয়ে যাই বা পবিত্র কুরআন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার মুখস্থ হয়ে যায় তারা বলবেন, আগে যা কিছু জানো তা আমল কর।
সুরা তালাকের প্রথম আয়াতের শেষাংশে ও দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। -
অন্য কথায় যারা আল্লাহকে ভয় করেন বিপদে ও দুর্যোগে বা সংকটের সময় আল্লাহ তাদের জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। খোদাভীরু বা খোদা-সচেতন ব্যক্তিরা বিপদ-আপদ ও সংকটকে অভ্যর্থনা জানান বা সেসবকে আল্লাহর দান বলে জড়িয়ে ধরেন। কারণ তারা জানেন যে এইসব পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসছে এবং আল্লাহ নিজেই এইসব বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু আমাকে ভরসা করতে হবে আল্লাহরই ওপর এবং খোদাভিরুতার পথে অবিচল থাকতে হবে। আর্থিক সংকট দেখা দিল বলে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন শুরু করে দেন না খোদাসচেতন ব্যক্তি। খোদাসচেতন ব্যক্তির জন্য সব সময়ই গাইড হন মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে, যে আল্লাহভীরু হয় আল্লাহ তার কাজকর্ম ও বিষয়-আশয় সহজ করে দেন।
-অন্য কথায় মুমিন ও খোদাভীরু তথা খোদা-সচেতন ব্যক্তির জন্য বিপদ-আপদ কঠিনই হয়ে থাকে। কিন্তু খোদাভীরু বলেই তার জন্য বিপদগুলো সহজ হয়ে যায়। আর খোদাভীরু না হলে তার জন্য বিপদগুলো অসহনীয় বলে মনে হয়।
মুমিন ও বিশ্বাসী ব্যক্তিকে আল্লাহ বেশি কষ্ট দেন ও বেশি বিপদ-আপদে ফেলেন তার ধৈর্য ও খোদাভীতির মাত্রা পরীক্ষা করার জন্যই। যে যত বেশি উচ্চ মাত্রার মুমিন হবে তার জন্য পরীক্ষাও তত কঠিন হতে থাকবে। অন্য অনেক মানুষ বা সাধারণ মানুষ মুমিন ও খোদাভীরু ব্যক্তির ধৈর্য দেখে বিস্মিত হয়। তারা বলেন, এমন সব বিপদ আসলে তো আমি কবেই শেষ হয়ে যেতাম। কুরআনে বলা হয়েছে : নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
খোদা-সচেতনদের জন্য আরেকটি পুরস্কার হল আল্লাহ তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। এবং তাদেরকে বড় রকমের তথা অকল্পনীয় মাত্রায় বা সীমাহীন মাত্রায় পুরস্কার দেন।
পবিত্র কুরআনের সুর আনফালের ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের ফুরকান দান করবেন তথা তোমাদেরকে ভালো ও মন্দ বা সঠিক আর ভুল বা মিথ্যা পথ চিহ্নিত করার ক্ষমতা দেবেন। এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান।
তাই খোদাভীরু বা খোদাসচেতন ব্যক্তিকে সঠিক পথ চিনে নিতে দ্বিধান্বিতও হতে হয় না। কোনটা হালাল ও কোনটি হারাম তা বোঝার ব্যবস্থাও আল্লাহও করে দিবেন। ফলে কালোকে তিনি কালোই দেখবেন ধুসর দেখবেন না।
রমজান হল খোদা-সচেতনতা অর্জনের মাস ও বেশি বেশি করে তওবা করার মাস। এ মাসে যদি আত্মশুদ্ধি অর্জন সম্ভব না হয় তবে কখন তা সম্ভব হবে? এই মাসে যদি আল্লাহর ক্ষমা না পাওয়া যায় তবে তা কখনও পাওয়া যাবে না।
আসলে আমরা সবাই জানি যে আমাদের কি কি ত্রুটি রয়েছে। আমি কৃপণ কিনা তা আমি জানি, হিংসুক কিনা তা আমি জানি। তাই এসবের চিকিৎসা করতে হবে। আর রমজানই হল এসবের চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো মাস। মহান আল্লাহ আমাদের সবক্ষেত্রেই সুপথ দান করুন। আমিন এবারে শোনা যাক অর্থসহ চতুর্থ রমজানের দোয়া:

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।