মার্চ ২৬, ২০২৩ ২০:১২ Asia/Dhaka

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানীর একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ২০ জন মারা গেছেন। সে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ফায়ার –সেফটি বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ ধরনের বিস্ফোরণ হতে গেলে দুটি ঘটনাই ঘটতে পারে। একটি হচ্ছে গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে হতে পারে। আবার সলিড এক্সপ্লোসিভ থেকেও হতে পারে।

তিনি বলেন, কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। আর এসব তদন্ত কমিটির জন্য খুব বেশি সময় দেয়া হয়না। বলা হয় যে ৭ দিনের মধ্যে আপনারা রিপোর্ট দেবেন। তারা জাস্ট জায়গাটা ভিজিট করেন এবং তাদের মতো একটা রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেন। কিন্তু দুর্ঘটনার তদন্ত এভাবে হয় না। তাছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকারের সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে।

রেডিও তেহরান: জনাব ইয়াসির আরাফাত,  রাজধানী ঢাকার সিদ্দিকবাজারে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। কিন্তু এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যাচ্ছে না কেন এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, এ নিয়ে এক রকমের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। কেন এই ধোঁয়াশা? কী বলবেন আপনি?

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: দেখুন, এটা নিয়ে তো বিভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা তদন্ত করে কি কারণে হয়েছে সেটি নির্ণয় করবে। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে আমাদের অবজার্ভেশন হচ্ছে- বিশেষ রাজধানীর মগবাজারে এবং সাইন্স ল্যাবরেটরিতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং সর্ব সম্প্রতি সিদ্দিকবাজারে যেটি ঘটল এই সবগুলোর প্রকৃতি এবং ধরণ একইরকম। প্রতিটি জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছে। আর যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে- দেখা যাচ্ছে একটি রুমের চারদিকের দেয়ালগুলো ভেঙে  পড়ছে। বিশেষ করে একটি রুমের মধ্যে যদি জমা অবস্থায় দাহ্য গ্যাস থাকে সেটি বাতাসের সাথে ফ্লেমেবল মিক্সার তৈরি করে। সেটি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকতে হয়। তা না হলে কিন্তু বিস্ফোরণ হয় না। যদি এরকম বদ্ধ জায়গায় গ্যাস জমা হলে খুব সামান্য এনার্জি পেলেই এ ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে। এই যেসব বিস্ফোরণ হচ্ছে-আমাদের ধারণা যে বদ্ধ জায়গায় গ্যাস জমা হওয়ার কারণে বিস্ফোরণটা ঘটছে।

রেডিও তেহরান: আপনি গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের আশঙ্কার কথা বললেন। এখানে কী ধরনের গ্যাস, কোথা থেকে জমতে পারে যার কারণে এত বড় বিস্ফোরণ ঘটবে?

গুলিস্তানে বিস্ফোরণ

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: দেখুন, দাহ্য গ্যাসের কথাই বলছি। আর দাহ্য গ্যাস দু ধরনের হতে পারে। একটি হচ্ছে এলপিজি। যেটি প্রোপেন এবং বিউটেন অপরটি আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস-যেটি হচ্ছে মিথেন। আমাদের ঢাকা শহরের তলদেশ দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিভিন্ন ধরনের পাইপ লাইন গেছে। এসব পাইপ লাইন অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে, ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে এসব লাইনে লিকেজ হয়ে এটি স্যুয়ারেজ লাইনেও চলে যেতে পারে। এটা বাসা বাড়িতে এসেও জমা হতে পারে। যেহেতু মিথেন গ্যাসটা খুবই হালকা বাতাসের থেকে। ফলে এটি উপরের দিকে আসার চেষ্টা করে। ফলে দেখা যায় এই গ্যাসটা এসে জমা হতে পারে। তবে সব জায়গায় জমা হয় তেমনটি নয়। আমরা অনেক সময় দেখতে পাই বৃষ্টির সময় অনেক জায়গা থেকে বুদবুদ করে বাতাস বের হচ্ছে। তবে সবজায়গায় জমা হয় না। অর্থাৎ বলতে চাইছি আগুন ধরার মতো কনসেনট্রেশনে এই গ্যাসটা জমা হতে পারে না। কিন্তু বদ্ধ জায়গায় যদি কোথাও জমা হয় তখনই সমস্যাটা হতে পারে।

রেডিও তেহরান: বিস্ফোরণ নিয়ে এরইমধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতায় রাজধানী বিস্ফোরণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি এসব নাশকতা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপনার কী মনে হয় এসব বক্তব্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করবে?

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: দেখুন, এ ধরনের বিস্ফোরণ হতে গেলে দুটি ঘটনাই ঘটতে পারে। একটি হচ্ছে গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে হতে পারে। আবার সলিড এক্সপ্লোসিভ থেকেও হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা যখনই ঘটছে তখনই আমাদের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও কর্মকর্তারা যাচ্ছেন, র‍্যাব যাচ্ছেন- তারা কিন্তু ইনসপেক্ট করছে। যদি সলিড কোনো এক্সপ্লোসিভ থাকে তাহলে তো তারা শনাক্ত করতে পারেনই। তখন সেইভাবে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন। যেসব দুর্ঘটনার কথা বললাম-সেখানে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট থেকে বলা হয়েছে এখানে এক্সপ্লোসিভ তেমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আর তখনই গ্যাসের বিষয়টি আসছে যে তাহলে কনফাইন্ড স্টেজে গ্যাস জমে থাকার কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রেডিও তেহরান: ধরে নেয়া যায়- এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হবে এবং রিপোর্টও দেবে তারা। অতীতে অনেক তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি বেশিরভাগই। এই যে রিপোর্টগুলো আলোর মুখ দেখে না- এর কারণ কী?

গুলিস্তানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: দেখুন এটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি যে কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। আর এসব তদন্ত কমিটির জন্য খুব বেশি সময় দেয়া হয়না। বলা হয় যে ৭ দিনের মধ্যে আপনারা রিপোর্ট দেবেন। তারা জাস্ট জায়গাটা ভিজিট করেন এবং তাদের মতো একটা রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেন। কিন্তু দুর্ঘটনার তদন্ত এভাবে হয় না। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় অনেক সময় দুর্ঘটনার তদন্ত লম্বা সময় ধরে হয়ে থাকে। আমেরিকাতে রাসায়নিক তদন্তের একটি কমিটি আছে তারা অনেক সময় দুবছর পরও রিপোর্ট দেন।তাদের এক্সপার্ট টিম থাকে এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন। তারা যেটা দেখার চেষ্টা করেন সেটি হচ্ছে কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং কি কি ব্যত্যয় হয়েছে। তাছাড়া কোন কোন এজেন্সির কোন কোন জায়গায় সমস্যা আছে সেটি তুলে ধরেন। তারমানে হচ্ছে রুট কজ কিংবা আন্ডারলাইন যে কজের কথা আমরা বলি আমাদের দেশে সেই জায়গাটা আসলে সেভাবে বের হয় না। আমরা শুধু কেন হয়েছে সেটা নিয়ে কাজ করি। কারণটা কি সেটা নিয়ে কথাবার্তা বলা হয়। ইমিডিয়েট কারণটা কি সেটা নিয়েই কথা বলা হয়। কিন্তু মূল ঘটনা কি, পেছনে কি কি কারণ ছিল, কারা সেজন্য দায়ী এসব নানা বিষয় দেখতে হলে অনেক গভীরে যেতে হয় সেটি আমরা যেতে পারি না। তাছাড়া এসব রিপোর্ট হয়তো আসে কোথাও জমা হয় আমরা কিন্তু সেটা জানতে পারিনা।

রেডিও তেহরান: রাজনৈতিক কারণেও কী তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না? এমন একটা ধারণা কিন্তু সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে।

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: দেখুন, আমাদের যে ইন্ডস্ট্রিয়াল যে গ্রোথ হচ্ছে এবং আমাদের লাইফ স্টাইলের যে পরিবর্তনটা এসেছে সেটার সাথে তাল মিলিযে যে শিল্পায়ন হচ্ছে তার জন্য কিন্তু বিভন্ন ধরনের কেমিক্যাল আমদানি করা হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করে যাতে এই গ্রোথটাতে কোনো হাম্পার না হয়। পাশপাশি চাহিদার সাথে যে ঝুঁকিটা তৈরি হয়েছে সেটি কীভাবে কমানো যায় সেই জায়গায় আসলে সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে সরকারি পর্যায়ের। আর যদি সদিচ্ছাটা ঠিকঠাকভাবে থাকত তাহলে আমাদের যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে এই জায়গাগুলোতে করণীয়টা কিন্তু আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু এধরনের দুর্ঘটনা যাতে কমতে পারে সেধরনের কোনো উদ্যোগ কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

তো অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত ঢাকার ভয়াবহ বিস্ফোরণ নিয়ে আলাপন অনুষ্ঠানে আমাদের সময় দেয়ার জন্য আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত: আপনাকেও ধন্যবাদ। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৬

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।