মার্চ ২৮, ২০২৩ ১৯:৩০ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন। মহান আল্লাহর সত্ত্বাকে বোঝা অসম্ভব তবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো তাঁর মহত্ত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা বা পরিচিতি তুলে ধরে।

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম বাক্বি«باقی । বাক্বি শব্দের অর্থ ধ্বংসশীলের বিপরীত তথা চিরস্থায়ী বা অবিনশ্বর, অমর ইত্যাদি। মহান আল্লাহ অনাদি, অব্যয়, অক্ষয় ও অসীম। তিনি এমন এক সত্ত্বা যার শুরু ও শেষ বলে কিছু নেই। অস্তিত্বহীনতা ও ধ্বংসশীলতা মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত। কোনো একটি সময় সৃষ্টিকুলের কিছুই ছিল না বলে যদি ধরে নেয়া হয় তখনও মহান আল্লাহ ছিলেন এবং সৃষ্টিকুলের সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও মহান আল্লাহ থাকবেন অক্ষয় অস্তিত্ব নিয়ে। মহান আল্লাহ নিজে বাক্বি বলে তিনি অন্য অস্তিত্বদেরও অমরত্ব ও অসীমত্ব দান করতে পারেন। অন্য কথায় যে কোনো সৃষ্টির অব্যাহত অস্তিত্ব মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল।পবিত্র কুরআনের সুরা ত্বাহার ৭৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন: আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও অন্যদের চেয়ে বেশি স্থায়ী। সুরা শুরা'র ৩৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা-ই উত্তম বা শ্রেয় ও চিরস্থায়ী।

মহান আল্লাহর চিরস্থায়িত্ব কোনো শর্তাধীন বিষয় নয় বা কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়। মহান আল্লাহর সত্ত্বার ক্ষয় বা ধ্বংসশীলতা একটি অকল্পনীয় বিষয়। সুরা আররাহমানের ২৬ থেকে ৯৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। … একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা বা সত্তাই টিকে থাকবে। অতএব, তোমরা উভয়ে অর্থাৎ জিন ও মানুষ তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন‌্ অবদানকে অস্বীকার করবে?-অন্য কথায় আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুই ধ্বংসশীল। সৃষ্টিকুলের এই ধ্বংসশীলতাও মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। কারণ মৃত্যু বা ধ্বংস হওয়া ছাড়া কোনো কিছুই আল্লাহর দিকে যেতে পারে না পার্থিব জগত ছেড়ে। এ ছাড়াও উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহর চেহারা বা মুখ বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা মহান আল্লাহরই নানা নাম বলে মত প্রকাশ করেছেন আল্লামা তাবাতাবায়ি (র.)। মহান আল্লাহকে চিনতে বা বুঝতে হলে তাঁর নানা নামের দিকেই লক্ষ্য করতে হবে সৃষ্টিকে। এইসব নামই হল মহান আল্লাহর মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যম।

মহান আল্লাহ সুরা নাহ্‌ল্‌-এর ৯৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, তোমাদের কাছে যা আছে সেসবই নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে সেসব কখনও শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।-অবিনশ্বর মহান আল্লাহয় বিশ্বাসী মানুষ তথা মুমিনরা মনে করেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই উপাসনার যোগ্য নন।  যারা প্রভুত্বের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী তারা কখনও মানুষের কোনো ক্ষতিও করতে পারে না এবং কোনো উপকারও করতে পারে না। হযরত ইব্রাহিম আ. অস্তগামী সূর্যকে লক্ষ্য করে বলেছেন, আমি অস্ত যায় এমন কিছুকে পছন্দ করি না এবং ধ্বংসশীল ও ক্ষয়িষ্ণু কোনো কিছুর ইবাদাত বা প্রশংসা করব না।   

মানুষের কোনো কোনো সৎকাজের প্রতিফল স্থায়ী হয়। বেহেশতও স্থায়ী পুরস্কার। সুরা কাহাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য মাত্র এবং স্থায়ী হল সৎকর্মগুলো, সেসব আপনার পালনকর্তার কাছে উত্তম পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত, প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে সেসবই উত্তম। -সন্তান-সন্ততি ও সম্পদকে মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করা হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য, ফলে অনেকেই এই আকর্ষণের বৃত্তকে ঘিরেই জীবনের সব তৎপরতা চালিয়ে থাকে। কিন্তু এইসব ক্ষণস্থায়ী সুখ ও সম্পদ মাত্র। প্রত্যাশিত স্থায়ী আনন্দ ও সুখ এসবের মধ্যে নেই। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকলে সেই কাজের পুরস্কার মহান আল্লাহর কাছে থাকে সুরক্ষিত অবস্থায় ও তা চিরকাল টিকে থাকবে ।

সুরা মারিয়াম-এর ৭৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:যারা সৎপথে চলে আল্লাহ তাদের সুপথ-প্রাপ্তি বৃদ্ধি করেন এবং স্থায়ী সৎকর্মগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে সাওয়াবের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ও প্রতিদান হিসেবেও শ্রেষ্ঠ।
 

 

সব সুন্দর নামই মহান আল্লাহর

 

-এই পার্থিব জীবনের নানা সম্পদ ও আনন্দগুলো সীমিত, ক্ষয়িষ্ণু ও ক্ষণস্থায়ী। তাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হল প্রিয় কাজগুলোকে চিরস্থায়ী করা। মানুষের জন্য সম্ভবত সর্বোত্তম কাজ হল যত বেশি সম্ভব আল্লাহর পথে কুরবানি করা। আর এভাবে পূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জন সম্ভব। কারণ যা আল্লাহর পথে ব্যয় করা হয় তা আল্লাহর কাছে থাকার অর্থ বরকতময় ও প্রবর্ধমান। তাই প্রতিটি সৎকাজের প্রতিদান ক্রমেই বাড়তেই থাকে। অবশ্য কেবল দান-খয়রাত ও কুরবানির মাধ্যমেই যে অস্থায়ী কোনো কিছুকে স্থায়ী করা যায় তা নয় মানুষের মনপ্রাণ যখন আল্লাহর পথে নিবেদিত ও মানুষ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর পেছনে না ছোটার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে তখন তার সব কিছুই স্থায়িত্ব লাভ করে। 

মহান আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহর 'বাকি' নাম সম্পর্কে সচেতন তারা সব সময় মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন এবং তাদের ইবাদাত চিরস্থায়ী হয়। তারা জীবনের সব কিছুই আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেন। তারা জানেন যে মহান আল্লাহ তাদেরকে স্থায়িত্ব লাভের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তারা সব কিছুকে যেন আল্লাহর দৃষ্টি দিয়েই দেখেন ও আল্লাহর কান দিয়েই শোনেন এবং আল্লাহর ভাষাতেই কথা বলেন। মোট কথা তাদের সব কিছুই খোদায়ি রং ধারণ করে। #

পার্সটুডে/ এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ