মার্চ ২৯, ২০২৩ ১৪:১৮ Asia/Dhaka

মানুষের শরীর যেকোনও অলৌকিকতার চেয়ে কম নয়। আমাদের শরীর অবিশ্বাস্য এবং জটিল সিস্টেম দ্বারা গঠিত, এর অবিশ্বাস্য সব কাজ চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদেরকেও বিভ্রান্ত করতে পারে। এইরকম একটি সিস্টেম হল মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্র। কোটি কোটি স্নায়ু কোষ এবং নিউরোনের সাহায্যে আমাদের দেহ আমাদের প্রতিদিনের স্বেচ্ছামূলক এবং অনিচ্ছাকৃত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে সহায়তা করে।

তবে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যা হয় তবে একজন ব্যক্তির হাঁটা চলা, কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে হান্টিংটন রোগ, মাইগ্রেনস, ডিজেনারেটিভ ডিজিজ, মৃগী, মস্তিষ্কের টিউমার এবং মেনিনজাইটিস সহ ৬০০ টিরও বেশি স্নায়ু সম্বন্ধীয় রোগ রয়েছে।

স্নায়ু রোগ হওয়ার ফলে কেবল রোগীর জীবনই নয়, পাশাপাশি অন্যদের জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ু রোগের লক্ষণগুলি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজ তৃতীয় পর্বে  স্নায়ুরোগের রোগের লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে।  আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমরা স্নায়ুরোগ নিয়ে দুইপর্বে আলোচনা করেছি। আজ তৃতীয় পর্বের আলোচনায় যাব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে আছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমাম। তিনি মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

স্বাস্থ্যকথার আসরটির সাক্ষাৎকার গ্রহণ, উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

তো জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম, তৃতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে স্নায়ুরোগ হয়েছে তা আমরা কি করে বুঝব। অর্থ্যাৎ   লক্ষণগুলো যদি সহজভাবে ক্যাটিগোরিক্যালি বলেন?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: স্নায়ুরোগের সুনির্দিষ্ট কতগুলো লক্ষণ আছে। কমন স্নায়ুরোগের মধ্যে আমরা যেসব রোগী পাই তারমধ্যে রয়েছে- স্ট্রোক। এছাড়া-কোমরে ব্যথা নিয়ে আসেন অনেকে। মাথা ব্যথা। ব্যাক পেইন আবার নেক পেইনও হতে পারে। ফলে ব্যথা স্নায়ুরোগের কমন একটি বিষয়। আবার কিছু কিছু রোগী পাই যাদের কনসাস লেভেলটা কম। স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে সচেতনা বোধ থাকে। কিন্তু কোনো কোনো মানুষ সেই সচেতনতা হারিয়ে ফেলছে। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কখনও কখনও। আমরা যেটাকে বলি আন কনসাসনেস বা কোমা। এটিও স্নায়ুরোগের লক্ষণ। কারণ তার ব্রেন কাজ করছে না।

রেডিও তেহরান: আপনি বলছিলেন কোমাতে যাওয়াও কিন্তু স্নায়ুরোগের লক্ষণ. তো তারপর আর কি কি লক্ষণের কথা বলবেন?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: এছাড়া স্নায়ুরোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে যাওয়া। উদাহারণ হিসেবে আমি বলি- এমন রোগী আসেন দেখা গেল হঠাৎ করে তার দুই পা দুর্বল হয়ে গেছে। গতকাল সে কাজ থেকে ঘরে ফিরেছে হেঁটে। রাতে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উটে দেখে তার পা নামাতে পারছে না। তার হাতের শক্তি ঠিক আছে কিন্তু দুটো পা তার দুর্বল হয়ে গেছে। এই যে হঠাৎ করে দুটো পা দুর্বল হয়ে গেল এটি স্নায়ুরোগের লক্ষণ। আর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখতে পাই- শরীরের একদিকের হাত পা দুর্বল হয়ে গেছে। সেটা ডান দিকের কিংবা বা দিকের যেকোনো একদিকের হাত এবং পা দুর্বল হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে সে হাতে কলমটা ঠিকমতো ধরতে পারছে না। এটিও কিন্তু স্নায়ুরোগ। শরীরের একটা নির্দিষ্ট অংশ দুর্বল হয়ে যাওয়াটা স্নায়ুরোগের লক্ষণ। অথবা এমন দেখা যায়-গতরাতে রোগীর খাবার খেতে কোনো অসুবিধা হচ্ছিলো না হঠাৎ করে  সকাল থেকে দেখছেন যে খাবার গিলতে তার সমস্যা হচ্ছে। তার কষ্ট হচ্ছে অথবা নাক দিয়ে উঠে আসছে। ধরুন তিনি পানি খেতে যাচ্ছেন কিন্তু সেই পানি নাক দিয়ে উঠে আসছে। এই যে হঠাৎ করে শরীরের একটা নির্দিষ্ট অংশের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া কিন্তু স্নায়ুরোগের লক্ষণ।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা স্নায়ুরোগের লক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহ দিদার ইমামের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম স্নায়ুরোগ বিষয়ক আলোচনায়। ডা. শাহ দিদার ইমাম। আপনি স্নায়ুরোগের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তো আর কি লক্ষণ থাকতে পারে?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: দেখুন স্নায়রোগের আরও কিছু লক্ষণ আছে যেমন খিচুনি বা এপিলেপ্সি। যাকে আমরা মৃগীরোগ বলে থাকি।  অবশ্য অনেক সময় খিচুনি ছাড়াও মৃগীরোগ হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে। হা পা পায়ের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশে ঝিমঝিম করে ওঠে। কিছু সময় ধরে ঝিম ঝিম ভাবটা থাকে অথবা একটা পেইন থাকে। তারপর আবার ঠিক হয়ে যায়। এটাও কিন্তু স্নায়ুরোগের লক্ষণের মধ্যে পড়ে। রোগী হঠাৎ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পাচ্ছে। এই যে হঠাৎ করে ল্যাক অব কনসাসনেস হয়ে যাচ্ছে এটি  কিন্তু স্নায়ুরোগের লক্ষণ। এছাড়া হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে ব্রেনের রক্ত চলাচাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্রেন কাজ করছে না এবং রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। অথবা হঠাৎ করে শরীরের কিছু অংশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। স্নায়ুরোগের লক্ষণ হিসেবে আরও আমরা উদাহরণ দিতে পারি। যেমন হঠাৎ করে চোখে ঠিকমতো দেখতে না পাওয়া। হঠাৎ করে ঘ্রাণ পাচ্ছেন না। এমনটিও হতে পারে।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক শাহ দিদার ইমাম, হঠাৎ করে দেখা গেল কারও কথাটা স্পষ্ট হচ্ছে না। কিছুটা জড়িয়ে কথা বলছে-এটা কি স্নায়ুরোগের লক্ষণ হিসেবে ধরা হবে?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন, হঠাৎ করে দেখা গেল একজন মানুষের কথাটা স্পষ্ট হচ্ছে না। কথা বলতে গেলে কেমন জানি জড়িয়ে যাচ্ছে। তার কথাটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আবার এমনও হতে পারে- তাকে কোনো একটি প্রশ্ন করা হলো। কিন্তু সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি অন্য একটা উত্তর দিচ্ছেন। ডিস অরিয়েন্টেড হয়ে যাচ্চে তার উত্তরটা।

হাঁটা চলাফেরার বিষয়ে আগেও বলেছি তারপরও বলছি- হাঁটতে গিয়ে কেউ হাঁটতে পারছেন না। পা টলে পড়ে যাচ্ছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। হয়তো বা কাত হয়ে পড়ে গেলেন। হাঁটা চলা দেখে মনে হতে পারে অস্বাভাবিক একটা ভাব। এ ধরনের লক্ষণগুলোও স্নায়ুরোগের লক্ষণ হতে পারে। তাছাড়া হঠাৎ করে দেখা গেল প্রস্রাব-পায়খান ইনব্যালান্স হয়ে গেছে। আবার এমনও হতে পারে- প্রস্রাবের বেগ আসছে কিন্তু প্রস্রাব হচ্ছে না। আটকে যাচ্ছে। এই ধরনের লক্ষণও কিন্তু স্নায়ুরোগের লক্ষণ। এছাড়া মানসিক ব্যত্যয় ঘটতে পারে। এই ভালো ছিল হঠাৎ করে পাগলের মতো আচরণ করছে। উল্টোপাল্টা কথা বলছে অথবা হঠাৎ রেগে যাচ্ছে। অন্যের উপর চড়াও হচ্ছে। মারতে যাচ্ছে অন্যকে। অথবা হঠাৎ করে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুতে যেন তার আগ্রহ নেই। এটিও স্নায়ুরোগের লক্ষণ হতে পারে।

তো ডা. শাহ দিদার ইমাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর শ্রোতাবন্ধুরা! আগামী সপ্তাহে বয়সভেদে স্নায়ু রোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন এই স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৯

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ