মার্চ ২৯, ২০২৩ ১৮:২০ Asia/Dhaka

রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্যই হল তাক্‌ওয়া অর্জন। তাই খোদা-সচেতনতা তথা তাক্‌ওয়ার অধিকারী বা মুত্তাকি ব্যক্তির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমরা গত কয়েক পর্বে কথা বলেছি।

যেমন, মুত্তাকী আল্লাহ ও পরকালের মত অদৃশ্য বিষয়গুলোকে না দেখেও বিশ্বাস করেন এবং এরই আলোকে কাজকর্ম করেন। নামাজ প্রতিষ্ঠা করাও মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য। তাকওয়ার অধিকারীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে যাকাত, সদকা ও নানা ধরনের দান খায়রাত করা। সুরা বাকারার প্রথম দিকেই আল্লাহ বলেছেন, মুত্তাকী ব্যক্তিরা আল্লাহ তাদের যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে দান করেন। -তাই মুমিন-মুত্তাকী ব্যক্তি কৃপণ হতে পারেন না। কারণ আমাদের যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহর দান। অন্যের দান থেকে ব্যয় করতে তো আমাদের সংকোচ বোধ করা উচিত নয়।

হযরত খাদিজা ও মহানবী (সা) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতসহ  ইসলামের প্রাথমিক যুগের মহান নেতৃবৃন্দের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন যারা তাঁদের সম্পদের সবটুকু ও কেউ কেউ  একাধিকবার নিজ সম্পদের অর্ধেক দান করে দিয়েছেন।  হযরত ইমাম হাসান (আ) ছিলেন এমনই একজন। তিনি তো ভাবেননি: হায়! এতসব সম্পদ দান করে দিলে এরপর কোথা থেকে আর সম্পদ আসবে?! তাঁরা এই ঈমান খুব দৃঢ়ভাবে রাখতেন যে আল্লাহই আবার তাঁদেরকে সম্পদ দান করবেন এবং তাদের কোনো কষ্ট হবে না ভবিষ্যতে!

রমজান মাসে দান খায়রাত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় করা উচিত। কারণ এতে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। 

মহান আল্লাহ যাদেরকে বেশি সম্পদ বা সচ্ছলতা দান করেছেন তাদের জানা উচিত এইসব সম্পদ আল্লাহ কেবল পরীক্ষা হিসেবেই দান করেছেন। তিনি দেখতে চান যে আমরা যারা ধনী বা সচ্ছল তারা দরিদ্রদের ও নিঃস্বদের দান করি কিনা। মহান আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি বলে মনে করেন। তাই বিচার দিবসে তিনি প্রশ্ন করবেন দুনিয়াতে তুমি আমার প্রতিনিধি ছিলে, কিন্তু কেন আমার দেয়া অর্থ ও রিজিক থেকে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তদের সাহায্য করোনি?

আমরা অনেকেই মহান আল্লাহকে দোষারোপ করি যে তিনি কেন অনেক মানুষকে দরিদ্র রেখেছেন? মানুষের ভোগ-বিলাসিতা ও অন্যায়-অবিচার এবং বৈষম্যের কারণেই পৃথিবীতে অনেক মানুষ দরিদ্র ও নিঃস্ব। এ জন্য মহান আল্লাহ দায়ী নন। বিশ্বে যদি সম্পদের সুসম বণ্টন থাকত এবং সবাই যদি যাকাত, খুমস ও ফিতরা ঠিকমত দান করতো তাহলে কেউই দরিদ্রই থাকতো না। যারা অন্যদের প্রতি দয়া দেখান না বিচার দিবসে আল্লাহও তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হবেন না।

তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তির আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা সুরা বাকারার প্রথমদিকেই উল্লেখ করা হয়েছে তা হল মহানবী (সা) ও পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের কাছে নাজিল হওয়া ধর্মগ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং পরকালের প্রতিও পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। সুরা বাকারায় বলা হয়েছে:  এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।

এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে কেবল অতীতের নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস রাখলেই হবে না। যেমন, হযরত মুসা ও হযরত ঈসাকে নবী বলে বিশ্বাস করা এবং তাঁদের ওপর নাজিল হওয়া খোদায়ী প্রত্যাদেশ বা ধর্মগ্রন্থকেও বিশ্বাস করা অবশ্যই ভালো কাজ ও জরুরি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। এসব কিছুই বাতিল ও অর্থহীন হয়ে যাবে যদি কেউ মহানবী (সা)'র  রিসালাত আর তাঁর ওপর নাজিল হওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ওপর বিশ্বাস না রাখে। মহানবীর দেয়া বিধি-বিধানগুলোকেই কোনো প্রশ্ন করা ছাড়াই মান্য করতে হবে। এ ছাড়াও বিচার দিবসের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস তথা ইয়াক্বিন রাখতে হবে।

বিচার দিবসের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস তথা ইয়াক্বিন না থাকলে কেউ মুত্তাকী তথা খোদা-সচেতন হতে পারে না। ইমান বা সাধারণ বিশ্বাসের চেয়েও উচ্চতর পর্যায় হল ইয়াক্বিন। বিশ্বস্ত কোনো এক ব্যক্তি বললেন অমুক নামের নামের বিশেষ এক ধরনের ফল পাওয়া যায় যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এমন। আমরা যদি তা না দেখেও বিশ্বাস করি তা হল ঈমান। কিন্তু যখন তা এনে ও দেখিয়ে বলা হবে: এটি খেয়ে দেখুন!- তখন আপনার তাতে সুনিশ্চিত বিশ্বাস আসবে। বিচার-দিবস ও পরকালকেও ঠিক এইভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।  এর আগে আমরা মুত্তাকীর যতগুলো শর্ত উল্লেখ করেছি সেসবই ছিল সাধারণ বিশ্বাস আনার শর্ত। যেমন, অদৃশ্যে বিশ্বাস, অতীতের ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস- এসব ক্ষেত্রে ঈমানই যথেষ্ট। কিন্তু বিচার-দিবসের ক্ষেত্রে কেবল ঈমানই যথেষ্ট নয়, ইয়াক্বিনও থাকতে হবে। অন্য কথায় এক্ষেত্রে  বিন্দুমাত্র সন্দেহও রাখা যাবে না।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।অর্থাৎ এর আগে উল্লেখিত ওই বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে থাকবে তারা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে সঠিক পথ ও নির্ভুল পথ বা দিক-নির্দেশনা পাবে এবং তাঁরাই হবে প্রকৃত সাফল্য বা সৌভাগ্যের অধিকারী। এখন পবিত্র রমজান মাসে ভেবে দেখা উচিত কুরআনের উল্লেখিত এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মধ্যে আছে কিনা। যাকাত দেয়া বা দান খয়রাতের ব্যাপারে কৃপণতা আমাদের মধ্যে রয়েছে কি? আল্লাহ ও পরকালের মত অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস আমাদের কি যথেষ্ট সুদৃঢ়?  মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুত্তাকী বা খোদা-সচেতন হওয়ার তৌফিক দিন। #

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ