এপ্রিল ০৬, ২০২৩ ১৬:৩১ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম মান্নান। এর অর্থ যিনি দান করেন বা যিনি মোন্‌এম।

আরবি ভাষায় মূল্যবান জিনিষ বা ভারি জিনিষকে বলা হয় মান্‌। আরবি 'মিন্নাত' শব্দটিও এসেছে এই শব্দ থেকে যার অর্থ নেয়ামত দান করা। মহান আল্লাহ অজস্র মূল্যবান  ও বড় নেয়ামত দান করেন বলে তিনি মান্নান। মহান আল্লাহর নেয়ামত এতো বেশি যে তা গণনা করাও সম্ভব নয়। সুরা নাহ্‌ল্‌-এর ১৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামতগুলো গুণতে চাও তা তোমরা গুণে শেষ করতে পারবে না। -

মহান আল্লাহ কেবল বস্তুগত নেয়ামতই দান করেননি। তিনি অনেক আধ্যাত্মিক নেয়ামতও দান করেছেন। এসব নেয়ামতের অন্যতম হল ইমান, রিসালাত, নবুওয়্যত, ইমামত, বিলায়াত ইত্যাদি।  বঞ্চিতদের জমিনে নেতৃত্ব দান করা ও মানুষের মধ্য থেকেই মানুষের জন্য রাসুল পাঠানোকেও মহান আল্লাহ  মুমিনদের জন্য অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী যে মানুষের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে  সুপথ দেখাতে ধর্মগ্রন্থ তথা কুরআন ও হিকমাত বা প্রজ্ঞা শেখান –এসব বিষয়কেও মহান আল্লাহ মুমিনদের জন্য নিজের অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) গোটা মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর রহমত ও মহাঅনুগ্রহ। কিন্তু কেবল মুমিন বা বিশ্বাসীরাই এই অনুগ্রহের গুরুত্ব বোঝেন ও এই অনুগ্রহ থেকে কল্যাণ অর্জন করেন বলে এই অনুগ্রহকে কেবল মুমিনদের জন্য অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ।

Image Caption

 

মানুষের মধ্যে অনেকেই কারো উপকার করে সেই উপকারের কথা তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বিষয়টিকেও আরবিতে মিন্নাত বলে যা মান্নান শব্দেরই পরিবর্তিত রূপ। কিন্তু এ ধরনের স্বভাব খুবই নিকৃষ্ট স্বভাব। অন্যদিকে মহৎ-হৃদয়ের ব্যক্তিরা কারো উপকার করার পর তা উল্লেখ করার কথা মনেও রাখেন না বা সেই উপকারের বিষয়টিই ভুলে যান। মহানবী-সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের উপকার করে সেই উপকারের কথা উল্লেখ করে তাকে খোঁচা দিবে আল্লাহ তার ওই উপকারের সাওয়াব বাতিল করেন ও ওই কাজকে ভালো কাজের তালিকা থেকে বাদ দেন। সুরা বাকারার ২৬৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, মুমিনরা যেন তাদের দানের কথা খোঁচা দিয়ে উল্লেখ করে ও পীড়া দিয়ে সেই দান বা সাদাকা বাতিল বা মূল্যহীন করে না ফেলে।

সুরা বাকারার ২৬২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যারা নিজ ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। -অবশ্য উদ্ধত জালিম, কাফির ও মুশরিকদের অনুগ্রহ করার পর তা উল্লেখ করা ও এর মূল্য আদায় করা মুসলমানদের জন্য সম্মানজনক বলে তা বৈধ।মহান আল্লাহ মানুষকে যেসব অনুগ্রহ করেন ও নেয়ামত দান করেন তার দুটি বৈশিষ্ট্য হল : এসব নেয়ামত অনেক বড় এবং যিনি দান করেছেন তিনি কোনো প্রতিদানের বা কৃতজ্ঞতার আশা করে তা দান করেন না। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে যে  কেন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কখনও কখনও অনুগ্রহ প্রদানের বিষয়টিকে তথা মিন্নাত শব্দটিকে খোঁচা দেয়ার ভাবভঙ্গি নিয়েই করুণা করার অর্থে উল্লেখ করেছেন। যেমন, সুরা হুজরাতের ১৭  নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

' হে রাসুল! তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে বলে মনে করে। আপনি বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ বলে মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য বা করুণা করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।'

সব সুন্দর নাম মূলত মহান আল্লাহরই

 

আসলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নেতিবাচক অর্থবোধক বলে মনে-হওয়া এ ধরনের শব্দের প্রকাশভঙ্গী এক ধরনের সাহিত্য-রীতি ও তা রূপক মাত্র! যেমন, কুরআনের অন্য আয়াতেও তথা সুরা আলে ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও চক্রান্ত তথা কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুত: আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী। -এখানে আল্লাহর চক্রান্ত বলতে কাফেরদের চক্রান্ত বা প্রতারণার জবাবে আল্লাহর শাস্তিকে বোঝানো হয়েছে। কারণ আল্লাহ কখনও প্রতারণা করেন না, বরং কৌশল করেন। শত্রুরা হযরত ঈসা নবীর(আ) বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত করেছিল তা বানচাল করতে মহান আল্লাহ যে কৌশল অবলম্বন করেছেন সেটাই সুন্দর সাহিত্যিক অবয়বে তুলে ধরতে মাকার বা চক্রান্ত শব্দটিই ব্যবহার করেছেন যার প্রকৃত ভাবার্থ হচ্ছে কৌশল। মুমিনদের উদ্দেশে মিন্নাত শব্দটিকে করুণা করার ভঙ্গিতে উল্লেখ করার বিষয়টিও ঠিক একই ধরনের।

সুরা হুজরাতের ১৭  নম্বর আয়াত আবারও লক্ষ্য করুন: ' হে রাসুল! তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে বলে মনে করে। আপনি বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ বলে মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য বা করুণা করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।' –এখানে এটা স্পষ্ট যে আল্লাহ কোনো প্রতিদানের আশা না করেই মানুষকে ইসলাম বা ইমানের দিকে হেদায়াত করেছেন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।