এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১৯:৩৫ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম মুস্তায়ান مُستَعان। এর অর্থ মহান আল্লাহ বান্দাদের সহায় বা সাহায্যকারী। মানুষসহ সব সৃষ্টিই যে কোনো কাজে মহান আল্লাহর সহায়তার মুখাপেক্ষী।

মুমিন ব্যক্তি ছোট-বড় সব কাজেই মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন।  মহান আল্লাহ মানুষকে সম্মান ও ইজ্জত দান করার পাশাপাশি তাদের নানা চাহিদা মেটান ও বেশিরভাগ প্রার্থনাই কবুল করেন। অথচ আল্লাহ মানুষকে সম্মান নাও দিতে পারতেন ও তাদের কোনো চাহিদাও মেটানোর ব্যবস্থা নাও করতে পারতেন। 

মুস্তায়ান শব্দ বা নাম পবিত্র কুরআনে দুই বার এসেছে। আর এই দুই বারই মহান আল্লাহর নাম হিসেবে এসেছে। মহান আল্লাহর অনুমতি বা সাহায্য ছাড়া আসলে কোনো সৃষ্টিই অন্য সৃষ্টিকে সাহায্য করতে পারে না। সুরা আরাফ-এর ১৯৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আর তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাক তারা না তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে, না নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারবে। 


মহান আল্লাহর অমুখাপেক্ষিতাও নিরঙ্কুশ। মহান আল্লাহ নিজেই যদি কোনো বিষয়ে অভাবগ্রস্ত বা সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে তিনি অন্যদের সাহায্য করতে পারতেন না। মহান আল্লাহ সুরা ফাত্বিরে এই একই বাস্তবতা তুলে ধরে বলেছেন: হে মানুষেরা! তোমরা সব ক্ষেত্রেই আল্লাহর মুখাপেক্ষী, মহান আল্লাহই হচ্ছেন অমুখাপেক্ষী, তাঁর সব কাজই পছন্দনীয় ও সুন্দর। (সুরা ফাত্বির-১৫) মহান আল্লাহ গ্বানি ও ক্বাদের তথা সব কিছুর অধিকারী ও সর্বশক্তিমান। সুরা আম্বিয়ার ১১২ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন: তিনি অত্যন্ত দানশীল বা দয়ালু ও মুস্তায়ান। (পয়গাম্বর বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি ন্যায়ানুগ ফয়সালা করে দিন। আমাদের পালনকর্তা তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। -

মহান আল্লাহ দয়ালু ও সর্বশক্তিমান বলেই তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়াটাই সবার জন্য স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ সব চাহিদা পূরণের ও সব প্রার্থনার জবাব দিতে সক্ষম।


হযরত ইউসুফের ভাইরা যখন তাদের বাবা হযরত ইয়াকুবকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ইউসুফের জামায় ভেড়া বা ছাগলের রক্ত মেখে বলল যে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে তখন হযরত ইয়াকুব-আ. মহান আল্লাহকে মুস্তাআন বা সাহায্যকারী-এই নামে স্মরণ করেছিলেন। সুরা ইউসুফের ১৮ নম্বর আয়াতে এসেছে: তোমরা মনগড়া কথা নিয়ে এসেছো। এখন উত্তমভাবে ধৈর্য ধরাই আমার জন্য শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছো সে বিষয়ে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই।" (১২:১৮)

আমরা একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই: সুরা ফাতিহা 

 

 

বলা হয় মহানবী (সা) তাঁর বিশিষ্ট সাহাবি আবু জার গিফারিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, হে আবু জার! তুমি যখন কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আবেদন করার ইচ্ছা কর তখন কেবল আল্লাহর কাছেই চাও। মহান আল্লাহ ভাগ্য বণ্টনের নীতি অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত এ বিধান কার্যকর রেখেছেন যে সব মানুষ একত্র হয়েও যদি তোমার কোনো কল্যাণের ব্যবস্থার চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহ তা তোমার জন্য বরাদ্দ করেননি তাহলে তারা তা করতে পারবে না। আর এরা তোমার ক্ষতি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা চালালেও আল্লাহ যদি তা তার ভাগ্যে লিখে না রাখেন তাহলে তারা তোমার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।  

মুসলমানরা প্রত্যেক নামাজেই সুরা ফাতিহা পড়তে গিয়ে চতুর্থ আয়াতে বলে যে আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি ও , ইয়্‌য়া কানাস্তা'আইন তথা একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই।– এখানে কানাস্তাআইন হচ্ছে মুস্তায়ান শব্দেরই একটি রূপ। সুরা মায়েদার দ্বিতীয় আয়াতে তায়াউন শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ বলেছেন, সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর।– তাই সব মুসলমানের উচিত আল্লাহর অন্যান্য বান্দা ও সৃষ্টিকে সাহায্য করা। 

মনে রাখতে হবে আমরা যখন অন্যের কাছে সাহায্য চাই বা অন্যকে সাহায্য করি –এসবে আসল পৃষ্ঠপোষক হলেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ না চাইলে কারো সাহায্যই কারো কোনো কাজে আসবে না। তাই আমাদের উচিত কেবল মুস্তায়ান আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। 


আমরা যখন কারো ওপর ভরসা করি তখন কোনো অক্ষমতা বা দুর্বলতার কারণেই আমরা তা করি এবং আমাদের এই বিশ্বাস খুবই সুদৃঢ় যে যার ওপর ভরসা করছি তিনি আমাদের ওই অক্ষমতা বা দুর্বলতার ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। আর তাই তার মাধ্যমে আমরা কোনো কিছু করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার মানুষেরা কেউই দুর্বলতার ঊর্ধ্বে নয় ও তাই তাদের ওপর কখনও পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। তাই সর্বোত্তম কাজ হলো চরম ধনী ও সব ক্ষমতার উৎস বা মালিকের ওপর নির্ভর করা তথা মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা।

মহানবী –সা. তাওয়াক্কুল প্রসঙ্গে বলেছেন, তাওয়াক্কুলের অর্থ হল এই বিশ্বাস রাখা যে লাভ-ক্ষতি এবং প্রাচুর্য ও অভাব মানুষের হাতে নেই, তাই মানুষের ওপর ভরসা করা উচিত নয়। কোনো মানুষ যদি এই বিশ্বাস বা জ্ঞানে উপনীত হয় যে সে আল্লাহ ছাড়া আর কারও জন্য কোনো কাজ না করবে না ও আল্লাহ ছাড়া আর কারো ওপর আশাবাদী হবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় পাবে না ও আল্লাহ ছাড়া আর কারো ওপর আশাবাদী হওয়ার মত সুদৃষ্টি রাখবে না- এ অবস্থাই হচ্ছে তাওয়াক্কুল।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ