ঐ ব্যক্তি আসলেই বঞ্চিত যে ক্বদরের রাতেও বঞ্চিতই থেকে যায়: মহানবী (সা)
রমজান: খোদাপ্রেমের অনন্য উৎসব (পর্ব-২৬)
রমজানের ২৬ রোজার দিবাগত রাতকে অনেকেই শবে ক্বদর বলে মনে করেন। - কালের গড্ডালিকা প্রবাহে নিমজ্জিত অধিকাংশ মানুষ আত্মার প্রশান্তির কথা ভুলে গেছে।
যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত খোদাবিমুখ মৃত আত্মাকে জাগিয়ে সত্যিকারের সম্পদ ও সৌভাগ্যের নাগাল পাওয়ার ক্ষীণ আশা অনেক মানুষের মনে মাঝে মাঝে জেগে উঠলেও আত্মার ওপর জমে থাকা দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল মানুষকে আবারও করে আশাহত। কারণ, পাপ-পঙ্কিলতার বিপুল কালিমা দূর করে আত্মাকে খোদাপ্রেমের পরশে সজীব করার জন্য দরকার দীর্ঘ সময়ের একনিষ্ঠ ও একাগ্র সাধনা। কিন্তু সময় তো থেমে নেই। দ্রুত শেষ হয়ে আসছে মানুষের আয়ু। তবে কি মুক্তির কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিল যোজন যোজন দূরেই থেকে যাবে?
না, দয়াময় আল্লাহ কর্মব্যস্ত মানুষের মুক্তির জন্য বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থাও রেখেছেন। প্রতি বছরই একবার আসে সেই বিশেষ সুযোগ। জীবনের এক হাজার মাস বা ত্রিশ হাজার দিবসে খোদাপ্রেমের একনিষ্ঠ ও একাগ্র সাধনায় নিমজ্জিত থেকে যে সৌভাগ্য বা আত্মিক প্রশান্তি অর্জন করা যায় তার চেয়েও বেশি অর্জন করা সম্ভব মাত্র এই এক রাতের সাধনায়। আর এই রাতই হল মহামহিমান্বিত শবে ক্বদরের রাত। ক্ষমা ও প্রশান্তি লাভের কঠিন পরীক্ষা পাশের শর্টকোর্স শেষ করা সম্ভব এই এক রাতেই। তাই এ রাতটি যেন বৃথা না যায়। বিদ্রোহী আত্মার লাগাম টেনে ধরতে হবে এ রাতেই। অতীতের কর্মতৎপরতা পর্যালোচনার ও ভবিষ্যতকে নিয়ে ভাবনার শ্রেষ্ঠ সময় এ রাত। ভাগ্য নির্ধারণের এ রাতে আমরা সবাই মহান আল্লাহর মেহমান। ইহকাল ও পরকালের সমস্ত কল্যাণ এবং সৌভাগ্যের অশেষ ভাণ্ডার আল্লাহ এ রাতে খুলে দিয়েছেন মেহমানদের জন্য। মেহমান কতটুকু সম্পদ নিতে পারবেন তা নির্ভর করছে মেহমানের যোগ্যতা বা ধারণ-ক্ষমতার ওপর। লাইলাতুল ক্বাদর বা মহামহিমান্বিত এ রজনী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের "সুরা ক্বাদর"-এ বলা হয়েছে :
" আমি ক্বোরআন নাযিল করেছি শবে-কদরে। শবে-কদর বা মহামহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে-কদর এক হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। সে রাতে প্রভাত বা ফজরের উদয় পর্যন্ত শান্তি তথা খোদায়ী রহমত ও বরকত অব্যাহত থাকে।"
শবে-কদর এমন এক রাত যে রাতে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় মুমিনদের মজলিসে। তারা সেখানে বিশ্বাসীদের সালাম জানায় ও তাদের প্রার্থনা কবুলের আবেদন জানায় মহান আল্লাহর কাছে। যেসব কারণে পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, এ মাসেই নাজেল হয়েছে মানব জাতির মুক্তির দিশারি মহাগ্রন্থ আলকুরআন এবং এ মাসের মধ্যেই রয়েছে মহামহিমান্বিত রাত বা শবে কদর। এই রাতেই নাজেল হয়েছে পবিত্র কুরআন। তবে রমজান মাসের ঠিক কোন রাতটি কদরের রাত তা গোপন রাখা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য মানুষ যেন রমজানের প্রত্যেক রাতকেই গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভ করে। অবশ্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)'র পবিত্র আহলে বাইতের বর্ণনা অনুযায়ী, রমজানের ১৯, ২১ ও ২৩ এবং মতান্তরে ২৭তম রাতের মধ্যে রয়েছে মহকল্যাণময় ওই রাত। পুরো বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য এ রাতেই নির্ধারিত হয়। তবে মানুষের স্বাধীনতার সাথে এর কোনো সংঘাত নেই। কারণ, মানুষের যোগ্যতা, ঈমান ও খোদাভীতির মাত্রার আলোকে তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহ। অর্থাৎ মানুষই তাঁর ভাগ্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
হযরত জিবরাইল আঃ শবে কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা:)-কে বলেছেন, এ রাতে সবার প্রার্থনা কবুল করা হয় এবং প্রত্যেক তওবাকারী বা অনুতপ্ত ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনা কবুল করা হয়।
কদরের রাতে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়। তাই মানুষ আত্মাকে পবিত্র করে বা আত্মসংশোধনের মাধ্যমে এ রাতে মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের সাহচর্য পেতে পারে। ইতিবাচক মন বা মানসিক যোগ্যতা নিয়ে মহান আল্লাহর সাথেও সংযোগ পেতে পারে মানুষ এই বিশেষ রাতে।
কদরের রাতে চিন্তা-ভাবনার গুরুত্বও অপরিসীম। মন ও আত্মাকে অসচেতনতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা এবং কল্যাণের পথে, উন্নতির পথে ও সচেতনতার পথে পা বাড়ানোর জন্য এই চিন্তাভাবনা জরুরি। আমরা এ রাতে এটা ভাবতে পারি যে, মহান যে উদ্দেশ্যে দয়াময় প্রভু আমাদের সৃষ্টি করেছেন সে জন্য আমরা নিজেকে কতটা প্রস্তুত করেছি? এভাবে কদরের রাত আমাদের জীবনের মোড় ও গতিপথ সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে।
মহানবী ( সা: ) বলেছেন: তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে মাহে রমযান। এ মাস হচ্ছে বরকতময় বা মুবারক .......... এ মাসেই আছে লাইলাতুল ক্বদর ( শব-ই ক্বদর বা মহিমা রজনী)। ঐ ব্যক্তি আসলেই বঞ্চিত ( মাহরূম) যে এই রাতে বঞ্চিতই থেকে যায়। -অর্থাৎ এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী ও ইস্তিগফার করা ও পাপ বিমোচিত হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। মহানবী (সা) আরও বলেছেন: রমযান মাস হচ্ছে সকল মাসের নেতা (সেরা) এবং ক্বদরের রাত (শব-ই ক্বদর) হচ্ছে সকল রাতের নেত্রী।
মহানবী (সা:) বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমান (বিশ্বাস) সরকারে এবং মহান আল্লাহ পাকের কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে রমযান মাসে রোযা রাখবে এবং ইবাদত- বন্দেগী করবে তার অতীতের পাপসমুহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমান সহকারে এবং মহান আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইবাদত- বন্দেগী করবে তার অতীত পাপসমুহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।