এপ্রিল ২১, ২০২৩ ১৮:৫৫ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও একটি নাম নাসির। নাসির শব্দের অর্থ সাহায্যকারী। আর মহান আল্লাহ সর্বোত্তম সহায়তাকারী।

অস্তিত্ব জগতের সব কল্যাণ, দয়া ও অনুগ্রহ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। পবিত্র কুরআনে নাসির শব্দ বা এ শব্দের নানা রূপান্তর মহান আল্লাহর নাম তথা সাহায্যকারী অর্থে এসেছে ৫৪ বার। মহান আল্লাহ সাহায্য করেন অযাচিত ও উদারভাবে। মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে তথা ভ্রুণকোষের পর্যায় থেকে মানুষের ক্রমবিকাশ, জন্ম ও প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার  বিষয়গুলো ভেবে দেখলে দেখা যায় প্রতিটি মুহূর্তে ও প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে মহান আল্লাহর অশেষ সাহায্য সক্রিয় রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে মানুষ ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের দায়িত্ব পায়। আর এভাবে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহর হাত তুলে দিচ্ছেন নবী-রাসুলের হাতে। অন্য কথায় মানুষের ওপর এ সময়ও রয়েছে মহান আল্লাহর ওহি বা ধর্মগ্রন্থের খোদায়ি ছায়া তথা মহান আল্লাহর অপার সাহায্য আর অনুগ্রহের অশেষ ফল্গুধারার পরশ।  

মহান আল্লাহ সর্বোত্তম সহায়তাকারী

 

 মানুষের প্রতি ও সৃষ্টিকুলের প্রতি আল্লাহর সাহায্যের তুলনায় অন্যদের সাহায্যের কোনো তুলনাই হয় না। সব সৃষ্টি ও অস্তিত্বই আল্লাহর সাহায্য পায়। কিন্তু যারা মুমিন তথা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর নির্দেশের অনুগত ও আল্লাহর ধর্মের সাহায্যকারী বলে তাঁদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য বিশেষ ধরনের। পবিত্র কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৫০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেকে সর্বোত্তম সাহায্যকারী বা খাইরুন্নাসিরিন বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে মহান আল্লাহ এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোনো শক্তি সাহায্যকারী হওয়ার দাবি করলেও ধ্বংসশীল ও ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার কারণে তাদের সাহায্য কখনও মহান আল্লাহর সাহায্যের সমতুল্য হবে না। আসলে পার্থিব যে কোনো শক্তির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ সব ক্ষমতার উৎস ও সব অস্তিত্বের স্রস্টা হওয়ায় তাঁর বিষয়টি কখনও এমন নয়। মহান আল্লাহ কাউকে সহায়তার ব্যাপারে কোনো প্রত্যাশা বা শর্তেরও মুখাপেক্ষী নন। এই পার্থিব জীবনে কেউ কাউকে সামান্য বা সীমিত মাত্রায় সহায়তা দিতে সক্ষম হলেও একমাত্র মহান আল্লাহই ইহকাল ও পরকাল এই উভয় জগতেই সহায়তা দিতে সক্ষম বলে তিনিই হলেন খাইরুন নাসিরিন তথা সর্বোত্তম সহায়তাকারী।

ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে?

 

 সুরা মুহাম্মাদের সপ্তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ সুরা আস সফ্-এর ১৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও-


ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যদের সাহায্য করা অত্যন্ত পছন্দনীয় গুণ। তবে কোনো ব্যক্তি যদি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হন তাহলেই তাকে সাহায্য করতে হবে। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহকে সাহায্য করার অর্থ কী? পবিত্র কুরআনেই এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। যেমন, সুরা আস সফ-এর ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও যেমনটি ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলের একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল।

আমাদের শিয়া বা অনুসারীরা হলেন আমাদের হাওয়ারি: ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ)

 

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় নবী-রাসুল ও ঐশী নেতৃবৃন্দকে সাহায্য করা মহান আল্লাহকেই সাহায্য করার সমতুল্য। মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস সাদিক্ব বলেছেন, ঈসা নবীর হাওয়ারিবৃন্দ তথা সাহাবি বা শিষ্যরা ছিলেন তাঁর অনুসারী বা শিয়া। অন্যদিকে আমাদের শিয়া বা অনুসারীরা হলেন আমাদের হাওয়ারি। আমাদের অনুসারী তথা শিয়ারা অনুসরণের ক্ষেত্রে ঈসা নবীর হাওয়ারিদের চেয়েও বেশি দৃঢ়-চিত্ত। আল্লাহর শপথ! ঈসা নবীর শিষ্য বা সাহাবিরা তাঁকে সাহায্য করার দাবি করা সত্ত্বেও ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায়  তারা তাঁকে সাহায্য করেননি এবং তাঁর পাশে থেকে ইহুদিদের সঙ্গে লড়াই করেননি। অন্যদিকে আমাদের অনুসারী তথা শিয়ারা রাসূলের (সা.) প্রাণ ত্যাগের পর থেকেই আমাদের সহায়তা করে এসেছেন, তারা শত্রুদের মোকাবেলায় আমাদের পাশে থেকে লড়াই করেছেন, এই পথে তাদের কেউ কেউ আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, অনেকে অন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন ও কেউ কেউ বহু দূরের দেশে নির্বাসনের শিকার হয়েছেন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী তাদের সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের প্রতি ভালোবাসার অপরাধে আমাদের শিয়া বা অনুসারীদের মাথার ওপর তরবারির আঘাত করা হলেও তারা কখনও আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করবেন না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।