এপ্রিল ৩০, ২০২৩ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআন দর্শনের বই নয়। তবে দর্শনের তিন মৌলিক বিষয়বস্তু তথা মানুষ, সমাজ ও বিশ্ব-জগত সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ এই খোদায়ি মহাগ্রন্থে।

করণীয় নানা  বিষয় এবং বর্জনীয় বিষয়ে উপদেশ দেয়া ছাড়াও পবিত্র কুরআন সৃষ্টির রহস্য ও অস্তিত্ব জগত সম্পর্কে খোদায়ি বিশ্বদৃষ্টি তুলে ধরে যাতে কেউ মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে পারে। পবিত্র কুরআন নারী সম্পর্কেও নানা ভুল ধারণা খণ্ডন করেছে। অনেকেই মনে করেন যে নারীর অস্তিত্ব হচ্ছে পুরুষের অস্তিত্বের ভূমিকা এবং পুরুষদের সৃষ্টির জন্যই নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ধরনের ধারণা নারীর প্রতি বেশ অপমানজনক। ইসলামের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহ মানুষ ছাড়া অন্য সব সৃষ্টিকে যেমন  আকাশ, বাতাস, পশু-পাখি ও বৃক্ষলতা- এসব কিছুই সৃষ্টি করেছেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সব মানুষের কল্যাণের জন্য। কেবল পুরুষের ভোগের জন্য এইসব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে এমন কোনো ধারণার অস্তিত্ব কোনো খাঁটি ইসলামী বর্ণনায় নেই। 

তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের পোশাক বা সাজ-সজ্জা এবং তোমরাও হলে স্ত্রীদের জন্য পোশাক বা সাজ-সজ্জা

 

পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের পোশাক বা সাজ-সজ্জা এবং তোমরাও হলে স্ত্রীদের জন্য পোশাক বা সাজ-সজ্জা। -

পোশাক মানুষের নগ্নতার আচ্ছাদন তথা পোশাক নগ্নতা ও অশালীন অবস্থাকে ঢেকে রাখে। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের জন্য পোশাক। অর্থাৎ তারা একে-অপরের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রেখে তাদের সৌন্দর্যকেই ফুটিয়ে তোলেন। নারী ও পুরুষ সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরে পবিত্র কুরআনের সুরা নিসায় বলা হয়েছে:

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি একই ধরনের উৎস বা বস্তু থেকে তাঁর সঙ্গিনীকেও সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর (যার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে তোমরা সবাইই জান), যখন তোমরা একে অপরের কাছে কিছু চাও তখন আল্লাহর নাম নিবে এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।  

সুরা নিসার প্রথম আয়াত থেকে বোঝা যায় যে আদম (আ)'র বাম পাঁজরের হাড় থেকে বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করার যে কাহিনী অনেকে তুলে ধরেন তা সত্য নয়। বিকৃত হয়ে যাওয়া বাইবেল ও তাওরাত থেকে এ ধরনের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ) তাঁর কোনো এক অনুরাগীর প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, যে আল্লাহ হযরত আদমকে অন্য কোনো মানুষ ছাড়াই সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেন তিনি কি বিবি হাওয়াকে আদমের পাঁজরের বাঁকানো হাড় ছাড়াই সৃষ্টি করতে সক্ষম নন?

সুরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক খোদা-ভীরু বা পরহিযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।

শয়তান আদম ও হাওয়া দু'জনকেই ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়

 


খ্রিস্টানদের বাইবেলে নারীকে 'পাপের উপাদান' বলে অপমান করা হয়েছে। বাইবেলের ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্টে নারীকে 'অনিষ্টকারী সত্ত্বা' ও 'পাপ-প্ররোচককারী সত্ত্বা' হিসেবে এবং এসব বইয়ের ব্যাখ্যাকারী কেউ কেউ নারীকে 'ছোটো শয়তান' বলে উল্লেখ করেছেন!  অতীতের কেউ কেউ বলতেন পুরুষরা যত পাপে জড়িত হয়েছে তাতে ছিল নারীর ভূমিকা এবং নারীর কারণেই পুরুষরা পাপে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মতে শয়তান সরাসরি পুরুষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না, কেবল নারীর মাধ্যমেই শয়তান পুরুষকে ধোঁকা দেয়। - নারী সম্পর্কে এ ধরনের সব অজ্ঞতাপূর্ণ বিশ্বাসই ভিত্তিহীন যাতে নারীকে অপমান করা যায় ও অযৌক্তিকভাবে পুরুষকে নারীর তুলনায় বড় করে দেখানো যায়। পবিত্র কুরআন এ ধরনের কোনো ধারণাকেই বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি দেয়নি বা সত্যায়ন করেনি। 


কেউ কেউ বলেন শয়তান হযরত আদমের স্ত্রী বিবি হাওয়াকে ধোঁকা দেয়ায় আদম (আ) নিষিদ্ধ ফল খেতে বাধ্য হন এবং হযরত আদম বিবি হাওয়ার পিড়াপিড়ির কারণেই ধোঁকার শিকার হয়ে নিষিদ্ধ ফল খান ও এর ফলে দু'জনই বেহেশত হতে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন। অথচ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে শয়তান আদম ও হাওয়া দু'জনকেই ধোঁকা দিতে সক্ষম হয় এবং বেহেশত থেকে বহিষ্কারের জন্য কেবল হাওয়া দায়ী –এমন কোনো কথা কুরআনে বলা হয়নি। সুরা আরাফ-এর ২০ থেকে ২২ নম্বর আয়াতের অংশগুলোতে বলা হয়েছে: অতঃপর শয়তান উভয়কে ধোঁকা দেয়ার জন্য প্ররোচিত করল, .... শয়তান তাদের কাছে কসম খেয়ে বলল: আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।... অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে নিষিদ্ধ ফল খেতে রাজি করে ফেলল।–তাই এটা স্পষ্ট যে কেবল নারীই হল শয়তানের ধোঁকার হাতিয়ার বা মাধ্যম ও নারী হল ছোট্ট শয়তান –ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকে প্রচলিত এমন সব ভুল ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছে পবিত্র কুরআন। 

খ্রিস্টানদের বাইবেলে নারীকে 'পাপের উপাদান' বলে অপমান করা হয়েছে!

নারী সম্পর্কে আরেকটি ভুল ধারণা হল তারা উচ্চতর আধ্যাত্মিক ও খোদায়ি নৈকট্যের অধিকারী হওয়ার মত মেধা ও যোগ্যতা রাখে না এবং বেহেশতে তাদের কোনো স্থান নেই-এমন অপমানজনক ভুল ধারণাকেও নাকচ করে দেয় পবিত্র কুরআন। পবিত্র কুরআনে সুরা আল-ই ইমরানের ১৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া এই বলে কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে হোক পুরুষ কিংবা স্ত্রীলোক। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩০ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।