মে ০৯, ২০২৩ ১৯:২০ Asia/Dhaka

 ইসলাম ধর্ম হযরত মারিয়াম সালামুল্লাহ আলাইহাকে অসাধারণ গুরুত্ব ও সম্মান দিয়েছে। তিনিই হচ্ছেন একমাত্র নারী যার নাম সরাসরি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের ১৯তম সুরার নামকরণ করা হয়েছে এই মহামানবীর নামেই। ইঞ্জিল বা বাইবেলের চেয়েও এই নাম পবিত্র কুরআনে বেশি এসেছে।

পবিত্র কুরআন হযরত মারিয়ামের চারিত্রিক পবিত্রতা ও ঈমানের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। আর এ থেকেই হযরত মারিয়ামের উন্নত গুণাবলী ফুটে উঠেছে। মারিয়াম ছিলেন হযরত সুলায়মান নবীর বংশধর। তাঁর পিতা হযরত ইমরান ছিলেন মহান আল্লাহর একজন নবী। ইমরান ও তাঁর স্ত্রী হান্না অনেক বছর ধরে সন্তান কামনা করে আসছিলেন। একদিন ইমরানের কাছে মহান আল্লাহর এই ওহি নাজিল হয় যে তোমাকে এমন এক পুত্র সন্তান দেয়া হবে যে রোগীদের আরোগ্য দান করবেন এবং আমার ইচ্ছায় মৃতদের জীবিত করবেন। আর ওই পুত্র হবেন বনি ইসরাইলের মধ্যে আমার ধর্ম প্রচারক একজন নবী। একজন নবী আসবেন এই সংবাদ ফিলিস্তিন সংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

পবিত্র কুরআনের ১৯তম সুরার নামকরণ করা হয়েছে মহামানবী মারিয়াম -সা.আ'র নামে

 

এ সময় ইহুদিদের মধ্যে যুদ্ধ জোরদার হয়েছিল। তারা হযরত ঈসা নবীর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলেন যাতে তিনি জুলুম থেকে তাদের মুক্তি দেন। বিবি হান্না গর্ভবতী হলে ইমরান ওহির আলোকে নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁর সন্তানই হবেন হযরত ঈসা। তাই তিনি নিয়ত করেন যে সন্তানকে আল্লাহর ইবাদতকেন্দ্রের সেবক হিসেবে ওয়াকফ্ করবেন। সুরা আলে ইমরানের ৩৫ ও ৩৬ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে এসেছে: স্মরণ কর সেই সময়ের কথা ইমরানের স্ত্রী যখন বললো-হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম তোমার ঘরের সেবার জন্য সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত। অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি একে কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানতেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।– 

বিবি হান্না ও ইমরান ভেবেছিলেন যে তাদেরকে যে সন্তানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা স্বয়ং ঈসার জন্মের। কিন্তু আসলে তাঁদের জন্য ওই প্রতিশ্রুতি ছিল পরোক্ষ প্রতিশ্রুতি তথা ঈসা নবীর নানা-নানী হওয়ার প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ চেয়েছিলেন মারিয়ামের মত যোগ্য নারী ঈসা নবীর মা হিসেবে জন্ম নিয়ে মহান ঈসার জন্মের পটভূমি তৈরি করবেন। এ আয়াত থেকে এটাও বোঝা যায় যে কেবল পুত্রই যে বংশধারা রক্ষা করে তা নয় কন্যাও তাঁর পিতার বংশধারা রক্ষা করতে পারে। যেমন, ইমাম হাসান ও হুসাইনকে রাসুলের বংশধর ও রাসুল (সা)'র সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
হান্না তার কন্যা সন্তান হওয়ায় ঘাবড়ে যান। সে যুগে ইবাদত কেন্দ্রের সেবক হিসেবে কন্যা সন্তানকে নিয়োগ দেয়ার প্রচলন ছিল না। তাই মারিয়ামকে ইবাদত কেন্দ্রের সেবিকা হিসেবে দান করে নজর বা মানত পূরণ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ তার ওই নিয়ত কবুল করেছেন। হান্না কন্যার নাম রাখেন মারিয়াম। হযরত মুসা ও হারুনের বোনের নামও ছিল মারিয়াম।

মারিয়াম সর্বকালের সেরা চার নারীর অন্যতম 

 

বিবি হান্না তাঁর নিয়ত বাস্তবায়ন করতে মারিয়ামকে ইবাদতকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। মারিয়ামের পিতা ইন্তেকাল করায় তাঁকে ইবাদতকেন্দ্রে কার অভিভাবকত্বে সোপর্দ করবেন তা তখনও নির্ধারণ করা হয়নি। বনি ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ইমরান নবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাই মারিয়ামের অভিভাবক কে হবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হল। ফলে এ নিয়ে লটারি হয়। লটারিতে জাকারিয়া নবী এই সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি সম্পর্কে ছিলেন মারিয়ামের খালু ও অন্যদের চেয়ে বেশি সম্মানিত। এর আগে কন্যা সন্তান হওয়ায় মারিয়ামকে ইবাদতকেন্দ্রের খাদেম করা হবে কিনা তা নিয়ে সেখানকার আলেমদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। এ অবস্থায় হযরত জাকারিয়া মারিয়ামকে ওই পবিত্র স্থানের খাদেম করার বিষয়ে আলেমদের রাজি করাতে সক্ষম হন। 

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে তথা মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে হযরত মারিয়াম যে অত্যন্ত উচ্চ-মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তা বোঝা যায় সুরা আলে ইমরানের ৩৭ নম্বর আয়াত থেকে। এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করলেন।–অর্থাৎ মহান আল্লাহ নিজেই মারিয়ামকে লালন পালনের ভার নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি তাঁকে অসাধারণ উন্নতি দানের কথাও উল্লেখ করেছেন।  আসলে এসব কারণেই হযরত মারিয়াম সালামুল্লাহি আলাইহা ইতিহাসের সেরা চার নারীর একজন। 

হযরত জাকারিয়া মারিয়ামের জন্য বিশাল ইবাদাত-কমপ্লেক্সের এমন এক স্থানে মারিয়ামের থাকার ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন যা ছিল পুরুষদের দৃষ্টিসীমা থেকে অনেক দূরে। যাকারিয়া যখনই মারিয়ামের কাছে তার ঘরে যেতেন তখনই দেখতেন সেখানে ঝুড়ি-ভরা নানা ধরনের ফল এবং সেসব ফল ওই মৌসুমেরও নয়! বিস্মিত জাকারিয়া একদিন প্রশ্ন করেন: এসব ফল কে তোমাকে দেয়? মারিয়াম জবাব দিলেন: "এসব আল্লাহর কাছ থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।"

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন

 

তাপসী মারিয়ামের ওই জবাব শুনে হযরত নিঃসন্তান বৃদ্ধ জাকারিয়া আল্লাহর কাছে সন্তান চাইতে উৎসাহিত হন। তিনি দোয়ার হাত তুলে বলেছেন: হে, আমার পালনকর্তা! তোমার কাছ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।  

হযরত মারিয়াম এত উচ্চ আধ্যাত্মিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে ফেরেশতারা  আল্লাহর কাছে তাঁর উচ্চ মর্যাদার বা নৈকট্যের সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেমন, সুরা আলে ইমরানের ৪২ ও ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: আর যখন ফেরেশতা বলল হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত বা পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। হে মারইয়াম! তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর। - এতসব শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই মহান আল্লাহ হযরত ঈসাকে জন্মদানের জন্য তাপসী মারিয়ামকে মনোনীত করেছিলেন যাতে হযরত ঈসা তাঁর রেসালাতের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। 

সুরা আলে ইমরানের ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত।– এখানে বলা হচ্ছে যে পিতা ছাড়াই আল্লাহ মারিয়ামকে সন্তান দিবেন যার নাম হবে ঈসা। ঈসা নবীকে এখানে আল্লাহর কথা বা বাণী বলা হয়েছে এটা বোঝাতে যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টি তিনি আল্লাহর পুত্র নন।  মহান আল্লাহ পুত্রের মুখাপেক্ষী নন এবং তার যদি কোনো পুত্রের দরকারও হত তাহলেও তা কোনো মানুষের গর্ভে জন্মাবে কেন? #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।