সুসন্তানরা ভালো বাবা-মায়েরই স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকেন!
সুখের নীড়- ৫০ ( স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই চাকরি করা)
আজকের আলোচনা আমরা শুরু করব মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জা'ফর সাদিক্ব (আ)'র একটি বাণী শুনিয়ে।
তিনি বলেছেন, মু'মিন বা বিশ্বাসী হলেন তিনি যিনি সব সময় নিজের পরিবারকে জরুরি জ্ঞান ও আদব-কায়দার কল্যাণের অধিকারী করার চেষ্টা চালিয়ে যান যাতে তার পরিবারের সবাই বেহেশতে যায়।
আধুনিক বস্তুবাদী সভ্যতার ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক মানুষ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বা বাড়তি অর্থ সংগ্রহকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলে একই পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই চাকরি করে বা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আয়-উপার্জন বাড়িয়ে পরস্পরের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হন। কিন্তু এর ফলে দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি যে বাড়ে তা বলা যায় না সব সময়। কারণ এর ফলে যে বাড়তি সময়টা ব্যয় হয় তাতে স্ত্রীর জন্য সন্তানকে ও স্বামীকে সেবা দেয়ার তথা তাদেরকে স্নেহ বা মানসিক সেবা দেয়ার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ থাকে না এবং স্বামীর ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য। অন্য কথায় এতে হিতে বিপরীত ঘটার বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আকর্ষণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। অথচ মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি হল এমন যে স্নেহ-ভালবাসার মাত্রা যদি বেশি থাকে তাহলে মানুষ কম সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে।
এটা ঠিক যে পরিবারের জন্য যথেষ্ট মাত্রায় আয়-উপার্জন করা জরুরি এবং তাতে জিহাদের সাওয়াবও রয়েছে। কিন্তু কেবল বস্তুগত আয়-রোজগার তথা অর্থ উপার্জনই যেন দাম্পত্য জীবনের প্রধান লক্ষ্য না হয়ে পড়ে। পারিবারিক বিনোদন, মানসিক প্রশান্তি ও বিশ্রামের জন্য যথেষ্ট সময় বরাদ্দ করার বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। মোটকথা জীবনটা যেন যান্ত্রিক ও কলুর বলদের মত একঘেয়ে হয়ে না পড়ে।পরিবার ব্যবস্থা সমাজবদ্ধ জীবনের শ্রেষ্ঠ ভিত্তি। পরিবার গঠন ছাড়া নারী ও পুরুষের জীবনে পূর্ণতা আসে না। শরীরকে সুস্থ রাখা, চারিত্রিক বা নৈতিক পবিত্রতা বজায় রাখা ও মানসিক প্রশান্তি অর্জনের জন্য বিয়ে করা এবং পরিবার গঠন জরুরি। সমাজকে যোগ্য নাগরিক উপহার দিয়ে যাওয়াও সুস্থ পরিবার গঠন ও সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়ার ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক বাবা-মা-ই চান যেন তাদের সন্তান খুব ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে যাতে সমাজের মানুষ তাদেরকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাবা মায়ের জন্য এটাই সবচেয়ে প্রত্যাশিত স্মরণীয় বিষয়। সুসন্তানরা ভালো বাবা-মায়েরই স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকেন। -
সুসন্তান গড়ে তোলার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ ও সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্কের ধরণ এবং নানা কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নিয়ে আমরা গত পর্বে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে আজও কিছুটা আলোকপাত করব। পরিবার হচ্ছে এমন একটি দল বা টিমের মত যেখানে সবাই যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের কাছে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার মাত্রায় ভারসাম্য থাকা উচিত। অযৌক্তিক ও মাত্রাতিরিক্ত আবদার পরিবারে সৃষ্টি করে অশান্তি। আবার ইতিবাচক বা যৌক্তিক প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কারো মধ্যে আনে হতাশা এবং এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো হওয়া উচিত ইতিবাচক। যৌথ বা অভিন্ন স্বার্থের কাজে সবার উচিত সমান মাত্রায় অংশ নেয়ার চেষ্টা করা। এ ধরনের অংশগ্রহণ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্মান বাড়িয়ে দেয়।
অনেক বাবা-মা অন্যের সন্তানদের যোগ্যতার কথা তুলনা হিসেবে তুলে ধরে তাদের অবস্থার সঙ্গে নিজ সন্তানদের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করেন। অথচ ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভিন্ন ধরনের। তাই এ ধরনের তুলনা মোটেই কাম্য নয়। এ ধরনের তুলনা আপনার সন্তানের মনে আঘাত হয়ে দেখা দেবে এবং তার আত্মবিশ্বাস ও কর্মস্পৃহা কমে যাবে। সন্তানদের দিকে না তাকিয়ে বা অন্য দিকে মনোযোগ রেখে কথা বলাও একটি নেতিবাচক স্বভাব যা মোটেই কাম্য নয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারোই এ ধরনের স্বভাব থাকা উচিত নয়। কারণ সরাসরি না তাকিয়ে কথা বলা থেকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এটা ধরে নিতে পারে যে তাকে ঘৃণা করা হচ্ছে। অবশ্য সন্তানদের দিকে বা পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকানোও সঠিক নীতি নয়। পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের উচিত একে-অপরের সঙ্গে কথা বলার সময় খুব মনোযোগ দিয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কথা বলা এবং একে-অপরের কথা খুব যত্নসহকারে শোনা তথা খুব ভালো শ্রোতা হওয়া।
সন্তান কোনো বিষয়ে ব্যর্থ হলে বা পিছিয়ে গেলেও বাবা-মায়ের উচিত তাকে স্নেহ ও উৎসাহ যুগিয়ে যাওয়া আগের মতই। তাকে আগের মতই কাছে টেনে নিতে হবে ও তার শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে অনেক ব্যর্থতা সত্ত্বেও সে নিঃসঙ্গ বা একাকী নয়, বরং বাবা-মাসহ সবাই তাকে সহযোগিতা দিয়ে যেতে প্রস্তুত এবং সবাই তার সম্পর্কে এখনও উঁচু ধারণাই পোষণ করে। কখনও কখনও আদর করে সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে উৎসাহ দেয়া যায় অনেক কথা বলেও সেই মাত্রার মনোবল যোগানো সম্ভব হয় না।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।