জুলাই ০৩, ২০২৩ ২০:৩৪ Asia/Dhaka

তুরস্ক ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির চর্চা করে অতীত থেকেই। তাই এলজিবিটি বা সমকামিতা নয় ইসলামি পারিবারিক ব্যবস্থা এবং মূল্যবোধেই এরদোগান এবং তার দল পুরোপুরি বিশ্বাস করে এবং সেভাবেই কাজ করছে। তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ভেদাভেদ নয় সবার ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন, বিশিষ্ট লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমিনুল ইসলাম শান্ত।

পুরো সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো। এটি উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব আমিনুল ইসলাম শান্ত, রান অফ নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট এরদোগান ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি সমকামিতাকে কোনমতেই সহ্য করবেন না এবং পারিবারিক মূল্যবোধ তিনি রক্ষা করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাকে কেন এই ঘোষণা দিতে হলো?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: এর প্রধান কারণ হচ্ছে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চান যেখানে ঐক্যই হবে মূলমন্ত্র। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন নির্বাচনে জয়ের পর পরই মধ্যরাতে আঙ্কারায় গিয়ে তার প্রেসিডেন্ট প্যালেসের সামনে হাজার হাজার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বললেন, আজ তুরস্কের ৮৫ মিলিয়ন মানুষের জয় হয়েছে। শুধু আমি কিংবা আমার দল জেতেনি। বিরোধী ভোটার যারা রয়েছেন তাদেরসহ তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ তুর্কি জাতির কথা ভেবেছেন এবং স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি তুরস্কের জনগণকে কথিত পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং সভ্যতা থেকে বের করে একটি সুন্দর পারিবারিক কাঠামোতে নিয়ে যেতে চান। এই কাজটি আরও আগ থেকে শুরু হয়েছে এবং সেই জায়গায় তিনি সফল হয়েছেন।

রেডিও তেহরান: জনাব শান্ত, তারমানে তিনি তার দলের সমর্থক এবং গোটা তুর্কীর জনগণকে এলজিবিটি অর্থাৎ সমকামিতার মতো পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুগামী না হয়ে পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি যত্নশীল হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন-তাইতো..

আমিনুল ইসলাম শান্ত: দেখুন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তার সমর্থকরা রক্ষণশীল মুসলিম অতীত থেকেই।  আর রক্ষণশীল মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দাবি হওয়া হচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতির বাইরে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও পারিবারিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা। তুরস্কের মানুষের ধর্মীয় ঐতিহ্য আছে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা। সেই ইসলামি ঐতিহ্যকে তারা লালন করে একটি পরিবারতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলায় বিশ্বাসী। তারা তুরস্কের সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিতে চায় না। এরদোগানের দলের সমর্থকরা এমনটিই মনে করে। আর সেই সমর্থকদের চিন্তা চেতনার সাথে মিল রেখেই এরদোগান কথা বলেন এ কাজ করেন।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমিনুল ইসলাম শান্তের আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি, আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: জনাব, শান্ত আপনার কাছে জানতে চাইব, নির্বাচনে বিজয়ের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এরদোগানকে যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে তিনি "প্রিয় বন্ধু" বলে সম্বোধন করেছেন। এরদোগানের সাথে পুতিনের এই যে সম্পর্ক এর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং প্রভাবকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর প্রশ্নের জন্য। দুটো বিষয় এখানে আছে। একটি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আর অন্যটি হচ্ছে প্রভাব। দেখুন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ যখন চলছে তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বেশি মিত্রের প্রয়োজন। আর ঠিক তেমন একটি সময়ে এরদোগান আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। তো একদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের মিত্রের প্রয়োজন অন্যদিকে নির্বাচনের সময় পশ্চিমারা  এরদোগানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল সেই জায়গাটিতে জয় করতে পেরেছে রুশ প্রেসিডেন্ট। আর তুরস্কের ভূ রাজনৈতিক অবস্থানটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক কৃষ্ণসাগরের একপাশে অপর পাশে রাশিয়া। আর রাশিয়ার বাণিজ্য রুট হচ্ছে কৃষ্ণসাগরের মধ্য দিয়ে তুরস্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

রেডিও তেহরান: সবশেষে জনাব শান্ত, তুরস্কের ভূ রাজনৈতিক অবস্থান একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এ বিষয়টিকে যদি আপনি একটু ব্যাখ্যা করেন।

আমিনুল ইসলাম শান্ত: দেখুন ভূ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের অবস্থান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ-একদিকে বসফরাস প্রণালী অন্যদিকে ভূমধ্য সাগর। ভূমধ্য সাগর ইউরোপের কিছু দেশ এবং রাশিয়ার অ্যাকেসেসের জন্য অবশ্যই তুরস্ককে অনেক বেশি প্রয়োজন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অন্য আরেকটি দিক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে এসে যে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় বা মোড়লিপনা করতে চায় তুরস্কের ভূ রাজনৈতিক কারণে সেটি তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এই দেশটির গুরুত্ব আমেরিকার কাছে যেমন রয়েছে অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে তুরস্ককে রাশিয়ার জন্যে অনেক বেশি প্রয়োজন। আর রাশিয়ার প্রয়োজনের কারণেই তুরস্কের সাথে সম্পর্ক আরো বেশি ঘনিষ্ঠ করেছে। আপনারা জানেন তুরস্কের নির্বাচনের সময় এ অভিযোগ উঠেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদের সাথে আঁতাত করে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে তুরস্ক তার পররাষ্ট্রনীতি এবং বার্গেনিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কৌঁশলী এবং এগিয়ে রয়েছে।#

পার্সটুডে/জিএআর/৩

 

 

 

 

 

 

ট্যাগ