জুলাই ২৩, ২০২৩ ১৪:৫৯ Asia/Dhaka
  • যা মন চায় করো, আমারও নাচের পালা আসবে

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি এরকম: যা মন চায় করো, আমারও নাচের পালা আসবে।

গল্পটি এরকম: একটা উট ছিল, তার কোনো মনিব ছিল না। উটটি নিজের মতোই ঘাস লতা-পাতা খেতো এবং নিজের মতো করেই ঘুমাতো। এভাবে উটটি ভালোই কাটাচ্ছিলো। না বোঝা টানতো না কাঁটাগুল্ম খেতো।

একদিন ওই উট ঘাস খাচ্ছিলো। ঘাস খেতে খেতে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। ঘুরতে ঘুরতে উটের চোখ পড়লো হালকা পাতলা একটা গাধার ওপর। গাধার পিঠে ভারি বোঝার কারণে তার পক্ষে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিলো। কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাচ্ছিলো বেচারা। গাধার অবস্থা দেখে উটের খারাপ লাগলো। আস্তে করে তার কানে কানে বললো: একটু পা ঝাড়া মারতে পারো না? তাহলেই তো বোঝা বহন করা থেকে মুক্তি পেতে পারো। তারপর আমার মতো মুক্ত হয়ে গিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারো, ঘুরতে পারো। মুক্তভাবে ঘাস-লতা-পাতা যা খুশি খেতে পারো। আমার সঙ্গে এসো চলে যাই এমন কোনো জায়গায় যেখানে কেউ আমাদের বিরক্ত করতে পারবে না, কষ্ট দিতে পারবে না।

উটের প্রস্তাব শুনে গাধার খুব ভালো লাগলো। পা নয় শুধু একেবারে গা ঝাড়া দিয়ে গাধা তার পিঠের ওপর থেকে বোঝা ফেলে দিলো। তারপর উটের পেছনে পেছনে সে চলে গেল মরু প্রান্তরের দিকে। গাধা এবং উট পরস্পরে বন্ধু হয়ে গেল। তিন-চার দিন দুই বন্ধু বেকার ঘুরে ফিরে বেড়ালো। প্রান্তরের ঘাস লতা পাতা খেলো এবং খালের পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটালো। এভাবে গাধা যেন প্রাণ ফিরে পেল। ধীরে ধীরে একেবারে প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো গাধা। একদিন আনন্দের আতিশয্যে গাধার ইচ্ছে করলো একটু গান গাইতে। উট যখন বুঝতে পারলো গাধার এই অভিলাষ দ্রুত তার মুখ মুখ ঘষে বললো: তুমি যদি 'আর আর' করে চীৎকার করো এই প্রান্তরের চারপাশের মানুষেরা এসে এখান থেকে আমাদের দুজনকেই ধরে নিয়ে চলে যাবে।

তখন নতুন দিন, নতুন খানাপিনা, নতুন জীবন। সেই আগের মতো বোঝা টানতে হবে, আগের মতো পিঠে চাবুক খেতে হবে। তারচেয়ে ভালো আমার আর তোমার কথা যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য চুপচাপ থাকো। গাধা এরইমধ্যে তার বিগত দিনের কষ্টের কথা ভুলে গিয়েছিল। একেবারেই বন্ধুর মতো উটের কথা কানে না তুলে 'আর-আর' ধ্বনি তুলে গান গাইতে শুরু করে দিলো। উট যতোই চেষ্টা করলে গাধাকে থামাতে কিছুতেই পারলো না। উট যতই বললো: থামো! চীৎকার করো না! গাধা থামলোই না, সে তার মতো 'আর আর' করতেই থাকলো।  আনন্দে 'আর আর' ধ্বনি তুলে চীৎকার করতে লাগলো। গাধা তার অতীতের দু:খ-কষ্টের কথা বেমালুম ভুলে গেল। কী কষ্টটাই না করেছিল সে। সারাদিন বোঝা টেনে টেনে ক্লান্ত হয়ে পড়তো। সেইসব ভুলে গিয়ে এখন তার প্রিয় বন্ধু উটের কথা সে কানেই তুললো না। ডেকেই যেতে লাগলো বিশ্রি শব্দ করে। উট যতই চেষ্টা করতে তাকে থামাতে কিছুতেই কাজ হলো না। উট যতই বললো: চুপ কর, চুপ কর! গাধা শব্দ করতে করতে বললো: কী করবো? আমার বাপের কথা মনে পড়ে গেল 'আর আর' করতে করতে। আমার বাবাও এরকম 'আর আর' করতো। আমিও সেভাবেই আনমনে গান গাচ্ছি।

গাধার কথা শুনে উট পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। এমন সময় তার নজরে পড়লো কয়েকজন লোক লাঠিসোটা হাতে নিয়ে তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। বিষন্ন আর বিরক্তিপূর্ণ মনে উট গাধার দিকে তাকিয়ে বললো: কোনো সমস্যা নেই, আমারও নাচের পালা আসবে। গ্রামের মানুষজন মূলত গাধার ডাক শুনেই তেড়ে এসেছিল। এখন গাধার সাথে সাথে উটের গলাতেও রশি পড়লো। কী আর করা, লোকেরা গাধার সঙ্গে উটকেও বেঁধে নিয়ে গেল। যাবার সময় গাধা বুঝতে পারলো গান গেয়ে কী ভুলটাই না করেছে সে। সিদ্ধান্ত নিলো সে অসুস্থতা এবং অক্ষমতার ভান করবে। তাহলে হয়তো গ্রামবাসীরা তাকে ফেলে রেখে যাবে। এই ভেবে গাধা হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। যতই তাকে লাঠিপেটা করলো কিছুতেই সে উঠলো না।

গাধা উঠে না দাঁড়ানোয় উটও বসে পড়লো মাটিতে। গ্রামবাসীদের একজন তখন বললো: গাধার হাত-পা বেঁধে উটের পিঠে দিয়ে দিই। কাল ওর অবস্থা ভালো হলে আমাদের পণ্যের বোঝা পিঠে দিয়ে দেবো। আরেকজন প্রস্তাবটা পছন্দ করে বললো: ভালোই তো। গাধা যদি সুস্থ হয় আমরা তাকে দিয়ে আমাদের বোঝা বহন করাবো।  আর ভাল না হলে তাকে তার কাজে ছেড়ে দেব। উটের পিঠে গাধাকে চাপিয়ে দেওয়া হলো। গাধার ওপর ব্যাপক বিরক্ত উট কিছু পথ শান্তভাবে গিয়ে একটা গর্তের কাছে পৌঁছে হঠাৎ ঝাকুনি দিতে শুরু করলো। গাধা দেখলো উট এভাবে ঝাঁকুনি দিতে থাকলে তো গর্তে পড়ে মরতে হবে।

গাধা উটের কানে কানে বললো: এটা কি ঝাঁকুনি দেওয়ার সময়? উট বললো: কী করবো, আমারও যে মায়ের নাচের কথা মনে পড়ে গেছে এবং নাচতে ইচ্ছে করছে। উট আরও তিন-চারবার ঝাঁকুনি দিলো আর বেচারা গাধা গভীর খাদে পড়ে মারা গেল। গাধার পতন অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল গ্রামবাসী। উট এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পালিয়ে বাঁচলো। এরপর থেকেই কেউ যখন অন্যের ক্ষতির ব্যাপারে উদাসীন থাকে তার সম্পর্কে বলতে শুরু হয়ে গেল: যা মন চায় করো, আমারও নাচের পালা আসবে।#

পার্সটুডে/এনএম/২৩/৭০

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ