গল্প ও প্রবাদের গল্প:
মালি ও ছোট্ট পাখির উপদেশ
প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি গল্প। গল্পটি এরকম:
বেশ প্রাচীনকালে এক মালির একটা সুন্দর বাগান ছিল। বাগানটি যেমন ছিল পরিচ্ছন্ন তেমনি ছিল রঙ-বেরঙের পাখির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ। বসন্তকালে আরও বেশি কাকলিমুখর হয়ে উঠতো বাগান। বাগানে ফুলও ছিল বিচিত্র এবং রঙ-বেরঙের। একদিকে পাখিদের সুমধুর গান অপরদিকে ফুলের মনভরা ঘ্রাণে মৌ মৌ করতো চারিধার। মালি পাখিদের গান শুনতে শুনতে কাজ করতো। হঠাৎ তার মাথায় একটা দুষ্ট চিন্তা এলো। সে ভাবলো ফাঁদ পেতে একটা পাখি ধরলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মালি একটা ফাঁদ পাতলো। কিছু খাবার দিলো ওই ফাঁদে। এরপর বাগানের এক কোণে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। একটা সময় একটি পাখি ওই খাবার খেলো এবং আটকা পড়ে গেল ফাঁদে। মালি খুশি হয়ে গিয়ে দৌড়ে গেল পাখিটিকে ধরতে। সুন্দর সেই পাখিটিকে সে ধরলো। পাখিটি হঠাৎ বলে উঠলো: হে দয়ালু মালি! আমাকে মুক্ত করে দাও! আমি দুর্বল এবং ছোট্ট একটি পাখি। আমার গায়েও তেমন গোশত নেই যে তুমি মজা করে খেয়ে তৃপ্ত হবে। যা দেখছো সবই পাখা আর হাড্ডি। আমাকে মুক্ত করে দিলে তোমাকে তিনটা উপদেশ দেবো।
পাখির কথা শুনে মালি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো: তোকে ছেড়ে দিলে আমাকে তিনটা উপদেশ দেবে? তুই কে? কী জানিস তুই? আমাকে কী উপদেশ দিবি? পাখি বললো: প্রথম উপদেশ তোমার হাতে থাকাকালে দেবো। দ্বিতীয় উপদেশটি দেবো যখন দেয়ালের ওপর গিয়ে বসবো। আর তৃতীয় উপদেশটি দেবো যখন আমি উড়ে গিয়ে গাছের ডালে বসবো। মালি মনে মনে ভাবলো পাখিটা তো সত্যিই বলছে। ওর গায়ে তো মাংস নেই। সুতরাং ওর কথা শোনাটাই ভালো। হতেও তো পারে ওর উপদেশ কোনো কল্যাণে আসতে পারে। মালি তাই পাখিটিকে বললো: ঠিক আছে, তোকে মুক্ত করে দিচ্ছি। কিন্তু আগে তোর প্রথম উপদেশটা শুনবো। শুনে চিন্তা করবো তোর উপদেশের আদৌ কোনো মূল্য আছে কিনা। পাখি বললো: আমার প্রথম উপদেশ হলো: অসম্ভব বা অবাস্তব কোনো বিষয়কে কখনও বিশ্বাস করো না।
মালি পাখির প্রথম উপদেশ শুনে খানিকটা ভাবলো। ভেবেচিন্তে মনে মনে বললো: উপদেশটা তো মন্দ না, ভালোই। তারপর হাত খুলে দিতেই পাখিটা উড়ে গিয়ে দেয়ালের ওপর বসলো। মালি বললো: তোর ওয়াদা অনুযায়ী এখন দ্বিতীয় উপদেশটা বল। পাখিটি মুক্তির আনন্দে গান গাইতে গাইতে বললো: ফেলে আসা দিন কিংবা হারানো বস্তু নিয়ে কখনও দু:খ করো না। এ কথা বলেই পাখিটি উড়ে গিয়ে বসলো গাছের মগডালে। পাখির উপদেশ দুটো খুব ভালো লাগলো মালির। সে ছোট্ট কিন্তু বুদ্ধিমান পাখিকে তার তৃতীয় উপদেশটা বলতে বললো।
পাখি এবারও মনের সুখে গান গাইতে গাইতে বললো: হে সরল মনের মালি! আমি তোমাকে প্রবঞ্চিত করেছি। কেন, জানো? আমার পেটে একটা মহামূল্যবান পাথর আর একটা দুর্লভ মুক্তা আছে। এগুলো অসম্ভব মূল্যবান। তুমি প্রতারিত হয়ে এগুলো হারিয়েছো। মালি এসব কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করলো। বলতে লাগলো: আহ হা .. রেহ! দুইটা মূল্যহীন উপদেশের জন্য এতো মূল্যবান সম্পদ হারালাম। আমার বৌ-ছেলে-মেয়ের অধিকার নষ্ট করলাম! পাখি মালির কান্নাকাটি শুনে হাঁসতে হাঁসতে বললো: হে বোকা মালি! এতো দ্রুত কী করে আমার উপদেশ ভুলে গেলে! বলেছি না অতীত নিয়ে দু:খ করো না? বলি নি অবাস্তব কথা বিশ্বাস করো না? এতো দ্রুত সেসব কথা ভুলে গিয়ে তুমি অবাস্তব কথায় কান দিলে? তুমি কি বোকা না বধির? তোমার কি বুদ্ধিসুদ্ধি নেই?
আমি এতো ছোট্ট একটি প্রাণী। একটিবার ভাবো-আমার পেটে কি অতো মূল্যবান এবং বিশাল পাথর আর মুক্তা থাকা সম্ভব? মালি ছোট্ট পাখির কথা শুনে সম্বিৎ ফিরে পেলো। বুঝতে পারলো যে সে ভুল করেছে। পাখি যেসব উপদেশ দিয়েছিল সেগুলো নিয়ে তার গভীর মনোযোগের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল। কিন্তু সে তা করে নি-ভাবেও নি, তাই উপলব্ধিও করতে পারে নি। কেননা সে যদি সত্যিই চিন্তাভাবনা করতো তাহলে বুঝতো এবং সে অনুযায়ী কাজ করতো। মালি এবার অনুতপ্ত হয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বললো: হে বুদ্ধিমান ছোট্ট পাখি! আমি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও! তুমি তোমার তৃতীয় উপদেশটি দিয়ে তোমার অঙ্গীকার রক্ষা করো। তৃতীয় উপদেশ শুনতে চাওয়ায় পাখিটি হাসলো। তারপর বললো: তুমি তো আগের দুটো উপদেশ ঠিকমতো পালন করো নি অথচ তৃতীয় উপদেশ শুনতে চাচ্ছো? আমার উপদেশ তোমার কী কাজে লাগবে? তোমার জন্য কিংবা তোমার মতো মানুষের জন্য উপদেশ দেওয়া বাতাসে গিঁট দেওয়ার মতোই নিরর্থক, কোনো মানে হয় না। মালি তবু অনুনয় বিনয় করে বললো: হে সুন্দর পাখি! আমাকে মাফ করে দাও! তোমার তৃতীয় উপদেশটি বলো!
পাখি বললো: আমি আগের দুটি উপদেশের জন্য অনুতপ্ত। উপদেশ তো তোমার কানে প্রবেশ করে না। তুমি অঅর উপদেশ দিয়ে কী করবে? পাখিটি এ কথা বলেই উড়াল দিয়ে চলে গেল বাগান ছেড়ে দূরে।#
পার্সটুডে/এনএম/২৬/৭৩
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ