আগস্ট ২৬, ২০২৩ ১৬:৪২ Asia/Dhaka

জোটে যদি একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি জোটে যদি দু'টি পয়সা ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী- মহানবীর অমূল্য এই বাণী আমরা অনেকেই শুনেছি।

মানুষ পৃথিবীতে এসেছে কেবলই কি খাওয়া, পরা, ঘুম, বিশ্রাম ও বংশ বিস্তারের জন্য? না, কারণ এইসব কাজ তো যে কোনো জীব-জন্তুও করে থাকে! মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত বা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তার মধ্যে রয়েছে খোদায়ি আত্মা। এই আত্মার দরকার খোরাক বা খাদ্য। আত্মিক সুখ বা প্রশান্তিই হল আসল  সুখ। এই আত্মিক সুখের প্রধান উৎস হচ্ছে মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বা ভরসা। মহান আল্লাহর ওপর যাদের বিশ্বাস কম বা শিথিল তারা নানা হতাশায় ভোগে। দুঃখজনকভাবে বর্তমান যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুব সমাজের এক বড় অংশই হতাশার শিকার। তাদের অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। জাপানের মত ধনী ও উন্নত দেশেও আত্মহত্যা করছে বিপুল সংখ্যক মানুষ যাদের এক বড় অংশই যুব সমাজ। ভেঙ্গে পড়ছে পরিবার! এর কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক শূন্যতা।

 ভোগবাদী সংস্কৃতি মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে আধ্যাত্মিকতা হতে। অথচ যুব সমাজের প্রকৃতি স্বচ্ছ এবং তারা সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা যদি যুব বয়স থেকেই করা হয় তাহলে তারা আত্মশুদ্ধি বা আত্ম- সংশোধনে সফল হবে। পরকালের প্রতি বিশ্বাস মানুষকে নৈতিক দিক থেকে উন্নত হওয়ার উৎসাহ যোগায়।সাধারণত কম বয়সে তথা তরুণ বয়সে কিংবা যৌবনে মানুষ মৃত্যু নিয়ে ভাবে না। কারণ তারা মনে করে যে জীবনের এখনও অনেক সময় বাকি। কিন্তু কার কতটা আয়ু আছে তা কেউই বলতে পারে না। বহু মানুষই শৈশবে, কৈশোরে বা যুব বয়সেই মারা যায়। তাই আত্মিক উন্নতি বা আধ্যাত্মিকতার চর্চা শুরু করার সবচেয়ে ভালো সময় হল তরুণ ও যুব বয়স। মহান আল্লাহ এ সময়ের ইবাদতকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন বলে ইসলামী বর্ণনা বা হাদিস রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: একমাত্র আল্লাহর স্মরণেই রয়েছে প্রশান্তি। কবি নজরুলও তার গানে এ বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া ত্রিভুবনে শান্তি পাওয়া যায় না মনে!

'ইসলাম জাতিগুলোকে দিচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়বিচার'

যৌবনকালেই আত্ম-সংশোধন ও আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) বলেছেন, ''মানুষ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়, তখন অন্তরকে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন। আল্লাহ না করুন, যদি আত্মশুদ্ধি না করেই দুনিয়া ত্যাগ করো, তাহলে কিভাবে খোদার সামনে দাঁড়াবে, যেখানে তোমার অন্তরটা কালো হয়ে গিয়েছে, চোখ-কান-জিহ্বা পাপে কলুষিত হয়ে গিয়েছে? যে জিনিস পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় তোমাকে দেয়া হয়েছিলো, আস্থা ভঙ্গ করে তাকে কলুষিত করে কিভাবে সেটা আল্লাহর কাছে ফেরত দেবে ? এই চোখ, কান, যা তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন, এই হাত, এই জিহ্বা, যা তোমার আদেশ মেনে চলছে, শরীরের এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – এগুলো সবই তোমার কাছে সর্বশক্তিমান খোদার আমানত, আর এগুলো তোমাকে দেয়া হয়েছিলো শতভাগ পবিত্র, বিশুদ্ধ অবস্থায়। এগুলো দিয়ে পাপকর্ম করলে তা অবিশুদ্ধ, কলুষিত হয়ে যায়।''

একই প্রসঙ্গে ইমাম খোমেনি (র) আরও বলেছেন, '' আল্লাহ না করুন আল্লাহর দেয়া অঙ্গ গুলো যদি নিষিদ্ধ কর্মের মাধ্যমে কলুষিত হয়ে যায়, তাহলে যখন আমানত ফেরত দেবার সময় আসবে, তখন হয়তো জিজ্ঞাসা করা হবে যে, আমানতের জিনিস কি এভাবেই রক্ষা করতে হয় (যেভাবে তুমি একে রেখেছিলে) ? যখন তোমার কাছে আমানত রাখা হয়েছিলো, তখন কি এগুলো এই অবস্থায়ই ছিল ? তোমাকে যে অন্তর ও যে দৃষ্টি দান করা হয়েছিলো, তা কি এমনই ছিল ? তোমার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যাকে তোমার ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়েছিলো, সেগুলো কি এরকম নোংরা আর কলুষিত ছিল ? আমানতের এত বড় খেয়ানত করে কিভাবে খোদার সামনে দাঁড়াবে ?''-আত্মশুদ্ধির জন্য রমজান ও অন্য সময়ের রোজা এবং ইবাদাত বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রোজা মানুষকে সংযম শেখায়। এ জন্যই দেখা যায় যে রমজান মাসে অপরাধ প্রবণতা কমে যায়। আত্মশুদ্ধির জন্য সংসার ত্যাগ বা বৈরাগ্য সাধনকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য বিয়ে করাকে গুরুত্ব দেয়। তাই মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)'র হাদিসে বলা হয়েছে, যে বিয়ে করলো সে যেন ধর্মের অর্ধেক রক্ষা করল।

নামাজও মানুষকে পবিত্রতা ও সৎ পথের অনুসারী হতে সহায়তা করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘(হে রাসুল!) আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি (নাজিল) করা হয়েছে; তা থেকে তেলাওয়াত করুন আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ-কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

'নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ-কাজ থেকে বিরত রাখে'

-নামাজ, রোজা ও হজ্জসহ যে কোনো ইবাদাত হচ্ছেন মহান আল্লাহর স্মরণ। তাই আন্তরিক চিত্তে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে মানুষের আত্মা হয় পবিত্র এবং তা আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে। মানুষ যদি সব সময়ই এভাবে আল্লাহকে মনে রাখে তাহলে সে কখনও কোনো পাপ করতে পারে না। যৌবনের ইবাদাত মহান আল্লাহ বেশি প্রিয় বলে এ সময়ই মহান আল্লাহর বেশি নৈকট্য বা ভালোবাসা অর্জন করা সহজ।  দোয়া ও প্রার্থনাও মানুষের আত্মাকে করে পবিত্র। মহান আল্লাহ মানুষকে বিপদ-আপদ, ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র ইত্যাদির মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। কিন্তু মানুষ যদি খোদাভীতি অর্জন করে ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করতে শেখে তাহলে এইসব বিপদ আপদ তাদের ঈমানকে আরও সুদৃঢ় করে।

মহান আল্লাহর হেদায়াত মানুষের ঈমানকে এতোটা জোরদার করে যে এমন মানুষ কোনো কিছু হারিয়ে যেমন দুঃখ বোধ করে না তেমনি কোনো কিছু পেয়েও আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় না। অন্য কথায় এ ধরনের মানুষ আল্লাহর দেয়া বরাদ্দে সন্তুষ্ট থাকেন তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভাগ্য নিয়ে মন খারাপ করেন না। তারা জানেন যে পৃথিবীতে আনন্দগুলো যেমন চিরস্থায়ী নয় তেমনি দুঃখগুলোও চিরস্থায়ী নয়। মানুষ যখন এই সত্যগুলো মনে রাখবে তখন তার কাছে পার্থিব চাকচিক্যময় বিষয়গুলো ক্ষুদ্র ও খোদায়ি বিষয়গুলো বড় বলে মনে হবে।বর্তমান যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও এবং বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রচার চালানো সত্ত্বেও ইসলাম ও আধ্যাত্মিকতার দিকে দিনকে দিন তরুণ সমাজের আগ্রহ ও আকর্ষণ বাড়ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: বর্তমান শতাব্দি হচ্ছে ইসলামের শতাব্দি ও আধ্যাত্মিকতার শতাব্দি। ইসলাম জাতিগুলোকে দিচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়বিচার।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ