স্বাস্থ্যকথা: ডেঙ্গু-পর্ব ১
'ডেঙ্গুতে কাল বিলম্ব করা যাবে না'
শ্রোতাবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। তবে নিশ্চয়ই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
দেশের প্রায় সব জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। আমরা ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কয়েক পর্বে আলোচনা করব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকবেন-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খসরুজ্জামান রনি। বিশিষ্ট এই চিকিৎসক- সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেটে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
রেডিও তেহরান: ডা. খসরুজ্জামান রনি, রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ডা. খসরুজ্জামান রনি: আপনাকেও ধন্যবাদ রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
রেডিও তেহরান: ডা. মো. খসরুজ্জামন রনি, বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এসময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আমরা যখন রেকর্ড করছি এই অনুষ্ঠান তখন পর্যন্ত গোটা দেশে ৭৯০ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তো ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে শুরুতেই যদি আপনি বলেন-ডেঙ্গু জ্বরটা কি ধরনের জ্বর?
ডা. খসরুজ্জামান রনি: ধন্যবাদ। ডেঙ্গু হচ্ছে একটি আর্বোভাইরাস নামক ভাইরাস জনিত রোগ। যার মূলত চারটি ধরন রয়েছে। ডেন-ওয়ান, ডেন-টু,ডেন-ত্রি এবং ডেন –ফোর। বর্তমানে ডেন টু সেরোটাইপ দ্বারা আমাদের দেশে ডেঙ্গু সংক্রমিত হচ্ছে। আর এই ডেঙ্গু ভাইরাসটি মূলত এডিস মশা নামক একটি মশার কামড়ের মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়।
রেডিও তেহরান: ডা. মো. খসরুজ্জামন রনি, আপনি বললেন, ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত জ্বর। তো এবারে জানতে চাইব-ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো কি? অর্থাৎ বর্ষাকালে নানা ধরনের জ্বর হতে পারে তারমধ্যে কোনটি ডেঙ্গু জ্বর তা কোন লক্ষণের ভিত্তিতে বুঝতে পারা যাবে।
ডা. খসরুজ্জামান রনি: ধন্যবাদ, ডেঙ্গু সংক্রমণের সাধারণত চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা যায়।গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো হচ্ছে-উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, ক্লান্তবোধ করা, চোখে ব্যথা, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা এবং ত্বকে লাল লাল দাগ বা র্যাশ ওঠা।
শ্রোতাবন্ধুরা! বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ভয়াবহ রূপ নেয়া ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক খসরুজ্জামান রনির আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরিই আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: ডা. মো. খসরুজ্জামন রনি আবারও ফিরে এলাম স্বাস্থ্যকথার আসরে ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ক আলোচনায়। আপনি খুব সুন্দর করে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করলেন। ডা. রনি, স্বাধারণ ডেঙ্গু জ্বর আর তীব্র ডেঙ্গু জ্বরের মানে যেটি ভয়ের কারণ হতে পারে-এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎটা কীভাবে বোঝা যাবে?
ডা. খসরুজ্জামান রনি: দেখুন, সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর হতে তীব্র ডেঙ্গু জ্বরের পার্থক্য কিছু কিছু লক্ষণ দ্বারা বুঝতে পারা যায়।
তীব্র ডেঙ্গু জ্বরে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তের একটি উপাদান প্লাটিলেট খুব দ্রুত কমতে শুরু করে। যারফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেমন মাড়ি নাক ইত্যাদি জায়গা থেকে রক্ত ঝরতে পারে। পায়খানা বা বমির সাথে রক্ত যেতে পারে। পেট ব্যথা হতে পারে। ঘন ঘন বমি হতে পারে এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
রেডিও তেহরান: ডা. রনি প্রসঙ্গ ধরেই একটু জেনে নিতে চাইব, ডেঙ্গু জ্বরে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন। তো ডেঙ্গু জ্বর কোন পর্যায়ে গেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
ডা. খসরুজ্জামান রনি: সাধারণত যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তারাই তীব্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়াও কিছু কিছু পরিস্থিতি যেমন গর্ভাবস্থা, শিশুকাল, বৃদ্ধ বয়স, অতিরিক্ত স্থূলকায় শরীর তাছাড়া যাদের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস, প্রেসার বা হাইপার টেনশন, হার্ট ফেইলিয়র, কিডনি ফেইলর, যাদের দীর্ঘমেয়াদি রক্তরোগ রয়েছে তারা তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন এবং মৃত্যুর হারটা বেশি থাকে।
রেডিও তেহরান: তো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কি ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে এবং কোথায় নিয়ে যেতে হবে রোগীকে?
ডা. খসরুজ্জামান রনি: দেখুন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা কোনো রোগীর উচ্চমাত্রার জ্বর দেখা দিলে আর সেটি যদি ডেঙ্গু প্রবন অঞ্চল বা এরিয়ায় ভ্রমণের ইতিহাস থাকে সেইসব রোগীকে কিছু কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা আমরা যেটাকে সিবিসি বলি সেই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় রোগীর শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাচ্ছে কি না। অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যাচ্ছে কি না। হেমাটোকিট একটা উপাদান-কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টে সেটি কেমন-বেড়ে যাচ্ছে কি না? ইএসআর বাড়ছে কি না, সিআরপি বাড়ছে কি না এসব পরীক্ষা করে দেখা হয়।
রেডিও তেহরান: তো ডা. রনি আজ আর আমাদের হাতে সময় নেই। আবারও আপনার সাথে আগামী সপ্তায় কথা হবে। আপনি -বতর্মান সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটি চিন্তার জায়গা সৃষ্টি করেছে যে রোগটি-ডেঙ্গু জ্বর' সে বিষয়ে রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আর শ্রোতাবন্ধুরা! ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশাবাহিত ভাইরাস জনিত জ্বর। তো এই এডিস মশা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সবাই ভালো ও সুস্থ্য থাকুন।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৮