অক্টোবর ২৮, ২০২৩ ২০:৫৫ Asia/Dhaka

পাশ্চাত্যের বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণে স্বাধীনতা মানে রসনা-বিলাস, জৈবিক লালসা, অর্থ, পদ ও ক্ষমতার দাসত্ব হতে মুক্তি নয় বরং এসবের দাসত্ব করা তথা  অনৈতিকতা, চারিত্রিক অপবিত্রতা ও অসৎ আনন্দ বা কলুষতার মত ধ্বংসাত্মক খেয়ালিপনার মধ্যে ডুবে যাওয়া।

অন্যদিকে ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি অনুযায়ী স্বাধীনতা মানে পাপাচার ও অনাচারের সব বন্ধন ও ফাঁদগুলো থেকে মুক্ত হয়ে মানবীয় পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়া।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ কেবল শরীর-সর্বস্ব প্রাণী নয়, মানুষের রয়েছে আত্মা। তাই বস্তুগত তৃপ্তির পাশাপাশি মানুষ আত্মিক পরিতৃপ্তিরও মুখাপেক্ষী। আত্মিক পরিতৃপ্তির কাজগুলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এসব কাজের প্রভাব চিরস্থায়ী। অন্যদিকে বস্তুগত সুখ বা আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। পার্থিব জীবন শেষ হওয়ার পরই সেসবের আর কিছু বাকি থাকে না। অন্যদিকে পশ্চিমা দর্শনে পার্থিব বা  বস্তুগত ভোগই হল বাস্তব, আধ্যাত্মিকতা কোনো বাস্তব বা প্রধান বিষয় নয়। এ দর্শনে মূল্যবোধ বা নীতি-নৈতিকতাকে হতে হবে মানুষের রুচির আওতাধীন। অর্থাৎ মানুষের কাছে যখন যা ভালো লাগে সেটাই মুখ্য স্রস্টার ইচ্ছা কি তা জানার দরকার নেই বা তা বিবেচ্য বিষয় নয় মোটেই। 

পাশ্চাত্য এই বস্তুবাদী বা জড়বাদী দৃষ্টিতেই নারীকে দেখে এবং তাকে কেবল ভোগের মাধ্যম হিসেবে পুরুষের কাছে তুলে ধরে! অবশ্য এই কাজটা করছে নারীর স্বাধীনতা নামক সুন্দর শব্দের মোড়ক লাগিয়ে!  পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা মানে বিবেক ও যুক্তির দাবিকে পুরোপুরি পদদলন করে ব্যক্তির স্বার্থান্ধ ঝোঁক, লালসা ও মন্দ স্বভাবের পঙ্কিলতার মধ্যে ডুবে যাওয়া। অন্য কথায় স্বাধীনতা মানে বিবেককে স্তব্ধ করে দেয়া এবং পবিত্র প্রকৃতিকে মেরে ফেলা! পশ্চিমা সভ্যতা অনাচারের মধ্যে মানুষকে ডুবিয়ে রাখার নীল নক্সা নিয়ে নৈতিক মূল্যবোধ ও খোদায়ি মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে এবং মানুষকে মানবীয় গুণগুলোর ফল্গুধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করাই তাদের মূল লক্ষ্য।  

পশ্চিমা সংস্কৃতি চায় নারী নিজের যৌন আকর্ষণগুলো পরপুরুষের কাছে তুলে ধরুক এবং এ লক্ষ্যেই তারা যেন রূপচর্চা করেন ও নিজেদের রূপ বা সৌন্দর্যকে যত বেশি সম্ভব তুলে ধরেন পরপুরুষদের সামনে! পর-পুরুষদের চোখকে তৃপ্তি দিতে মানবীয় মর্যাদা খাটো বা বিলুপ্ত হলেও অসুবিধা নেই! কিন্তু এটা তো স্বাধীনতা নয়, বরং এটা হচ্ছে নারীর সম্মানকে ধুলোতে মিশিয়ে দেয়া! এটা হচ্ছে লোভী পরপুরুষদের কাছে নারীকে বিকিয়ে দেয়া। এসব কাজ হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ওপর জুলুম ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং নারীর অধিকার, সম্মান ও মর্যাদার ওপর চরম আঘাত ও অবমাননা।  

আংকেল টমস কেবিন বা টম চাচার কুটির নামে একটি উপন্যাস লেখা হয়েছিল প্রায় দুইশ বছর আগে। সেখানে তথা ওই কুটিরে নারীদেরকে অন্য কোথাও পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ বা উৎসাহ দেয়া হত! সেটা কি স্বাধীনতার জন্য? না, বরং নারীদেরকে সস্তা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের জন্যই! ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি মনে করেন পাশ্চাত্যের নানা শ্লোগান বা অধিকারের দাবিগুলোই এরকমই কৃত্রিম বা মেকি তথা প্রতারণাময়! 

নারীকে সস্তায় ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের সৌন্দর্যকে পরপুরুষদের জন্য সহজলভ্য ও উপভোগ্য করাও ছিল পাশ্চাত্যের কথিত নারী স্বাধীনতার উদ্দেশ্য! পাশ্চাত্য তাদের স্টাইলের কথিত নারী স্বাধীনতা অনেক মুসলিম দেশে ছড়িয়ে দিতে অনেকাংশে সক্ষম হয়েছে। ইসলামী বিপ্লবের দেশ ইসলামী ইরানেও এই শ্লোগান তথা নারী, জিন্দেগি ও আজাদি'র নামে  পাশ্চাত্য পশ্চিমাদের অনৈতিকতাগুলো, চারিত্রিক অপবিত্রতা তথা যৌন অনাচার ছড়িয়ে দিয়ে খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চায়। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে মানুষ দিনকে দিন ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে! কারণ মানুষ সত্যের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মানুষের প্রকৃতি সত্যকে ভালোবাসে! পাশ্চাত্যের মুক্ত-মনা বা সত্য-সন্ধানী মানুষেরা দেখছেন যে ইসলাম ধর্মের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত নারী স্বাধীনতা, প্রকৃত জীবন তথা মর্যাদাপূর্ণ জীবন বা জিন্দেগি এবং প্রকৃত স্বাধীনতা বা আজাদি। চারিত্রিক লাগামহীনতা বা বল্গাহীনতা মানে স্বাধীনতা নয়। পাশ্চাত্যের বহু শতক আগে ইসলাম মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কথা বলেছে।– 

ইসলাম নারীকে হিজাব বা শালীন পোশাকের সংস্কৃতির দিকে আহ্বান জানায় এ  কারণে যে যাতে মুসলিম নারীর দিকে কেউ অশালীন বা লালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে না তাকায় এবং নারীর সম্মান বা সম্ভ্রম বজায় থাকে। হিজাবের মাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক অধিকার হয় সুরক্ষিত।  মানবীয় মর্যাদা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে নারী ও পুরুষের মর্যাদা সমান। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম পুরুষের চেয়ে নারীকে বেশি অধিকার দিয়েছে এবং নারীর কাঁধ থেকে দায়িত্বের অনেক বোঝা উঠিয়ে নিয়েছে। কারণ নারীকে সন্তানের সুশিক্ষা ও প্রতিপালনের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

অথচ পশ্চিমা সংস্কৃতি নারীকে পরপুরুষের জন্য হিজাবহীন থাকতে দিয়ে তাকে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। পাশ্চাত্যে সামান্য মূল্যের একটি পণ্য বিক্রির জন্যও নারীর শারীরিক আকর্ষণকে বিজ্ঞাপন হিসেবে অপব্যবহার করা হয়। এটা কি অর্থের দাসত্ব নয়? যে স্বাধীনতায় ঈমান ও মানবীয় মর্যাদা থাকে না তা কি করে স্বাধীনতা হয়? ইসলাম নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত বা গবেষণার অধিকারকে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা দেখায়। অথচ পাশ্চাত্যে এখন থেকে প্রায় একশ বছর আগে নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, যেমন ভোটের অধিকারও ছিল না। 

ইসলাম নারীর চাকরি বা আয়-উপার্জনের যে কোনো সম্মানজনক ও নারীর জন্য উপযুক্ত পেশায় নিয়োজিত হওয়াকে স্বীকৃতি দেয়। তবে নারীর মাতৃত্ব ও সন্তান প্রতিপালনের কাজ তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশা ও দায়িত্ব যা পরিবারের সদস্যদের জন্য বয়ে আনে প্রশান্তি। ইসলাম নারীর সম্পদের মালিকানাকেও পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়। ইসলাম নারীর ওপর পুরুষের জুলুমকে ঘৃণা করে। মোটকথা প্রাকৃতিকভাবে নারী যত বেশি স্বাধীনতা ও অধিকার এবং সম্মান পেতে পারে তার সবই সর্বোচ্চ মাত্রায় কেবল ইসলাম ধর্মই নারীকে দিয়েছে। ইসলাম বলে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত! প্রকৃত মুহাম্মাদি ইসলাম নারীর সব অধিকারকে যেমন স্বীকৃতি দেয় তেমনি নারীর শালীন পোশাককেও তাদের সম্মানের জন্য অপরিহার্য  বলে মনে করে। # 

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ