নভেম্বর ০৮, ২০২৩ ২১:৪৩ Asia/Dhaka

সৃজনশীলতাকে মানুষের একটা দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। অবশ্য অনেকেই সৃজনশীল হওয়াকে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেন এবং এটাকে দক্ষতা হিসেবে গণ্য করতে চান না। আসলে এটা ঠিক নয়। সৃজনশীলতাকে দক্ষতা হিসেবে গণ্য করার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।

একটি কারণ হলো, সৃজনশীলতাকে অন্য অনেক দক্ষতার মতো অনুশীলন, পুনরাবৃত্তি ও শেখার মাধ্যমে আরও ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আরেকটি কারণ হলো, কোনো মানুষেরই সৃজনশীলতা শূন্যের কোঠায় নয় অর্থাৎ জিরো সৃজনশীলতা বলে কিছু নেই। তবে আমাদের সবার সৃজনশীলতা সমান নয়, একেক জনের সৃজনশীলতা একেক রকমের। আমরা হয়তো বিশ্বের সেরা সৃজনশীল ব্যক্তি হতে পারব না, কিন্তু এটা ঠিক যে, আমরা যদি শিক্ষা গ্রহণ করি এবং অনুশীলন করি তাহলে আমাদের সৃজনশীলতার পর্যায়কে উন্নত করতে সক্ষম হবো। সৃজনশীলতাকে দক্ষতা হিসেবে গণ্য করার অপর একটি কারণ হলো, সৃজনশীলতার অনেক উপাদান শৈশবে উপস্থিত থাকে এবং ধীরে ধীরে তা চাপা পড়ে যায়। এ জন্য সৃজনশীলতাকে শুধুমাত্র প্রতিভা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

সৃজনশীলতা মানে এটা নয় যে, আপনার আইডিয়া একদম মৌলিকই হতে হবে এবং একেবারে অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বশীল হয়ে উঠতে হবে বরং সৃজনশীলতা হলো, আপনার চারপাশ থেকে প্রয়োজনীয় আইডিয়া গুলো গ্রহণ করে নতুন একটা আইডিয়া সৃষ্টি করা। অন্য কথায় বলা যায়, এমন কিছু করা যা বর্তমান অবস্থার উন্নতি সাধন করে এবং নয়া দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করে।  এখন আমরা বোঝার চেষ্টা করব সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা? আরেকটি প্রশ্ন- বুদ্ধিমত্তার অধিকারী সব মানুষই কি সৃজনশীল? গবেষণায় দেখা গেছে, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে কো-রিলেশন বা সম্পর্ক দুর্বল অর্থাৎ মাত্র ২০ শতাংশ। কাজেই কারো আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তার স্কোরের উপর ভিত্তি করে মানুষের সৃজনশীলতার মাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয় এবং কম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লোকদের মধ্যেও অনেক উদ্ভাবনী লোক যেতে পারে। তবে কিছু মনোবিজ্ঞানীর মতে, সৃজনশীলতার জন্য কিছু বুদ্ধিমত্তা থাকা প্রয়োজন। আইকিউ স্কোর যাদের ১২০ এর ভেতরে তাদের বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার মধ্যে একটা ইতিবাচক সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ আইকিউ বেশি হলে সৃজনশীলতা বেশি থাকে।

কিন্তু কারো আইকিউ ১২০ এর উপরে হলে তার বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার মধ্যে আর সম্পর্ক দেখা যায় না। ফলে, এই উপসংহারে পৌঁছানো যেতে পারে যে, উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন শিশুরাও সৃজনশীলতার পরীক্ষায় কম নম্বর পেতে পারে। আবার কম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী শিশুরা সৃজনশীলতার পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেতে পারে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রত্যেক মানুষই তার ভেতরে লুকানো সৃজনশীলতা আবিষ্কার করতে পারে। এর সাথে শ্রেণী-পেশার কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু লোক মনে করে যে, সৃজনশীলতা কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিদের জন্য, যারা সঙ্গীতশিল্পী বা চিত্রশিল্পী। যদিও সৃজনশীলতা নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যখন বিশ্বাস করবেন যে, আপনার মাধ্যমে সবে ক্ষেত্রে সৃজনশীল হওয়া সম্ভব এবং এর সাথে আপনার সামাজিক অবস্থান, চাকরি ও সামাজিক সম্পর্কের কোনো যোগসূত্র নেই, তখন আপনি সব বিষয়কে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সক্ষম হবেন। এর মধ্যদিয়ে আপনি একজন সৃজনশীল ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেন।

সৃজনশীল ব্যক্তি হতে প্রথম ধাপে, আপনাকে যেকোনো ক্ষেত্রে নতুন উপায়ে কাজ করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে এবং নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করার মতো সাহস অর্জন করতে হবে। এটা ঠিক যে, কখনও কখনও আপনি ব্যর্থ হবেন, তবে মনে রাখবেন তারাই সফল হন যারা ব্যর্থ হওয়ার পর নিজের পথ চলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হন না এবং সেই পথে অটল থেকে সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করেন। যে সমস্ত মানুষ সবসময় তাদের দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীল হওয়ার চেষ্টা করে তাদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। এগুলো হলো- অনুপ্রেরণা, কৌতূহল, সহনশীলতা, অধ্যবসায়, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং উদারতা। সৃজনশীল মানুষ হওয়ার জন্য এসব গুণ থাকা জরুরি। সৃজনশীল মানুষেরা এমন সব পন্থার সন্ধানে থাকে যার মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তাগুলোকে নতুন কোনো আইডিয়ায় রূপান্তরিত করে বাস্তবে তা কাজে লাগাতে পারে। তারা যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সবগুলো দিক বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করেন। একজন সৃজনশীল ব্যক্তি অন্যদের চেয়ে মৌলিক চিন্তাভাবনায় অগ্রগামী থাকেন। অন্যেরা যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেন না, সৃজনশীল ব্যক্তিরা সেই অবহেলিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেও নতুন সাফল্য অর্জন করেন।

একজন সৃজনশীল ব্যক্তি বিভিন্ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন ফলাফল বের করে নিয়ে আসেন। এমন ব্যক্তিরা সহজেই নিজেদের চিন্তা ও মতামত প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ দেখান। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালান এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

সৃজনশীল ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট মতামতের গণ্ডির মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেন না এবং তাদের গোঁড়ামি থাকে না। তারা সর্বদা কৌতূহলী। তারা নতুন তথ্যের সন্ধানে থাকেন সব সময়। তাদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা ও মনোভাব থাকে প্রবল। আসলে অধিকাংশ সময় নতুন আইডিয়া বা ধারণা আসে তথ্যের কারণে। কোন একটা বিষয়ের উপর আপনি যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করবেন সেই বিষয়ে আপনার ভেতর থেকে তত বেশি নতুন ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ