নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ২৩:০২ Asia/Dhaka

মায়েদের ব্যক্তিত্ব স্নেহ-মমতা ও আত্মত্যাগের মহত্ত্বে ভাস্বর। নারীর মানসিক ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোই এমন যে সেসব বৈশিষ্ট্য শিশুদের প্রতিপালন ও শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক।

পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহার করাকে গুরুত্ব দেয় ইসলাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং রাসুলের আহলে বাইতের পর মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখেন বাবা-মা। আর বাবা ও মায়ের মধ্যে মায়ের অধিকার সন্তানের ওপর বাবার চেয়ে তিন গুণ বেশি।  

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির দৃষ্টিতে নারী বা মা হচ্ছে পরিবারের প্রধান স্তম্ভ। অন্যান্য অগুরুত্বপূর্ণ কাজ করার অজুহাতে যেসব মায়েরা সন্তানকে স্নেহময় পরিবেশে লালন-পালন থেকে বঞ্চিত করছেন তারা ভুল করছেন। অর্থাৎ যে কাজ তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা তাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব বা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে না। সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা ও দীক্ষার সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় ঘটিয়ে দেন মা ও বাবা। আর তা যদি যথাযথভাবে হয় তাহলে তা দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নকে সুরক্ষা দেয়। অন্য কথায় মায়ের হাতে সুযোগ্য সন্তান গড়ে তোলা হলে সমাজে দুর্নীতি ও অভাব থাকতে পারে না। শিশুদের শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হল মায়ের কোল।

মায়েরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর, ...শিশুদের শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হল মায়ের কোল

মায়েরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই আল্লাহ পুরুষদের মধ্যে মাতৃত্ব দান না করে তা দিয়েছেন নারীর মধ্যে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ, খোদাভীরু ও সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন কেবল শিক্ষিত ও ধার্মিক উদার মাতা। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ও সুশিক্ষা দেয়া মায়েদের জন্য সবচেয়ে বড় ও পবিত্র কাজ।  আমাদের জীবনের অনেক জটিল সংকট সমাধানের চাবি থাকে মায়েদের হাতে। দুঃখজনক বিষয় হল পশ্চিমা সভ্যতায় মায়েদের মাতৃত্বকে সমস্যা হিসেবে দেখা হয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি মায়েদেরকে তাদের সন্তান প্রতিপালনের মমতাময়ী ভূমিকা পালনে সহায়তা দিচ্ছে না। মা হওয়ার কারণে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দেয়া তো দূরে থাক এমনকি নারীদের মা হওয়ার অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে! এ বিষয়টি নারীদের ও মায়েদের ওপর পাশ্চাত্যের সবচেয়ে বড় জুলুম। 

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বিশ্বের ১৮৮টি দেশের সুরক্ষা আইন পর্যালোচনা করেছে এবং ঘোষণা করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ যেটি পারিবারিক সুরক্ষার দিক থেকে নিউ গিনির মতো পিছিয়ে পড়া দেশগুলির সমান।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যেখানে কর্মচারী এবং কর্মীদের বেতনসহ ছুটির কোন নিশ্চয়তা নেই। অবশ্য, তারা অবৈতনিক ছুটি নিতে পারে, তবে শ্রমিকদের বিনা বেতনে ছুটি কাটানো বেশ কঠিন। কারণ সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি। একজন কর্মজীবী মহিলাকে, তার নবজাতক সন্তানের সাথে তিন মাস থাকতে পারার জন্য, তার বেতন থেকে প্রায় দশ হাজার ডলার হারাতে হয়, অথচ প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকানদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় এক হাজার ডলারও নেই!  তাই বেতন ছাড়া ছুটির কথা তারা চিন্তাও করতে পারে না। আর এ জন্যই মার্কিন নারী শ্রমিকদের প্রায় এক চতুর্থাংশই সন্তান জন্ম দেয়ার দুই সপ্তাহ পরই কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন।  

শিশুদের জীবনের প্রথম মাসগুলিতে নিবিড় পরিচর্যা জরুরি এবং কিছু ক্ষেত্রে, এই সমস্যাটি জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। সরকারী পরিসংখ্যান বলছে যে উন্নত দেশগুলির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এবং এর কারণ হল আমেরিকান শিশুরা বেশিরভাগই একা থাকে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস (আকলা), ইউসিএলএ (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলস) এবং ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি (ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি) এর গবেষকদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পরিবারগুলোর জন্য বেতনসহ ছুটির সুবিধা চালু করা হলে নবজাতক শিশু মৃত্যুর হার বেশ কমে আসবে। পরিবারগুলো যদি নবজাতককে সঙ্গ দিতে পারে তাহলে তাদের মৃত্যুর হার ১৩ শতাংশ কমে যাবে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন সমাজে নারীকে মা হওয়ার পর সহায়তা দেয়া হয় না, বরং তাকে বেতনের একটা বড় অংশ হারাতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষরা বাবা হলে তাদের বেতন ছয় শতাংশ বেড়ে যায়, অন্যদিকে নারী কর্মী মা হলে তার বেতন চার শতাংশ কমে যায়!

পাশ্চাত্যে নারী শ্রমিকদের প্রতিবাদ মিছিল 

জ্যাসিকা ডিকলার ইংরেজি টিভি চ্যানেল সিএনবিসি*-তে মা হওয়া মহিলাদের বেতন হ্রাস এবং পিতা হওয়া পুরুষদের বেতন বৃদ্ধি সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলেছেন: "মাতৃত্ব অনেক সুবিধা নিয়ে আসে, তবে উচ্চ আয় সেই সুবিধাগুলির অন্যতম নয়।  একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পশ্চিমে প্রথম সন্তান জন্মের পর মহিলাদের আয় ৩০শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ একটি রিপোর্টে বলেছে যে মহিলাদের সম্ভাব্য পদমর্যাদা এবং পদোন্নতি তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের পরে পুরুষদের থেকে পিছিয়ে যায়।
জেসিকা ডেক্লার রিপোর্টে বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যারা পূর্ণ-সময়ে কাজ করে তারা সাধারণত তাদের পুরুষ সহযোগীদের প্রতি ডলারের বিপরীতে প্রায় ৮০ সেন্ট উপার্জন করে এবং কর্মরত মা ও বাবাদের বেতনের ব্যবধান আরও বিস্তৃত"।

২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক ন্যাশনাল উইমেন'স ল সেন্টারের আদমশুমারির তথ্যের এক পৃথক বিশ্লেষণ অনুসারে, বাবাদের দেওয়া প্রতি ডলারের বিপরীতে মায়েদের কেবল ৭১ সেন্ট দেয়া হয়েছিল, ফলে বছরে তারা ১৬০০০ ডলার  ক্ষতির শিকার হন। ব্রিটেনেও নারী কর্মীরা যখন মা হন তখন তাদের বেতন কমে যায়, অথচ পুরুষ কর্মীরা বাবা হলে তাদের বেতন বৃদ্ধি পায়। দেশটিতে পিতারা নিঃসন্তান পুরুষদের তুলনায় প্রায় বিশ শতাংশ বেশি আয় করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে নারীর সবচেয়ে বড় ও প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সন্তান প্রতিপালন, তাকে শিক্ষা দীক্ষা দেয়া ও তাকে ধর্ম বোঝানো। এসব কাজের পর অন্য কাজে সময় থাকলে তারা সেসবেও ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে সন্তানের জীবন রক্ষা ও তাদের শিক্ষা- দীক্ষা দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য কোনো কোনো সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখাও নারীর জন্য বেশ জরুরি কাজ হয়ে পড়ে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

ট্যাগ