জানুয়ারি ০৯, ২০২৪ ১৬:০৪ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবারের নির্বাচন: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক
  • বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য-ইত্তেফাক
  • গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেন সৌদি আরব, জাপানসহ ১৯ দেশের রাষ্ট্রদূত-প্রথম আলো
  • ভারতকে ডিস্টার্ব করতে বাংলাদেশে ঢুকেছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সতর্ক সংকেত-মানবজমিন
  • বৃহষ্পতিবার নয়, বুধবারই শপথ নব নির্বাচিতদের-যুগান্তর
  • সাক্ষাৎকার-শ্রী রাধাদত্ত নির্বাচনে অনিশ্চয়তা ছিল না, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল না-সমকাল

কোলকাতার শিরোনাম:

  • রামমন্দির নিয়ে অবস্থান কী?-সংবাদ প্রতিদিন
  • কষিয়ে চড়,সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়লো গুজরাটের, জেলে ফিরতেই হবে বিলকিসের ধর্ষকদের-গণশক্তি
  • ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র! ১৪ হাজার হোটেল বুকিং বাতিল ভারতীয়দের- আনন্দবাজার পত্রিকা
  • কোথায় শাহজাহান? কী বললেন দিলীপ ঘোষ?-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. প্রশাসনের সরাসরি সহায়তায় ভোট কারচুপি হয়েছে একথা বলেছেন জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু। এ নিয়ে শিরোনাম করেছে দৈনিক মানবজমিন। কী বলবেন আপনি?

২. ‘গাজাবাসীর তাজা রক্ত ইসরাইলের পতন ত্বরান্বিত করবে’- এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানি সেনাপ্রধান। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেন সৌদি আরব, জাপানসহ ১৯ দেশের রাষ্ট্রদূত-প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ মঙ্গলবার অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। গণভবনে গিয়ে এসব দেশের রাষ্ট্রদূতেরা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তাঁরা নিজেদের দেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-১ (উপসচিব) এম এম ইমরুল কায়েস আজ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শেষ হাসিনা

মুরুব্বিদের কথা শুনলে দেশ আর চলা লাগবে না: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বিএনপি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল। মুরুব্বিদের কথা শুনলে বাংলাদেশ আর চলা লাগবে না। এটাই হলো বাস্তবতা। যদি সৎ পরামর্শ হয়, সেটা ভালো কথা। নির্বাচন হতে দেবে না, এসব হুমকি-ধামকি গেল কোথায়? দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি।বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় কিছু যায়-আসেনি। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাদের নেতা-কর্মীরা এখন হতাশায় ভুগছে।তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো দলের থাকা না থাকায় গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। যারা নির্বাচন নিয়ে খেলতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে, দু-চারটা দল নির্বাচনে না এলে কিছু হয় না।

এ সম্পর্কে ইত্তেফাকের অন্য একটি শিরোনাম করা হয়েছে এরকম-ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবারের নির্বাচন: প্রধানমন্ত্রী

বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের পর এবারের নির্বাচন সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। দুই-চারটা দল ভোটে না এলে সমস্যা ছিল না। ইতিহাসে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য-ইত্তেফাক/মানবজমিন

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দেশ দুইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দেশ দুইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।

 মানবজমিন এ সম্পর্কিত অন্য এক  খবরে লিখেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মিশন পাঠায়নি। বেসরকারি  ব্যক্তিদের বক্তব্য তাদের। দৈনিকটির অন্য এক শিরোনামে লেখা হয়েছে, নতুন সরকারকে জাতিসংথ মানবাধিকার প্রধান-গতিপথ পাল্টান, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্ন্তভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। আর এক মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার নিজের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

ভারতকে ডিস্টার্ব করতে বাংলাদেশে ঢুকেছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সতর্ক সংকেত-ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত মাসে বিশ্বের বহু অংশের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ব্যাপকভাবে এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। এই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে শুধু সে কারণে নয়। এটা হয়েছে এ অঞ্চলে ভৌগলিক অবস্থান ও ভূরাজনৈতিক কারণে। এ জন্য বহুবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ শুধু ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীই নয়, একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তারা চীনেরও ঘনিষ্ঠ অন্যতম অংশীদার। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরোধী দল অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক মূল্য অবশিষ্ট নেই, যার অধীনে নির্বাচন হতে পারে। এ জন্য তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কিছু দেশ। যদিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে, তখন কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন কিভাবে হচ্ছে তা নিয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে চীন ও রাশিয়া।

প্রকৃতপক্ষে পরোক্ষে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে।

যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন 

এটা বিস্ময়কর কোনো ঘটনা নয় যে, বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশ বাংলাদেশ ইস্যুতে জড়িয়ে একে অন্যকে হুমকি দিচ্ছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রের এমন একটি অবস্থানে যে, এতে তাদেরকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কাছেই সুপার অত্যাবশ্যকীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নেই শুধু সহায়তা করছে চীন এমন নয়। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে চীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ। গত দশকে শেখ হাসিনার সরকারকে অস্ত্র, রশদ, সামরিক ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান সরবরাহ দিয়েছে চীন। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ। 

 কৌশলগত সমুদ্রবন্দর: বাংলাদেশে চীনের অর্জন

এর অর্থ হলো মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে তাদের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হতে কৌশলগতভাবে বাধ্য করছে চীন। এক্ষেত্রে চীনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতের কাছে বাংলাদেশের নোঙরে পৌঁছা, যাতে তারা নয়া দিল্লির ওপর দৃষ্টি রাখতে পারে। মেগা অবকাঠামো উন্নয়নের নামে চীনের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউনান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের বন্দরের সুযোগ পাওয়া, যা ভারতের খুব কাছে। 

বিরক্ত যুক্তরাষ্ট্র

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে অধিক পরিমাণে উদ্বিগ্ন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শক্তির লড়াই চলছে। সেটা হলো ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সমর্থন দিয়ে কে তাদের ঘনিষ্ঠ হতে পারে। এটা আসলে দক্ষিণ চীন সাগর, আন্দামান সাগর ও ভারত মহাসাগরের কিছু এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করায় শক্তির লড়াই। 

বাংলাদেশের ভারসাম্য রক্ষা

মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অগণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোটের অভিযোগে বাংলাদেশের নির্বাচনে যখন কোনো প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র, তখন বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পরিষ্কার ক্ষমতায় ফিরছেন শেখ হাসিনা। সুতরাং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্য কূটনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের পাহাড় তৈরির সূচনা বিন্দু হচ্ছে বাংলাদেশে চীনের প্রবেশ। ভারতের কাছে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেকোনো মূল্যে তারা ভারতের সঙ্গে ‘গ্রেট’ বন্ধুত্ব বজায় রাখবে। ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষতি করতে বিদেশি কোনো শক্তিকে তার মাটি ব্যবহার করতে দেবে না। বাংলাদেশ আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, বাংলাদেশে চীনের ভূমিকাকে দেখা উচিত একটি উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে। ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদার নয় চীন। কিন্তু বাস্তবে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যখন তার ‘গিয়ার’ পরিবর্তন করে তখন সে চীনকে আর ম্যানেজ করতে পারে না।

(অনলাইন ওয়ান ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত)  

বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেখেছে জাতিসংঘ, আমলে নিয়েছেন মহাসচিব-মানবজমিন

বাংলাদেশে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা দেখেছে জাতিসংঘ। কী ঘটছে অব্যাহতভাবে তা অনুসরণ (ফলো) করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও তিনি আমলে নিয়েছেন। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোটো নিনো সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন। মহাসচিব পরিস্থিতি আমলে নিয়েছেন বলতে তিনি বুঝিয়েছেন ভিন্ন মতাবলম্বীদের এবং সমালোচকদের কণ্ঠরোধ, বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি। সোটো নিনো বলেন, আমি বুঝাতে চাইছি ভিন্ন মতাবলম্বী, সমালোচকদের কণ্ঠরোধ এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সব অভিযোগের বিষয় আমলে নিয়েছেন মহাসচিব। তিনি সব পক্ষকে সব রকম সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান- বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মতো পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এই নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিজয় দাবি করেছেন। জাতিসংঘ কি বিশ্বাস করে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে সোটো নিনো ওইসব কথা বলেন।

ভোটের হার নিয়ে সন্দেহ, প্রশ্ন  ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ৮০টি আসনে। এর ৪৬টিতে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। -প্রথম আলো

 দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া ভোটের হারকে বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করছেন। 

নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ গতকাল সোমবার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোটের হার নিয়ে কারও সন্দেহ থাকলে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। 

ভোট গ্রহণ চলার সময় গত রোববার তিন দফা ভোটের শতকরা হার ঘোষণা করেছিল ইসি। সেই হিসাব অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ ভোট পড়ে। এরপর বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিল ইসি। তখন বলা হয়েছে, সব জায়গার হিসাব পাওয়া যায়নি। ভোটের হারে কিছু হেরফের হতে পারে। 

বিকেল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল শুরুতে বলেন, ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ। পরে তাঁকে পাশ থেকে একজন সংশোধন করে বলেন, সংখ্যাটি ৪০ শতাংশ হবে। সিইসি তখন ভোটের হার ৪০ শতাংশ হতে পারে বলে জানান। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত হিসাব নয়। বাড়তে পারে, না–ও পারে। এই হিসাব অনুযায়ী ভোট গ্রহণের শেষ এক ঘণ্টাতেই ১৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তবে সর্বশেষ গতকাল ইসি প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়। এই হার অনুযায়ী ভোট গ্রহণের শেষ এক ঘণ্টাতেই ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। 

সারা দিনের ভোটের চিত্রের সঙ্গে ভোটের হার মিলছে না। এ নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

শেষ সময়ে ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরই অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিলেন না। এজেন্ট না থাকার কারণেও অনেক জায়গায় জয়ী প্রার্থীদের পক্ষে বেশি ভোট দেওয়া হয়েছে। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ৮০ থেকে ১০০টি আসনে। 

জাল ভোট ঠেকানো, ভোটে সিল মারাসহ নানা অনিয়ম প্রতিরোধের কাজগুলো সাধারণত এজেন্টরাই করে থাকেন। সিইসি ঢাকায় নিজেও ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকার বাইরে কারও এজেন্ট পাননি। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রতিপক্ষের এজেন্টকে টাকা দিয়ে নিজের পক্ষে নিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। অনেক আসনে টাকার ব্যবহার ও প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে।

প্রার্থীদের সন্দেহ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৩ আসনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতা ফিরোজুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তিনি ইসির ভোটের হার নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আসনে বেলা তিনটা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু বিকেল চারটায় যখন ভোট শেষ হয়, তখন তিনি জানতে পারেন, তাঁর আসনে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ভোটের হার নিয়ে তাঁর প্রশ্ন রয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার যে ২৬টি আসন জাতীয় পার্টি (জাপা) পেয়েছিল, এর মধ্যে ময়মনসিংহ–৮ আসনে জাপার প্রঅর্থী ছিলেন ফখরুল ইমাম। তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আসনে শেষ এক ঘণ্টায় ভোটের হার অনেক ব্যবধানে বাড়িয়ে ২৭ শতাংশ দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। সারা দিনে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের অভাব বা ভোটারশূন্য অবস্থার চিত্রের সঙ্গে ভোটের হারকে মেলাতে পারছেন না ফখরুল ইমাম। 

রংপুরের একটি আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ভোটের দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোতে তাঁর পোলিং এজেন্টদের জয়ী প্রার্থীর পক্ষ থেকে বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া হয়। ফলে তাঁর এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রের ভেতরে এজেন্ট কেনার ঘটনা এবার তাঁর কাছে নতুন বিষয় মনে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের এজেন্ট না থাকায় জয়ী প্রার্থীর এজেন্টরা সিল মারাসহ নানা অনিয়ম করতে পারেন। তাঁর আসনের মতো অনেক জায়গায় এমনটা হয়েছে বলে তাঁর ধারণা। 

৫০ শতাংশের বেশি ভোট 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ৮০টি আসনে। এর মধ্যে নৌকা ৬৯টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০টি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১টিতে জিতেছেন।

নির্বাচনে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়া ৪৬টি আসনে জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান বিপুল। কার্যত ওই সব আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। সবগুলোতেই জিতেছেন নৌকার প্রার্থী।

রংপুরের একটি আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ভোটের দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোতে তাঁর পোলিং এজেন্টদের জয়ী প্রার্থীর পক্ষ থেকে বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া হয়। ফলে তাঁর এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রের ভেতরে এজেন্ট কেনার ঘটনা এবার তাঁর কাছে নতুন বিষয় মনে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের এজেন্ট না থাকায় জয়ী প্রার্থীর এজেন্টরা সিল মারাসহ নানা অনিয়ম করতে পারেন। তাঁর আসনের মতো অনেক জায়গায় এমনটা হয়েছে বলে তাঁর ধারণা। 

৫০ শতাংশের বেশি ভোট 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ৮০টি আসনে। এর মধ্যে নৌকা ৬৯টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০টি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১টিতে জিতেছেন।

নির্বাচনে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়া ৪৬টি আসনে জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান বিপুল। কার্যত ওই সব আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। সবগুলোতেই জিতেছেন নৌকার প্রার্থী।

ওই আসনে জাসদের প্রার্থী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভোটে জটিলতা হয়েছে। দুপুর ১২টার পর থেকে যে যেভাবে পারে, ভোট নিয়েছে।

তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার পরও ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়া আসনের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ–১০ আসনটি। এই আসনে ভোট পড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাহমি গোলন্দাজ পেয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৯৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. নাজমুল হক পেয়েছেন ৪ হাজার ২৭৬ ভোট।

বান্দরবানে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। এই আসনে বীর বাহাদুর উশৈ সিং ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৭১ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির এ টি এম শহীদুল ইসলাম পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৬১ ভোট। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আসনটিতে ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

ঢাকায় ভোটের হার কম

ঢাকা জেলার ২০টি আসনের কোনোটিতেই ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েনি। ২০টির মধ্যে ১৪টিতেই ভোটের হার ছিল ২৫ শতাংশের কম। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ঢাকা–২০ আসনে, ৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম হারে ভোট পড়েছে ঢাকা–১৫ আসনে, ১৩ শতাংশের সামান্য বেশি।

টাকার ব্যবহার

এবার যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের অনেকে প্রচুর টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার কর্মীদের দিয়ে ভোট বাড়াতে অর্থ ব্যবহার করেছেন অনেক প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা পরাজিত প্রার্থীদেরই অনেকে এমন নানা অভিযোগ করেছেন। নির্বাচন কমিশন ভোটারপ্রতি ব্যয় ১০ টাকা সীমিত করে দিলেও কোন প্রার্থী কত টাকা ব্যয় করেছেন, তার তদন্ত হচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সারা দিনের ভোটের চিত্রের সঙ্গে ভোটের হার মিলছে না। এ নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

সাংবাদিক কামাল আহমেদের মতামত কলামে প্রথম আলো লিখেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক মাসে বহুবার একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ৭০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে, তিনি আবার নির্বাচিত হবেন। 

ওই জরিপ গত আগস্টে প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। বহুল আলোচিত সেই জনমত জরিপে রেকর্ড ৯২ শতাংশ ভোটার জানিয়েছিলেন, তাঁরা ভোট দিতে চান। 

এখন যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উল্লেখ করা ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটকে সঠিক বলে গণ্য করা হয়, তাহলেও ভোট দিতে আগ্রহী অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যাননি। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। কেননা, ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে যেখানে ভোটের হার ছিল ২৬ শতাংশ, সেখানে এক ঘণ্টায় আগের সাত ঘণ্টার অর্ধেকের বেশি ভোট পড়া শুধু অস্বাভাবিক নয়, সম্ভব কি না—সেটাও প্রশ্ন। 

এই যে বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোট দিতে না যাওয়া, তার কারণ যে বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য নির্বাচন বর্জনকারীদের হরতাল কর্মসূচি, এমন দাবি কেউই করেননি, করবেনও না। 

কারণ, হরতাল আহ্বানকারীরা কেউ হরতাল কার্যকর করার কোনো চেষ্টাই করেননি। তা সে মাঠে মিছিল-পিকেটিংয়ের মাধ্যমে হোক, অথবা বোমাবাজি বা আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমেই হোক। 

এবারের বর্জনপীড়িত একতরফা নির্বাচনের মতো নির্বাচন এর আগে আরও দুবার হয়েছে—১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। 

প্রথমটি করেছিল বিএনপির সরকার, যখন জামায়াতে ইসলামী তাদের সঙ্গী ছিল না, তারা ছিল অন্যতম বিরোধী দল। তখন প্রধান বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। আর ২০১৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে, তখন বিরোধী শিবিরে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। 

ওই দুই নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তার ইতিহাসটা একটু ঝালিয়ে নিলে এবারের নির্বাচনের সঙ্গে মিল-অমিলগুলো সহজেই বোঝা যাবে।

এই যে বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোট দিতে না যাওয়া, তার কারণ যে বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য নির্বাচন বর্জনকারীদের হরতাল কর্মসূচি, এমন দাবি কেউই করেননি, করবেনও না। 

কারণ, হরতাল আহ্বানকারীরা কেউ হরতাল কার্যকর করার কোনো চেষ্টাই করেননি। তা সে মাঠে মিছিল-পিকেটিংয়ের মাধ্যমে হোক, অথবা বোমাবাজি বা আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমেই হোক। 

এবারের বর্জনপীড়িত একতরফা নির্বাচনের মতো নির্বাচন এর আগে আরও দুবার হয়েছে—১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। 

প্রথমটি করেছিল বিএনপির সরকার, যখন জামায়াতে ইসলামী তাদের সঙ্গী ছিল না, তারা ছিল অন্যতম বিরোধী দল। তখন প্রধান বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। আর ২০১৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে, তখন বিরোধী শিবিরে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। 

ওই দুই নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তার ইতিহাসটা একটু ঝালিয়ে নিলে এবারের নির্বাচনের সঙ্গে মিল-অমিলগুলো সহজেই বোঝা যাবে।

২০১৪ সালে অন্যদের বর্জনের কারণে ১৫৩ আসনে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। 

তবু ভোটের দিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করেছিল। ৬ জানুয়ারির সমকাল পত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে, সেদিন ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা হয় এবং ২২ জন প্রাণ হারান। ১৪৬ আসনে ভোট দেখানো হয় ৪০ শতাংশ। 

এবারে নির্বাচনের দিন যত সহিংসতা হয়েছে, তাতে নির্বাচন বর্জনকারী কোনো দলের ভূমিকার কথা কেউ বলেননি। বিএনপি, জামায়াত কিংবা বামপন্থীরা কেউ কোনো সহিংসতার আশ্রয় নেননি। 

যতটা সহিংসতা হয়েছে, তার সবই আওয়ামী লীগের নিজেদের উপদলীয় সংঘাত। এবারও মৃত্যু ঘটেছে, কেউ কেউ আহত হয়েছেন।

কিন্তু এ সবই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার অর্গল খুলে দেওয়ার পরিণতি। 

নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর চেষ্টায় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার চেষ্টাও কম হয়নি। ভোট দিতে না গেলে নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুবিধা, বিভিন্ন ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকির কথা বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। 

ভোটের দিন বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের আনতে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। 

বিদেশি পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর সংবাদদাতা লিখেছেন, ঢাকাতেই একটি বস্তির কাছের ভোটকেন্দ্রে তিনি অনেক ভিড় দেখেছেন, যাঁরা তাঁকে বলেছেন, তাঁরা প্রতিশ্রুত বিরিয়ানির প্যাকেটের জন্য অপেক্ষা করছেন। কয়েকটি জায়গায় টাকা বিতরণের ভিডিও-ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। 

এত সব প্রণোদনার পরও ভোটের হার কম হলো কেন? তারও একটা উত্তর মেলে আইআরআইয়ের জরিপে। ৬৯ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, তাঁরা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সমর্থন করেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৪ শতাংশ আর সর্বদলীয় সরকারের অধীনে ২৫ শতাংশ। 

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যত বিতর্ক ও অভিযোগ আছে, স্পষ্টতই সেগুলোর একটা প্রভাব দেশের বেশির ভাগ মানুষের ওপর পড়েছে। বর্জনপীড়িত একতরফা নির্বাচন এবং সব দলের অংশগ্রহণের পরও নির্বাচনকে দলীয় সরকার কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তার তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তিতে কে অংশ নিতে চায়?

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার অন্যতম কারণ নিশ্চয়ই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বর্জন, কেননা ভোটারদের সামনে বিকল্প অনুপস্থিত। 

তবে সেটাই একমাত্র কারণ নয়। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের আসন ভাগাভাগি ও নিজেদের ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে মানুষের ভোটকে কার্যত মূল্যহীন করে তোলা হয়েছে। এই বিষয়টি কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। 

নির্বাচনের যে ফলাফল সবার জানা, সেই ফলাফলকে বৈধতা দেওয়ার দায় তাঁরা কেন নেবেন? আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা তো দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের রয়েছেই।

কোনো বিচারেই এ নির্বাচনকে প্রতিনিধিত্বশীল বা অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। 

ব্যালটে যদি পাশ্চাত্যের কিছু দেশের মতো কোনো প্রার্থীই পছন্দ নয় লেখা ঘরে টিক চিহ্ন দেওয়ার বিধান থাকত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি হতো। 

আওয়ামী লীগ সর্বশেষ ২০০৮ সালে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, তাতে ভোট ছিল ৮৭ শতাংশ। 

আইআরআইয়ের জরিপের আরও দুটি তথ্য এখানে স্মরণ করা ভালো। একটি হচ্ছে বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন বেড়ে ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল এবং ৫৩ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, তাঁরা মনে করছেন, দেশ ভুল পথে চলেছে। 

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণে করতে গিয়ে একতরফা নির্বাচন যে আমাদের নতুন রাজনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংকটের প্রকৃতি এখনই প্রকট না-ও হতে পারে, কিন্তু অনুভূত হতে বেশি সময় লাগবে না।

বিরোধী দল বলে সংসদে কিছুই ছিল না গত ১০ বছর, যে দলটি ওই ভূমিকায় অভিনয় করত, সেটিও এবার প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। যাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সদস্য। সুতরাং, দ্বাদশ সংসদ যে একদলীয় হবে, তা নিয়ে আর কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। 

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পরপর তৃতীয়বারের মতো ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাঁদের মধ্যে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তা শিগগিরই নিরাময় হবে বলে মনে হয় না। 

আওয়ামী লীগের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে ভালো করে জানা উচিত যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন তাদের সরকারের বিরোধিতা থেকে নিরুৎসাহিত করে না, বরং তাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে এবং সাংগঠনিক ঐক্যকে দৃঢ় করে। বিএনপি ও তার সহযোগীরা ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবি ছাড়ারও কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।

ক্ষমতাসীন দল টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে হয়তো কিছুটা আত্মতৃপ্ত বোধ করতে পারে; কিন্তু গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ কখনোই সুখকর হয় না। 

১৯৯৬ সালের (১৫ ফেব্রুয়ারি) একতরফা নির্বাচন যে সংকটের জন্ম দিয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক আপসরফা এবং দ্রুতই আরেকটি নির্বাচনের প্রয়োজন হয়েছিল।

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর সংকট সমাধানের যে প্রয়োজন ছিল, তা পূরণ হয়নি বলেই সংকট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। 

এখন সে সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে এখন অন্তত উচিত হবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করা। 

  প্রশাসনের সরাসরি সহায়তায় ভোট কারচুপি হয়েছে: ইনু-মানবজমিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের হারের জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন কুষ্টিয়া-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সোমবার (৮ জানুয়ারি) হারের কারণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি।

ইনু বলেন, সারা দেশে নির্বাচন একটা পর্যায়ে হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় ভোট কারচুপি হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার এলাকাও এর মধ্যে পড়েছে। প্রশাসনের সরাসরি সহায়তায় ভোট কারচুপি হয়েছে। হারের জন্য আমি প্রশাসনকেই দায়ী করছি। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার এলাকার ১৮টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি করেছে।

তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রে ২৯০০ ভোট পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আর নৌকা পেয়েছে মাত্র ৮৫টি ভোট। এতেই বিষয়টি স্পষ্ট। এমন আরও ১৮টি উদাহরণ তার কাছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ তাকে সমর্থন করেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ করেছে। আর বাকি অংশ প্রকাশ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছে।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

মালদ্বীপ

‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র! ১৪ হাজার হোটেল বুকিং বাতিল ভারতীয়দের-আনন্দবাজার পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়।

ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।ভারতের এক জনপ্রিয় ভ্রমণ সংস্থাও মলদ্বীপ যাওয়ার সমস্ত বিমানের টিকিট বুকিং বাতিল করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওই সংস্থার মালিক জানিয়েছেন, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং সহানুভূতি থেকে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।যাঁরা বুকিং বাতিল করছেন, তাঁদের দাবি, টাকা যাচ্ছে যাক। আগে দেশ। দেশের অপমান কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না বলেও কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে মতপ্রকাশ করেছেন।

অযোধ্যায় রামমন্দিরের সূচনায় যাবেন না শুভেন্দু-আনন্দবাজার পত্রিকা

আগামী ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে। কিন্তু সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে অযোধ্যায় যাবেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বরং দলীয় নির্দেশ মেনে তৈরি হচ্ছে তাঁর পশ্চিমবঙ্গের কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে ওই দিন অযোধ্যায় না গিয়ে নিজ নিজ স্থানেই রাম প্রদীপ জ্বালানোর কথা বলেছেন। আর দলীয় নেতা-কর্মীদের একই নির্দেশ দিয়েছেন।

রামমন্দির নিয়ে অবস্থান কী?-সংবাদ প্রতিদিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ চলছে। আগামী ২২ জানুয়ারি মহাআড়ম্বরে সেই মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে হিন্দুত্বের জিগির তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। কিন্তু এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ধর্মীয় বিভাজনের খেলায় মাততে নারাজ। তিনি সাফ বলছেন, রাম মন্দির আসলে বিজেপির গিমিক।

জয়নগরের সভা থেকে মমতা বললেন, “কালকে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, রামমন্দির (Ram Mandir) নিয়ে আপনার কী বক্তব্য, যেন আর কোনও কাজ নেই। একটাই কাজ। আমি বললাম ধর্ম যার যার নিজের। উৎসব কিন্তু সবার। আমি সেই উৎসবে বিশ্বাস করি যে উৎসব সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শেখায়। তোমরা করছ করো না। কোর্টের নির্দেশে করছ। এটা লোকসভার আগে একটা গিমিক শো করার চেষ্টা। তোমরা করো কিন্তু তাই বলে অন্য ধর্মের মানুষকে অবহেলা করা, এটা কারও কাজ নয়।”

মমতার স্পষ্ট ঘোষণা, “বাংলা শান্তির জায়গা, বাংলা কোনও ভেদাভেদ করে না। আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি, যতদিন তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে, বাংলার বুকে ভাগাভাগি করতে দেব না। এনআরসির সময় দেখেছেন কী আন্দোলন করেছিলাম, CAA’র সময় দেখেছেন কী আন্দোলন করেছিলাম। অনেক অত্যাচার আমাদের লোকের উপর হচ্ছে।”

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৯

ট্যাগ