জানুয়ারি ১২, ২০২৪ ১৭:১১ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ১২ জানুয়ারি শুক্রবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর-ইত্তেফাক
  • নতুন সরকারের বড় চিন্তা অর্থনীতি- প্রথম আলো
  • সরকারের সামনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে: ওবায়দুল কাদের-মানবজমিন/যুগান্তর/ইত্তেফাক
  • এক দল থেকে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা: যা ছিল ‘কার্যত’, এখন তা ‘আইনসিদ্ধ’-ডেইলি স্টার বাংলা
  • 'ডামি প্রার্থী, ডামি এমপি, ডামি শপথ', আরেকটি 'মেকি' সরকারের যাত্রা শুরু-যুগান্তর

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ভুয়ো নথি দিয়ে চাকরি! কয়েকশো শিক্ষককে বাতিল করতে যোগী আদিত্যনাথের পদক্ষেপ, কাড়া হবে বেতনও- আনন্দবাজার পত্রিকা
  • বিজেপির চক্রান্তে সুজিত-তাপসের বাড়িতে ইডি, দাবি কুণালের, ‘শীতের পোশাক সঙ্গে নিন’, কটাক্ষ শুভেন্দুর-সংবাদ প্রতিদিন
  • ইডিকে হেনস্থা নয়,পুলিশকে কড়া বার্তাই দিল হাইকোর্ট-গণশক্তি
  • লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু নির্বাচন কমিশনের-আজকাল

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি।

স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা-প্রথম আলোর এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, রেকর্ড পঞ্চম এবং টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের শপথ নেওয়ার এক দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা প্রথমে আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।পরে মন্ত্রিসভার নতুন সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নতুন সরকারকে নানামুখী চাপ সামলাতে হবে: ওবায়দুল কাদের-ইত্তেফাক

রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক- নতুন সরকারের সামনে এ তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংসদের ভেতরে-বাইরে নানামুখী চাপ সামাল দিতে হবে আওয়ামী লীগ সরকারকে। এ চ্যালেঞ্জের বেশিরভাগ হচ্ছে বিশ্ব সংকটের বাস্তবতার ফল। এসব থেকে দেশকে মুক্ত করা সহজ না।

ইত্তেফাকের অপর একটি শিরোনাম এরকম-বাংলাদেশ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক প্রতিবেদনে যা আছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার দমন-পীড়ন জোরদার করে ।

নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলের সদস্যদের গণগ্রেপ্তার করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি দিয়ে বিক্ষোভের জবাব দিয়েছে। বিরোধী দলীয় সদস্যদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটেছে, যার ফলে বিরোধীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) ৫০ লাখ সদস্যের অর্ধেকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের সম্মুখীন।

২০১৩ সালে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচার ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এ এস এম নাসিরউদ্দিন ইলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে এবং ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহারের জন্য সমালোচনার মুখে পড়ার পর সেপ্টেম্বরে সরকার এর পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (সিএসএ) চালু করে। নতুন আইনটি ডিএসএর অনেক আপত্তিজনক উপাদান ধরে রেখেছে।

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও দায়মুক্তি :

বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০০টিরও বেশি গুম করেছে। যদিও কিছু লোককে পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিছু লোককে আদালতে হাজির করা হয়েছিল, কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' মারা গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের পরিবারকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে।

বাকস্বাধীনতা :

নির্বাচনের আগে উন্মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্কের শর্তকে ক্ষুণ্ণ করে সরকারের নীতি ও অনুশীলনের অবাধে সমালোচনা করার জন্য সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন। নিউজরুমগুলো আরও স্ব-সেন্সরশিপের দিকে চালিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে একটি নিবন্ধে 'জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ' করার অভিযোগে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে কর্তৃপক্ষ। একই ঘটনায় সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডিএসএ'র অধীনে মামলা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে প্রথম আলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের 'শত্রু' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার বক্তব্যের পর প্রথম আলোর কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়।

শহিদুল আলম ও রোজিনা ইসলামের মতো বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে ডিএসএ'র অধীনে অভিযোগ রয়েছে। নতুন 'সিএসএ'তে পূর্ববর্তী 'ডিএসএ'র অনেক অপমানজনক উপাদানকে ধরে রাখা হয়েছে, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচকদের অপরাধী ও কারাগারে পাঠানোর জন্য কর্মকর্তাদের বিস্তৃত কর্তৃত্ব দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২১ ধারা, যা 'মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে যে কোনও ধরণের প্রচার বা প্রচারণা'কে অপরাধ বলে গণ্য করে।

শ্রম অধিকার :

গত ২৫ জুন শ্রমিক সংগঠকদের ওপর হামলার পর কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি আদায়ের জন্য একটি কারখানা পরিদর্শনে গেলে শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শহিদুল হত্যাকাণ্ড সামাজিক নিরীক্ষা এবং প্রমাণপত্রের অপর্যাপ্ততা তুলে ধরেছে, যা ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা কারখানায় কাজের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করে। স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠিত করার চেষ্টা করা শ্রমিকদের হুমকির পর্যাপ্ত প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থতার বিষয়টিও উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন ও সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের সংগঠন এবং সম্মিলিত দরকষাকষির স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনও শ্রম আইন সংশোধন করতে পারেনি- যার মধ্যে ম্যানেজারদের দ্বারা ইউনিয়নবিরোধী কৌশল এবং স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠকদের উপর আক্রমণ বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত।

ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত নভেম্বরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৭৫ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১১৩ করে সরকার। বিক্ষোভকারীরা ২০৮ মার্কিন ডলার বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল, যা এখনও বাংলাদেশের বাসযোগ্য মজুরির চেয়ে অনেক কম।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির প্রকোপ বেশি হওয়া সত্ত্বেও ২০০৬ সালের শ্রম আইন কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত বা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে না। কর্তৃপক্ষ এখনও আইএলও সহিংসতা ও হয়রানি কনভেনশন (সি ১৯০) অনুমোদন করতে পারেনি, যেখানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ সকল ধরনের সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে ব্যাপক সুরক্ষা প্রয়োজন।

নারী অধিকার :

পারিবারিক সহিংসতার জন্য সুরক্ষা বা সেবা পেতে বা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নারীদের খুব কম আশ্রয় রয়েছে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি, যেখানে ১৮ বছরের আগে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে বাল্যবিবাহকে বৈধতা দেওয়ার লজ্জাজনক গৌরব অর্জন করেছে। মেয়েরা ব্যাপক যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয় এবং খুব কম আশ্রয় ও সুরক্ষা পায়। বাংলাদেশে অনুমান করা হয় যে, পুলিশ কর্তৃক তদন্ত করা ধর্ষণের ১ শতাংশেরও কম মামলায় আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

যৌন অভিমুখীতা এবং লিঙ্গ পরিচয় :

যদিও বাংলাদেশ হিজড়াদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের লিঙ্গ পরিচয় আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আপত্তিকর মেডিকেল পরীক্ষা করতে বাধ্য করে। গত ১২ আগস্ট চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার আট হিজড়াকে নগ্ন করতে বাধ্য করে পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে জানায়, আটককৃতরা হিজড়ার ছদ্মবেশে লোকজনের কাছে চাঁদাবাজি করেছে। বাংলাদেশে সমকামী আচরণ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এলজিবিটি লোকেরা পুলিশের কাছ থেকে সুরক্ষা ছাড়াই হয়রানি এবং সহিংসতার মুখোমুখি হয়।

প্রতিবন্ধী অধিকার :

গত জুনে সমাজকল্যাণ ভাতা ৮৫০ টাকা (৭ মার্কিন ডলার) থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা (৪৫ মার্কিন ডলার) করার দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও মাসিক ভাতা বাড়ানো হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের জুনে উত্তরাঞ্চলে অভূতপূর্ব বন্যার সময় প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের সুরক্ষা, পরিষেবা এবং অবকাঠামোর অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

শরণার্থী :

বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে। শরণার্থীরা শিক্ষা, জীবিকা এবং চলাচলের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা দোকানমালিকদের হয়রানি ও উচ্ছেদসহ তাদের দোকান ধ্বংস করে পুনরায় শুরু করে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরিত করেছে, যেখানে তারা খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি, বন্যা, পানিবাহিত রোগ, ডুবে যাওয়া এবং সাইক্লোন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আহত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা প্রদান, নিরাপত্তা বজায় রাখা বা দায়ীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। শরণার্থীরা পুলিশ, আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২৩ সালের রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে দাতাদের অনুদানের জন্য চাওয়া ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক-তৃতীয়াংশেরও কম পেয়েছে। তহবিলের ঘাটতির কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছে, যা জনপ্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে মাত্র ৮ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। তারা ক্যাম্পে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও জীবিকা নিশ্চিত করতে টেকসই সমাধানকে সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানায়। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, চার লাখেরও বেশি শরণার্থী শিশুর মধ্যে তিন লাখ মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি শেখানোর ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু তাদের শিক্ষা স্বীকৃত নয়। সরকার একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার জান্তার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা জবরদস্তি ও প্রতারণার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয়াদি :

২০২৩ সালের ৪ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে সকল রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। গত মার্চে জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং এ বছরের নির্বাচনকে সামনে রেখে মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের অব্যাহত হয়রানির ঘটনায় আমি দুঃখিত।

গত মে মাসে মার্কিন সরকার একটি নতুন নীতি ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দল ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন কংগ্রেস সদস্য। ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ ১৭০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক হয়রানি স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য চলমান হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেন, দেশের মানবাধিকার উন্নয়ন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা করেন এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বয়স্কদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বয়স্কদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট 'বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকারের ঘটনা' শীর্ষক একটি জরুরি রেজুলেশন পাস করে অধিকারের নেতাদের মুক্তি এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের নিন্দা জানায়। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় অধিকারের নেতৃবৃন্দসহ মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

নতুন সরকারের বড় চিন্তা অর্থনীতি- প্রথম আলো

সরকারের যত চ্যালেঞ্জ

সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।

ঠেকাতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন।

ঠিক করতে হবে ডলারের আসল দর।

স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে সংস্কার।

নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম অর্থনীতি। আর এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কাজটি কতটা পারবেন, সেটাই এখন প্রশ্ন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর যখন টানা তৃতীয়বার দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগ, তখনো উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু ব্যাংক খাতের অবস্থা হয়ে পড়ে আরও নাজুক—আর্থিক কেলেঙ্কারিও বেড়ে যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে, খেলাপি ঋণ ছাড়িয়ে যায় এক লাখ কোটি টাকা। 

তবে সব সময়কে ছাড়িয়ে গেছে এবার। এখন অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকই নিম্নমুখী। সংকট সব ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভাষায়, অর্থনীতি এখন তলানিতে। সেই তলানি থেকে অর্থনীতিকে তুলে আনাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর অর্থনীতি তলানিতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি সরকারের ভুল নীতিও অনেকখানি দায়ী। 

সুতরাং টানা চতুর্থ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। 

এরপরের কাজ হচ্ছে অর্থনীতিকে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনা। এ জন্য সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ যে উচ্চ প্রবৃদ্ধির যুগে প্রবেশ করতে পেরেছিল, তার প্রধান কারণ সামষ্টিক অর্থনীতি ছিল স্থিতিশীল। অথচ সেটাই এখন হুমকির মধ্যে। 

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ শেষ। বাকি আছে আর ছয় মাস। সরকারের আরেক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই ছয় মাসের অর্থনীতি মেরামত। গতানুগতিক পথে এই সংকট মিটবে না। তাই অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আগামী বাজেট পর্যন্ত অর্থনীতির জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া প্রয়োজন। আর সেটাই বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেবে।

দেশে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।

দেশে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ে ঘাটতির কারণে ডলারের দর বেড়েছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ক্রমেই কমছে রিজার্ভ, যা এখন ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। আর প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ ধরলে তা ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, আর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আরও কম—মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির নাম আর্থিক হিসাবের ঘাটতি, যা ৫৪০ কোটি ডলার।

জাতীয় সংসদে এখন ব্যবসায়ীদের আধিক্য। ২০০৮–এর নির্বাচনে সংসদে ব্যবসায়ীদের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের দুই মেয়াদে ছিল যথাক্রমে ৫৯ ও ৬২ শতাংশ। আর এবার তা আরও বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

রাজনৈতিক অবস্থা, একতরফা নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, আদালতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাস্তি—এর কোনো কিছুই বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবমূর্তি আগের চেয়ে ইতিবাচক হয়নি। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার অবস্থায়ও বাংলাদেশ নেই। সুতরাং ভরসা হচ্ছে কয়েকটি দেশ থেকে নেওয়া সরবরাহকারী ঋণ ও সংস্কার করতে পারলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বহুজাতিক সংস্থার ঋণ। আর দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে দূর করতে হবে ডলার ও জ্বালানির সংকট। কমাতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার খরচ। এ কাজে গত ১৫ বছরে সরকার খুব একটা সফল হয়নি। সুতরাং এই চ্যালেঞ্জ দীর্ঘদিনের। আগামী অর্থবছর থেকে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে এই চ্যালেঞ্জ সরকারকে নিতেই হবে।

রাহুমুক্ত করতে হবে ব্যাংক খাত

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সেই খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) হিসাব করে বলছে, গত ১৫ বছরে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে লুটপাট হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে। দেশের ব্যাংক খাত এখন পরিণত হয়েছে অর্থ আত্মসাতের ক্ষেত্র হিসেবে। আর প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে ব্যাংক খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি হয়ে পড়েছে দুর্বল।

নতুন মেয়াদে সরকারের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নানা ধরনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সামলানো, যাতে রাহুমুক্ত হয় ব্যাংক খাত। দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক খাত নিয়ে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেটাও করা প্রয়োজন মনে করছেন তাঁরা।

তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আরও বেশ কিছু খাতে সংস্কার করতে হবে। যেমন সরকারের ঋণ নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা, সরকারি ব্যয়ের গুণমান বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ করা ইত্যাদি।

আইএমএফ ও সংস্কার

রিজার্ভের ক্রমাগত পতনের মুখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। এর দুটি কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন বছরে আরও দুই কিস্তি ঋণ পাওয়ার কথা। এ জন্যও সংস্কার করতে বাধ্য সরকার। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের করছাড় কমানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা, ভর্তুকি হ্রাস, খেলাপি ঋণ কমানো, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করা, ব্যাংক খাতের তদারকিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সুদহারের কাঠামো ঠিক করা; রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি। 

তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আরও বেশ কিছু খাতে সংস্কার করতে হবে। যেমন সরকারের ঋণ নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা, সরকারি ব্যয়ের গুণমান বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ করা ইত্যাদি। সুতরাং বাস্তবায়ন করতে হবে, এমন কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ১৫ বছর ধরে বিশেষ একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তারাই এখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এ পরিস্থিতিতে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আনিসুল হকের কলাম

৭ জানুয়ারি অন্যকিছু কি আশা করেছিলেন-প্রথম আলো

৭ জানুয়ারি প্রায় সবাইকে খুশি করেছে। বিএনপি খুশি—বেশির ভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি। মঈন খান খুশি—জনগণ ভোট বর্জন করেছে। ওবায়দুল কাদের খুশি—জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বতন্ত্ররা খুশি—তাঁরা বিপুলসংখ্যায় জয়লাভ করেছেন। নির্বাচন কমিশন খুশি—ভোট নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা খুশি—আপ্যায়ন ভালো, ব্যবস্থা সুন্দর, পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। জনগণ খুশি—তিনজন মন্ত্রী, বেশ কজন সংসদ সদস্য হেরে গেছেন। আওয়ামী লীগ খুশি—নামে-বেনামে সবাই আওয়ামী লীগ, এমন সংসদ তারা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

 [শুধু জাতীয় পার্টির মন খারাপ—আসন কমেছে। শুধু ১৪ দলের মন খারাপ—ফজলে হোসেন বাদশা, হাসানুল হক ইনু হেরে গেছেন।]

এই শিরোনামটা এভাবেও পড়তে পারেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সবার পূর্ব-অনুমান, ধারণা, শঙ্কা মিলে গেছে।

ডামি ফলাফল, ডামি এমপি, ডামি শপথ, বললেন রিজভী-প্রথম আলো/যুগান্তর

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রতারণার ডামি নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এই নির্বাচনকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার, ডামি এজেন্ট, ডামি পর্যবেক্ষক, ডামি ফলাফল, ডামি এমপি, ডামি শপথের মধ্য দিয়ে গতকাল ওয়ান–ইলেভেনের কৃষ্ণতম দিবসে একদলীয় ফ্যাসিবাদের হুংকারে আরেকটি কৃষ্ণতম মেকি সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। ভুয়া ভোট শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনার নিশিরাতের সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গেজেট জারি, তড়িঘড়ি শপথ ও নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকার গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে, এক অজানা ভীতি-আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাঁকে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অচিরেই এই সরকার চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে। কারণ, এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিপীড়নের সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বমানবতার শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এদের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও উৎপীড়নের কাহিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’

বাংলাদেশে ভোটের হার, ভারতীয় বিশ্লেষকের বক্তব্য ভাইরাল-মানবজমিন

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বলছে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, আন্তর্জাতিক সূত্র ও সাংবাদিকেরা বলছেন ২৭ শতাংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থী আমাদের পরিচিত অনেকে বলেছেন, ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। নির্বাচনের দিন ফাঁকা রাস্তা দেখা গেছে, হরতালের মতো। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকেই বলে থাকেন, গ্রামের তুলনায় শহরে ভোট পড়ে বেশি। আমার চেনাজানাদের মধ্যে খুব কম মানুষই ভোট দিয়েছেন, ১০ শতাংশের বেশি তো ভোটই দেয়নি।

ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার এ বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, ভারতের সঙ্গে চীনের ব্যবস্থা মেলে না। কিন্তু চীনের সঙ্গে তো ভারত কাজ করেছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। মোটামুটিভাবে ভারতের স্বার্থ যে সরকার দেখবে, সেটাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গণতন্ত্র’ এখন ভারতের কাছে মুখ্য নয়।

ভারতের কাছে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা আমাদের নিরাপত্তার জায়গাটা দেখেছেন। সে ক্ষেত্রে ভারত সরকার তো জোরদার সমর্থন পাচ্ছে, সেই দিক থেকে ভারত গণতন্ত্রের বিষয়টা দেখে না। আমরা যাঁরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখাপড়ায় আছি বা করাই, তাঁদের হয়তো অন্য ভাষ্য থাকবে।

আমার নিজের কথা যদি বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিভ্রম ঘটেছে, আদৌ যদি এটাকে গণতন্ত্র বলা যায়।

দুই বছর আগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভঙ্গুর। সেই অবস্থা আরও খারাপ হলো। এইখানে যেটা আমি দেখছি কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের অধীনে যা যা হয়ে থাকে, তা–ই চলছে। অন্তত দু-তিন বছর ধরে তো বটেই।

এক দল থেকে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা: যা ছিল ‘কার্যত’, এখন তা ‘আইনসিদ্ধ’-ডেইলি স্টার বাংলা

নিরঙ্কুশ বিজয়ে পথ যতটা সহজ হবে বলে মনে হয়, বাস্তবে ততটা নাও হতে পারে। বিজয় স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল ও আলোকদীপ্ত, কিন্তু নিরঙ্কুশ বিজয় অনিবার্যভাবেই অন্ধকারও নিয়ে আসতে পারে।

পঞ্চমবারের মতো ও টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীর এটিই দীর্ঘতম মেয়াদ। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে বাংলাদেশের সবকিছুই তাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় তার যোগ্যতা সম্পর্কে এবং একইসঙ্গে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেই সম্পর্কে।

নীতি গ্রহণ থেকে শুরু করে পরিকল্পনা, প্রকল্প ও এর বাস্তবায়ন, ব্যষ্টিক থেকে সামষ্টিক, ফ্লাইওভার তৈরি থেকে কাঁচামরিচ সংরক্ষণ, বৃহত্তর পরিসর থেকে একেবারে খুঁটিনাটি—আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়তে না চাইলে সবকিছুতেই তার প্রত্যক্ষ সম্মতি থাকতে হবে। প্রত্যেকটি মেগা প্রকল্প এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ তারই প্রাপ্য।

জনশ্রুতি আছে, ফায়ার সার্ভিসের এক টিম লিডার ঢাকায় একটি বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর সময় একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন, তিনি ও তার দল প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিকনির্দেশনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে এর থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফুরন্ত কর্মক্ষমতা, অসংখ্য বিষয়ে আগ্রহ এবং তার সর্বময় কর্তৃত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকদের মতে, তিনি এর যোগ্য, কারণ তার আগে কেউ বাংলাদেশে এত বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সক্ষম হননি। তাদের এই দাবি ভিত্তিহীন নয়।

গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন নির্বাচনের ওপরও শেখ হাসিনার কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তার আরেকটি উদাহরণ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন—বিরোধী দল বর্জন করায় যেটা তার জন্য আরও সহজ হয়ে যায়। বেশিরভাগ বিষয়ে আগে থেকেই রফা হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের দিন তেমন কোনো বাধা-বিঘ্নের ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তারা শেখ হাসিনার কৌশলী চিন্তা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম না এবং নির্বাচন বর্জন করায় তাদেরকে যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে চড়া মূল্য চুকাতে হবে, সে বিষয়েও খুব সামান্যই ভেবেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়তাবাদী কার্ডের (ন্যাশনালিসটিক কার্ড) ব্যবহার ছিল সাহসিকতাপূর্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত। তিনি দক্ষতার সঙ্গে বড় শক্তিগুলো মোকাবিলা করেছেন। তার সমর্থনে চীন ও ভারতকে এক কাতারে নিয়ে আসা এমন একটি বিষয়, যা থেকে অনেক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতা শিক্ষা নিতে পারেন।

সবকিছুই যে শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে আছে, তা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২২টি আসনে। আর ৬২টি আসনে জিতেছে 'বিদ্রোহীরা', যাদের মধ্যে ৫৮ জন আজীবন আওয়ামী লীগ করেছে এবং তাদের এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলেরও সম্মতি ছিল।

আওয়ামী লীগের আশীর্বাদে ১১টি আসনে জিতেছে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া, সার্বিক পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রতীক বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক 'নৌকা' নিয়ে নির্বাচন করে দুটি আসনে জিতেছে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীরা।

অর্থাৎ, মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ঘোষিত ২৯৮টির ফলাফলে ২৯৩ আসনে আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের 'অনুমোদিত' বা 'আশীর্বাদপুষ্ট' প্রার্থীরা জিতেছেন।

আনুপাতিক হারে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আরও ৫০টি আসনের কথা বিবেচনা করলে, এগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা খুব সহজেই আরও অন্তত ৪৫টি আসনে নিজের লোক পাবেন। কাজেই সর্বমোট ৩৫০ আসনের সংসদের ৩৩৮টি আসনই তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সেক্ষেত্রে এটাকে কি কোনোদিক দিয়েই একদলীয় শাসন ছাড়া অন্যকিছু হিসেবে অভিহিত করা যাবে? এই মাত্রাতিরিক্ত সাফল্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নিজস্ব দুর্বলতাও রয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ২৩টি কোনো আসন পায়নি। এই দলগুলোর বেশিরভাগ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এর থেকে প্রমাণ হয় যে তাদের কোনো জনসমর্থন ছিল না। তাদেরকে নির্বাচনে আনা হয়েছে শুধুমাত্র এটা দেখানোর জন্য যে, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।

নির্বাচনে একমাত্র যে দলটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারত, সেই বিএনপি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার আগেই পুলিশি অ্যাকশনে পর্যুদস্ত হয়ে যায়। একের পর এক মামলা, নেতাদের গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচারে সাজা ও ভয়ভীতিতে দলটির এই অবস্থা হয়ে যায়।

বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তাদের ১৩ হাজার ৪২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দায়েরকৃত ৪৯৯টি মামলার এফআইআরে দলটির ৫২ হাজার ৩৪২ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে একটি ঘটনাতেই। সেটি হলো—রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার শ্রদ্ধাভাজন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৯ অক্টোবর থেকে এখনো কারাগারে আছেন এবং বারবার আবেদন করার পরও তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।

তবে নির্বাচন বর্জনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপির প্রান্তিক হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

এবারের নির্বাচনের ফলাফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শেখ হাসিনার সুপ্রিম লিডার হয়ে ওঠা। অনেক বছর ধরেই তিনি এই ভূমিকায় আছেন। কিন্তু এই নির্বাচনে তার এই অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে। যা আগে ছিল 'কার্যত', তা এখন 'আইনসিদ্ধ'।

ভারতে নির্বাসন থেকে ১৯৮২ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকেই তিনি তার ক্ষমতা সুসংহত করছেন। প্রথমে দলের ভেতরে এবং তারপর সরকারে। আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনীতিকরণ ও তাদের বড় আকারে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এবং সবশেষে সারাদেশে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিরুদ্ধমতকে সম্পূর্ণভাবে দমন করে তিনি হয়ে উঠেছেন সুপ্রিম লিডার।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল এটাই যে, সংসদে দু-তিনজন ছাড়া এমন কোনো সদস্য নেই যিনি কোনো না কোনোভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ নন। দীর্ঘদিন ধরেই যে সংসদ তার নীতি বাস্তবায়নের রাবার স্ট্যাম্প ছাড়া আর কিছুই নয়, সেই সংসদে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব থাকছে না এবং তার ছাড়া আর কারও কণ্ঠ সেখানে প্রতিধ্বনিত হবে না।

গত সংসদে বিএনপির সাত জন সংসদ সদস্য অন্তত ছিলেন। তারা সুযোগ পেলেই সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখতেন। তবে এবার সেইটুকু বিরোধিতাও আর থাকবে না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই একই সুরে গাইবে।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এবারের নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় এতটাই নিরঙ্কুশ যে এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিরোধী দলীয় নেতা কে হবেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী সবচেয়ে বড় গ্রুপটি তথাকথিত 'স্বতন্ত্র'দের, যারা সবাই আওয়ামী লীগে ফিরতে চান। হয়তো শেখ হাসিনা তাদেরকে 'বিরোধী দল' গঠনে উৎসাহিত করতে পারেন এবং নেপথ্যে থেকে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। এভাবেই তিনি আইনসিদ্ধভাবে সংসদ নেতা ও কার্যত বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। তার এই অবিশ্বাস্য অর্জনে রয়েছে বিপুল বিপদের ঝুঁকি। সংসদ সম্পূর্ণভাবে তার ইচ্ছাধীন হয়ে পড়ছে এবং গণতন্ত্রকে পাঠানো হলো ভেন্টিলেশনে, যেখানে অক্সিজেনের নিয়ন্ত্রণ থাকল একজনের হাতে।

নিজেদের পিঠ চাপড়ানো ও অভিনন্দন জানানোর বিষয়গুলোকে এক দিকে সরিয়ে রাখলে বলা যায়, নির্বাচনে কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির মাঝে বিজয়ী দলের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। ধরা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগের ভোট-ব্যাংক মোট ভোটারের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মতো। সেই হিসাবে ৪১ দশমিক আট শতাংশ ভোটার উপস্থিতি (নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী) থেকে এটাই দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের ভোটাররাই কেবল ভোট দিয়েছেন এবং অনুমিত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নিরপেক্ষ ভোটার ও বিএনপির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার (আগের নির্বাচন থেকে পাওয়া তথ্যমতে) এই নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৯ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনকে এড়িয়ে গেছেন। অর্থাৎ, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে বর্তমান সরকার জয়ী হয়েছে, এমন অত্যুৎসাহী দাবিগুলো আরও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শেখ হাসিনা এখন এমন একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন যে দেশে যা কিছুই ঘটবে, তার জন্য এককভাবে তিনিই দায়ী হবেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে, তার সবটাই শেখ হাসিনার দোরগোড়ায় এসে হাজির হবে এবং সংশ্লিষ্ট সব দায়ও তার দিকেই আসবে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থপাচার, জ্বালানিতে অসহনীয় ভর্তুকি ও বিশ্ব বাজারের অস্থিরতায় আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়া—এসব সমস্যা আগামী মাসগুলোতে আমাদেরকে প্রভাবিত করবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেও দিয়েছেন যে, আইএমএফের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব নয়। জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা সংস্থাটির শর্ত মোতাবেক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখতে পারিনি। হতে পারে, এটাই শর্ত লঙ্ঘনের একমাত্র বা শেষ ঘটনা নয়, সামনে আরও উদাহরণ তৈরি হবে।

গত দশকে, বিশেষত গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি লাগামহীনভাবে বেড়েছে এবং এ বিষয়টিকে অস্বীকার করা উটপাখির মতো মাটিতে মাথা গুঁজে থাকা ছাড়া কিছুই নয়। ক্রমাগত বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার 'রক্ত' শুষে নিচ্ছে এবং এর জন্য দায়ী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অব্যাহতভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়ে সার্বিকভাবে এই খাতের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এর ফলে পুরো অর্থনীতিই এখন ঝুঁকির মুখে।

সুশাসন ভয়াবহভাবে উপেক্ষিত হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেদের নীতিমালা ও জবাবদিহিকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে নিজের পছন্দমতো ব্যবহার করার ফলে নিঃসন্দেহে আমাদের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ফাটল ধরতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন অর্থনীতিতে। আমরা তাকে অনুরোধ জানাই, তিনি যেন উপরে উল্লেখ করা সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে তার নতুন মেয়াদ শুরু করেন।

নিরঙ্কুশ বিজয়ে পথ যতটা সহজ হবে বলে মনে হয়, বাস্তবে ততটা নাও হতে পারে। বিজয় স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল ও আলোকদীপ্ত, কিন্তু নিরঙ্কুশ বিজয় অনিবার্যভাবেই অন্ধকারও নিয়ে আসতে পারে।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

সংবাদ প্রতিদিনের শিরোনাম- সোনিয়া ফোন করলে কংগ্রেসকে বাড়তি আসন! ‘সৌজন্য’ দেখাতে রাজি তৃণমূল। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, 

বাংলায় দুইয়ের বেশি আসনে লড়ার ক্ষমতা নেই কংগ্রেসের। তবে সোনিয়া গান্ধী যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ফোন করেন তাহলে বাড়তি একটি আসন সৌজন্যের খাতিরে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। ইঙ্গিত মিলল তৃণমূল সূত্রে। তবে, ওই বাড়তি আসনের জন্য মেঘালয় এবং অসমে তৃণমূলকে আসন ছাড়তে হবে। শর্ত চাপাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।

ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন রফা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে এআইসিসি। ইতিমধ্যেই একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফেলেছে কংগ্রেসের জোট কমিটি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি জোট আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। যা হচ্ছে ব্যাক চ্যানেলে।

রাহুলের ন্যায় যাত্রার ‘যোদ্ধা’ জোগাড়ে ভরসা মিসড কল, নয়া অভিযান কংগ্রেসের-সংবাদ প্রতিদিন

মিসড কল দিলেই রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ভারত ন‌্যায় যাত্রার সঙ্গী হওয়া যাবে। তাদের নাম দেওয়া হবে ‘ন‌্যয় যোদ্ধা’। একটি পুস্তিকা তার জন‌্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে এই যাত্রার যাবতীয় তথ‌্য রয়েছে। বৃহস্পতিবার তা সামনে এনে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন এআইসিসির নেতারা।৯৮৯১৮০২০২৪ এই নম্বরে মিসড কল দিলেই তার যাবতীয় তথ‌্য মিলবে। হওয়া যাবে যাত্রার অংশীদারও।

প্রস্তুত ছিল একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র, কথা বলার কাতর আবেদন জানান ইমরান, ফোনই ধরেননি মোদী!-আনন্দবাজার পত্রিকা

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে দিনটি বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। শুধু প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নন, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিকে মনে রেখেছে গোটা দেশ।

ওই দিন পড়শি পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছিল ভারত। পুলওয়ামা হামলার জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে সশস্ত্র অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে উড়িয়ে দেওয়া হয় জইশ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি।বালাকোটে ভারতের এই হামলা ইসলামাবাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। ভারতের তরফে আরও বড় কোনও হামলার আশঙ্কা করেছিল ইমরান খান সরকার।সেই আতঙ্কেই নাকি ঘুম উড়ে গিয়েছিল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তড়িঘড়ি তিনি দিল্লিতে ফোন করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন ইমরান।পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া তাঁর বই ‘দ্য অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবল্‌ড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’-এ বালাকোট হামলার সময়ের প্রত্যক্ষ কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।ওই বইতেই বিসারিয়া জানিয়েছেন, সে দিন রাতে পাকিস্তান ভারতের তরফে বড়সড় আক্রমণের আশঙ্কা করেছিল। সে দেশের গোয়েন্দারা নাকি খবর পেয়েছিলেন, পাকিস্তানের দিকে অন্তত ন’টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে রেখেছে নয়াদিল্লি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ১২

ট্যাগ