ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka

ইসলাম নারীর অধিকার ও সম্মানের সর্বোচ্চ রক্ষক। ইসলাম নারীর প্রতি বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না যেমনটি পোষণ করা হয়েছে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা চিন্তাধারায়।

ইসলাম বিশ্বে একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করেছে। সেই বিপ্লবের অন্যতম বড় দিক হল নারী ও পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ইসলাম নারী ও পুরুষের শারীরিক ও মানসিক পার্থক্যকে অস্বীকার করে না। কিন্তু ইসলাম মনে করে যে মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা সমান। ইসলাম নারীকেও চিন্তাশীল ও স্বাধীন সত্ত্বা বলে মনে করে। তাই কোনো নারীকে জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো কাছে বিয়ে দেয়াকে ইসলাম হারাম করেছে। ইসলাম নারীকে দিয়েছে মালিকানার অধিকার ও সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকারসহ নানা অধিকার।

 কিন্তু নারীর শারীরিক পার্থক্যের কারণে ইসলাম তাকে পুরুষের মত কঠিন কষ্টসাধ্য বাইরের কাজ করতে তেমন একটা উৎসাহ দেয় না। একান্ত বাধ্য না হলেই নারীর উচিত নয় সন্তান প্রতিপালন ও সন্তানদের শিক্ষার কাজ  বা ঘরের কাজ ফেলে রেখে বাইরের কাজ করা। তবে এসব কাজ করার পরও যদি হাতে বাড়তি সময় ও মানসিক এবং শারীরিক শক্তির যোগান থাকে তাহলে নারীও মানানসই পরিবেশে আয় উপার্জনের কাজে বাইরেও যেতে পারে। 

ইসলামী বিধান অনুযায়ী একটি পরিবারে স্বামীই সন্তান ও স্ত্রীর ভরণ পোষণের জন্য দায়িত্বশীল। যখন প্রাচীন যুগে তথা ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীদেরকে মানুষ বলে মনে করা হত না, তখন পবিত্র কুরআনে নারীকেও পুরুষের মতই মানবীয় সত্ত্বার অধিকারী মানুষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশ্চাত্যে বিংশ শতকের প্রথম দিকেও নারীর ভোটাধিকার ছিল না।  নারীকে সস্তা শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানোর জন্যই সেখানে নারী স্বাধীনতার কথা প্রচার করা হয়েছে।  অন্যদিকে ইসলাম ও কুরআনের সংস্কৃতি অনুযায়ী নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক এবং তারা একে-অপরের জন্য প্রশান্তির মাধ্যম।

ফিলিস্তিনের একদল সংগ্রামী নারী 

ইসলাম নারীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছে। ইসলাম-প্রদত্ত এসব অধিকারের মধ্যে রয়েছে মালিকানার অধিকার, মোহরানার অধিকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অংশ নেয়ার ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদি। এভাবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে মর্যাদা ও স্বাধীনতা। ইসলাম পরিবার ব্যবস্থাকে মজবুত করার ব্যবস্থা নিয়েছে মাতৃত্ব ও সন্তান প্রতিপালনকে গুরুত্ব দিয়ে এবং স্বামীর যত্ন নেয়াকেও গুরুত্ব দিয়ে। অন্যদিকে পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থা নারীকে এসব বিষয়ে বিমুখ করে পরিবার ব্যবস্থাকেই নড়বড়ে করে দিয়েছে। 

ইসলাম সংসারের জীবিকা অর্জনের দায়িত্ব কেবল স্বামী তথা পুরুষের ওপরই অপরিহার্য করেছে। স্ত্রী এ ব্যাপারে দায়িত্ব মুক্ত। অর্থাৎ সংসারের জন্য আয় উপার্জন করতে স্ত্রী বাধ্য নন। তিনি যদি আয় করেন কোনোভাবে তাহলেও তা তার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে নিজের খুশিমত ব্যবহারের অধিকার রাখেন। 

 ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীকে যেমন কেবল ভোগের সামগ্রী বলে মনে করা হত পশ্চিমা সভ্যতায় এখনও নারীকে সে দৃষ্টিতেই দেখা হয়। ইসলামর দৃষ্টিতে মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত। ইসলামের দৃষ্টিতে সমান অধিকার মানে এই নয় যে পুরুষরা ট্রাক চালায় বলে নারীকেও ট্রাক চালানোর অধিকার দিতে হবে বা নারীকেও রিকশা চালানোর অধিকার দিতে হবে পুরুষের মতই। বরং ইসলাম নারীকে তার সম্মান ও শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার আলোকে দায়িত্ব পালন করতে বলে। নারীরা ছোট্ট শিশুদের দেখাশুনা যত ভালোভাবে করতে পারে পুরুষদের পক্ষে তত ভালোভাবে শিশুদের দেখাশুনা সম্ভব নয়। নারীর কোমল প্রকৃতির কারণে মহান আল্লাহ কেবল নারীকেই সন্তান গর্ভে ধারণের ক্ষমতা দিয়েছেন। পুরুষদের সেই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। 

ইসলাম নারীদেরকে পড়াশুনার ও শিক্ষা অর্জনের অধিকার দিয়েছে পুরুষের মতই।  ইসলামী ইরানের উচ্চ শিক্ষায় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ছাত্রী ও নারীদের সংখ্যাই বেশি। ইসলামী ইরানের নারী সমাজ সামাজিক ও রাজনৈতিক তৎপরতায়ও অংশ নিচ্ছেন। 

ইসলামী ইরানের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছিলেন, নারীর সবচেয়ে বড় কাজ হল সুসন্তান গড়ে তোলা। এই কাজ নবীদের কাজের সমতুল্য। নবীরাও এসেছেন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।  

ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর যেমন স্বামীর ওপর অধিকার রয়েছে তেমনি স্ত্রীর ওপরও স্বামীর রয়েছে অধিকার। নারী ও পুরুষেরা যত বেশি ইসলামী চরিত্র অর্জন করবেন ততই তাদের সংসারগুলো হয়ে উঠবে সুখ ও প্রশান্তির কানন। নারী ও পুরুষ উভয়কেই লোভ-লালসা ও স্বার্থপরতা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দান করতে হবে, শুধু তা-ই নয় বাস্তবেও সেসব পালন করে দেখাতে হবে। তাই এটা স্পষ্ট অধিকার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই নারী ও পুরুষ সুখ-সমৃদ্ধি এবং পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম। কবি নজরুলের ভাষায় বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
   

ট্যাগ