মার্চ ০৫, ২০২৪ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

মানুষের জীবনের লক্ষ্য বা টার্গেট নির্ধারণ খুবই জরুরি। আর এই লক্ষ্য নির্ধারণেরও আগে যা আরও বেশি জরুরি বা অপরিহার্য তা হল আদর্শ ব্যক্তিত্ব বা নেতৃত্ব বেছে নেয়া।

আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরিণামদর্শী ও প্রধানত পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাবের কারণে যুব সমাজ অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব বেছে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের দেশের অনেক তরুণী বা যুবতীকে প্রশ্ন করা হলে তাদের কেউ কেউ বলেন যে অমুক চিত্র-নায়িকা বা মডেল-তারকা তথা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হলেন তার আদর্শ এবং তিনি বড় হয়ে সে রকম কিছু হতে চান! অন্যদিকে মাইকেল এইচ হার্টের মত পশ্চিমা চিন্তাবিদ বা লেখকও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন মহানবী (সা) ছিলেন সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী মহামানব। তাই তরুণ ও যুব সমাজের সামনে অনুকরণীয় আদর্শ তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হবে সর্বকালের সেরা মহামানব তথা মহানবীর জীবনের নানা দিকের যথাযথ ও বহুমুখী বিশ্লেষণের মাধ্যমে। মহানবী (সা) কেবল জীবনের কোনো একটি অংশ বা দিকের জন্য আদর্শ ছিলেন না, বরং তিনি শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও সব পর্যায়ের জন্যই সর্বোত্তম আদর্শ তথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উসওয়াতুন হাসানা।   

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেমন ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ, তেমনই ছিলেন একজন পরিপূর্ণ আদর্শ যুবক ৷ পৃথিবীতে যত ভালো গুণ আছে এর সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর মধ্যে ৷ এককথায়, তিনি ছিলেন সর্বগুণের আধার৷রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা কালাম-৪)। ফরাসি লেখক আলফ্রেড তার তুর্কির ইতিহাস বইয়ের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, ‘দার্শনিক, বক্তা, ধর্ম প্রচারক, যোদ্ধা, আইন রচয়িতা, ধর্মমতের ও প্রতিমাবিহীন ধর্ম পদ্ধতির সংস্থাপক মুহাম্মদ (সা.) কে মানুষের মহত্ত্বের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে মাপলে, কোনো লোক তাঁর চেয়ে মহৎ হতে পারবে না৷’। পূর্ণতা পেতে হলে যুব সমাজকেও অনুসরণ করতে হবে মহানবীর জীবন-ধারা।

মহামানব মুহাম্মদ (সা.) যৌবনে পদার্পণ করে চরম নোংরা পরিবেশে লালিত-পালিত হয়েও নিজের যৌবনকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে সক্ষম হন ৷ যে সমাজে অবৈধ প্রেম, কুদৃষ্টি বিনিময় ও ব্যভিচার যুবকদের জন্য ছিল গর্বের ব্যাপার, সে সমাজে এ অসাধারণ যুবক নিজের দৃষ্টিকেও কলুষিত হতে দেননি৷ যেখানে অলিগলিতে ছিল মদ তৈরির কারখানা এবং ঘরে ঘরে ছিল পানশালা, বসত মদ পরিবেশনার মাধ্যমে জমজমাট কবিতা পাঠের আসর, সেখানে এ যুবক কখনও এক ফোঁটা মদও মুখে তোলেননি ৷ যেখানে জুয়া জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, সেখানে আপাদমস্তক পবিত্রতায় মণ্ডিত এ যুবক (সা.) জুয়া স্পর্শও করেননি৷ নষ্ট গানবাজনা যেখানে সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানে তিনি এসব অপসংস্কৃতির ধারেকাছেও ঘেঁষেননি ৷তাই তাঁর জীবনের শৈশব-কৈশোর, যৌবন-বার্ধক্য প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি ছিলেন সমগ্র মানবতার জন্য উত্তম আদর্শ৷ তাইতো মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ (৩৩-সুরা আহযাব: ২১)৷

ইয়েমেনের বিপ্লবী যুব সমাজ

একটি দেশের যুব সমাজকে যথাযথভাবে দিক-নির্দেশনা দেয়া হলে তারা সেই দেশের সব ক্ষেত্রেই গড়ে তুলতে পারেন সাফল্যের অনন্য কীর্তি-গাঁথা। সমাজ সংস্কারেও যুব সমাজ রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা ঠিক যেমনটি মহানবী সা. তরুণ বয়সেই হিলফুল ফুযুল নামক সংগঠনে যোগ দিয়ে সমাজ-সংস্কার ও সমাজ-সেবায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। ওই সংগঠনের সদস্যরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করার, পথিকের জান-মালের হেফাজত করার, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য দেয়ার, মাযলুমের সহায় হওয়ার ও কোন যালিমকে মক্কায় আশ্রয় না দেয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হিলফুল ফুযূল গঠন ও তার পরপরই যবরদস্ত কুরায়েশ নেতার কাছ থেকে বহিরাগত মযলূমের হক আদায়ের ঘটনায় চারিদিকে তরুণ মুহাম্মাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে৷ সবার মুখে মুখে তিনি ‘আল-আমীন’ তথা বিশ্বস্ত ও অমানতদার বলে অভিহিত হ’তে থাকেন৷ অল্পবয়সী হওয়া সত্ত্বেও কেউ তাঁর নাম ধরে ডাকতো না৷ সবাই শ্রদ্ধাভরে তাঁকে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকত৷

মহানবী-সা. যুব বয়সেই সমাজে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি আদর্শ সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। যৌবনেই তিনি হয়েছিলেন আদর্শ স্বামী এবং কোনো অসৎ ব্যক্তিকে কখনও বন্ধু হিসেবে বেছে নেননি যৌবনেও। মহানবী (সা) তাঁর অনুপম চরিত্র, ন্যায়বিচার ও সংগ্রামী জীবনধারার মাধ্যমে আদর্শ ইসলামী সমাজের ভিত গড়ে দিয়ে প্রায় ৬২ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এরপর এই মহামানবের ইসলামী মিশন তথা আদর্শ মানব সমাজ গড়া ও ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরার দায়িত্ব সবচেয়ে নিখুঁতভাবে পালনের কাজ অব্যাহত রাখেন মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যগণ। জনগণকে চিন্তাগত ও নৈতিক বিচ্যুতি থেকে মুক্ত রাখার জন্য খাঁটি ইসলামী আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। তাই যুব সমাজও এর ব্যতিক্রম নয়।  যুব সমাজসহ আমাদের সবার প্রতিটি আচরণ, সামাজিক প্রথা ও কর্মকাণ্ডকে গড়ে তুলতে হবে এই মহান ইসলামী আদর্শের আলোকেই। পার্থিব জীবনের সমস্ত অনিষ্টতা, অনাচার, দোষত্রুটি, কলঙ্ক ও কদর্যতা থেকে বাঁচতে হলে পবিত্র কুরআন এবং মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতকেই করতে হবে জীবনের ধ্রুবতারা।

পবিত্র কুরআন ও মহানবীর (সা) আহলে বাইতের আদর্শ চির-অবিচ্ছিন্ন। এই আদর্শ তথা ইসলামী আদর্শ বিশেষ কোনো যুগ ও দেশের জন্য সীমিত নয়। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের শ্রেষ্ঠ দিক-নির্দেশনা। কিন্তু যুব সমাজের কাছে এসব বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা শৈশব থেকেই পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা না হলে অর্থাৎ তাদের কাছে এসব বিষয়ে অন্যান্য মানব-রচিত মতাদর্শ আগে ভাগেই প্রচারিত হলে তাদেরকে সঠিক পথে তথা ইসলামের পথে আনাটা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই অন্য সব মতাদর্শ শেখানোর আগে যুব সমাজকে ইসলামের নানা দিক সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমসহ হাজারো মাধ্যম আজ যুব সমাজের মন-মগজ বিগড়ে দেয়ার জন্য কাজ করছে। তাই এসব মাধ্যমকেও ইসলাম তথা মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শিক্ষা প্রচারে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগাতে হবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ