মার্চ ১৩, ২০২৪ ১৭:০৩ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ১৩ মার্চ বুধবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম: 

  • ‘আম্মু, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন’- প্রথম আলো
  • জাহাজ অপহরণ ৫০ লাখ ডলার দাবি জলদস্যুদের- ইত্তেফাক
  • জিম্মি নাবিকদের সুস্থাবস্থায় ফেরাতে বদ্ধপরিকর সরকার: নৌপ্রতিমন্ত্রী- যুগান্তর
  • বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার উপর অযৌক্তিক খরচের বোঝা চাপিয়েছে সরকার-মানবজমিন
  • পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন-মানবজমিন

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতি চলছে’, সিএএ-এনআরসি ‘জুটি’ নিয়ে আবার সরব মমতা-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ‘ভাই বলে পরিচয় দেবেন না, বাবুনের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ’, বিস্ফোরক মমতা- সংবাদ প্রতিদিন
  • বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ভাগীদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে ভারতে: রাহুল গান্ধী- গণশক্তি
  • অরুণাচল নিয়ে চিনের বক্তব্য খারিজ করল ভারত-আজকাল

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি।  

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। শিগগিরই না দিলে তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন তারা।এটি দৈনিক ইত্তেফাকের খবর।

আর প্রথম আলোর খবরের শিরোনাম-‘আম্মু, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন’এ খবরে লেখা হয়েছে, ‘আম্মু, ওরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। এখনো ইফতার করি নাই। তারা খাবার দিলে ইফতার করব। কবির গ্রুপের চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেভাবেই হোক, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন, আম্মু।’ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটায় সর্বশেষ মুঠোফোনে মা জোছনা বেগমকে এই আকুতি জানিয়েছেন। এরপর আজ বুধবার পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।ছেলের চিন্তায় জোছনা বেগম আজ বুধবার সকালে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। এ সময় কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ছেলের চিন্তায় উৎকণ্ঠায় থাকা এই মা বারবার আকুতি জানাচ্ছেন—যেভাবেই হোক তার ছেলেকে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।

জিম্মি জাহাজের প্রধান কর্মকর্তার বার্তা-‘ফাইনাল কথা, টাকা না দিলে আমাদের একে একে মেরে ফেলতে বলেছে’-প্রথম আলোর এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান গতকাল মঙ্গলবার মাগরিবের পর মুঠোফোনে তাঁর স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। অডিও বার্তাটি প্রথম আলোর হাতে এসেছে। অডিও বার্তায় আতিক বলেছেন, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাঁদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’ যুগান্তরের খবরে লেখা হয়েছে, সোমালীয় জলসীমায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের নাবিকদের সুস্থ ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার উপর অযৌক্তিক খরচের বোঝা চাপিয়েছে সরকার-মানবজমিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের মাসিক খরচ গড়ে ৯.৪ শতাংশ বাড়বে। নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের খরচ বাড়বে ১০৬ থেকে ১১৮ টাকা। অর্থাৎ সরকার বিদ্যুতের বর্ধিত ক্যাপাসিটি না কমিয়ে এ খাতের ভর্তুকির চাপ সম্পূর্ণ ভোক্তার উপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যা অযৌক্তিক। বুধবার বিদ্যুতের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি; ভর্তুকি সমন্বয়ের অন্য বিকল্প আছে কী? শীর্ষক শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে সিপিডি। সিপিডির গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সমন্বয়ের নামে দাম বৃদ্ধি ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়াবে।  প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিদ্যুতের বর্ধিত ক্যাপাসিটির খরচ না কমিয়ে ভর্তুকির চাপ ভোক্তার ওপর চাপানো অযৌক্তিক। চাহিদার তুলনায় তিনগুণ হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পেছনে সরকারের ভেতরে-বাইরে যোগসাজশের ইঙ্গিত দিয়েছে সিপিডি।

পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন-মানবজমিন

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে যদি তারা সেনাবাহিনীকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে বা ইউক্রেনে মোতায়েন করে, তাহলে একে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখবে রাশিয়া। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পুতিন বুধবার পশ্চিমাদের এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ইউক্রেনে সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র তাহলে তাকে যুদ্ধে বড় রকম উস্কানি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একইসঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য টেকনিক্যালি প্রস্তুত রাশিয়া। ১৫ থেকে ১৭ই মার্চ রাশিয়ায় নির্বাচন। তার মাত্র দু’দিন আগে এমন বক্তব্য দিলেন পুতিন। এই নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে তার ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬ বছর বৃদ্ধি পাবে। অবশ্য, এ নির্বাচনে যে তিনি জয়ী হবেন তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতি চলছে’, সিএএ-এনআরসি ‘জুটি’ নিয়ে আবার সরব মমতা-আনন্দবাজার পত্রিকার

‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র সরকার। এ প্রসঙ্গে এবার গর্জে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ মমতা আবারও স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি বাংলায় সিএএ করতে দেবেন না। সিএএ ইস্যুতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী বললেন-  “এই আইনে কোনো স্পষ্টতা নেই। পুরোপুরি ভাঁওতা। ২০১৯ সালেও করেছিল আসামে সিএএ-এনআরসি। ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ গিয়েছিল। তার মধ্যে ১৩ লাখ হিন্দু বাঙালি। সিএএ-তে কেন মুসলমান সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। এখন যাদের দরখাস্ত করতে বলা হয়েছে তারা যেই দরখাস্ত করবেন তারা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। তাহলে আপনাদের সম্পত্তির কী হবে, চাকরি-বাকরির কী হবে? সবটাই বেআইনি ডিক্লেয়ার হয়ে যাবে।

এটা হলো বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা।” মমতা এদিন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বহাল তবিয়তে পশ্চিমবঙ্গে থাকুন। কেউ গায়ে হাত দিলে আমরা বুঝে নেবো।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেন- ‘‘মনে রাখবেন সিএএ এনআরসি’র সঙ্গে কানেকটেড। আপনাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে চলে যাবে। এই দরখাস্ত করার আগে বারবার ভাববেন। হাজার বার ভাববেন।’’ শুধু তাই নয়, খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতার বার্তা- ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গে থাকতে ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবো না। কোনো এনআরসি করতে দেবো না। কোনো বঞ্চনা-লাঞ্ছনা  করতে দেবো না। এর জন্য আমার যদি জীবন যায় আমি জীবন দেবো। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অধিকার কাড়তে দেবো না। আমি সব রাজ্যকে বলবো আপনারা তৈরি হন।’’ মমতা আরও একবার বিজেপিকে মনে করিয়ে দেন- ‘ইউনাইটেড নেশনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে। এমনকি শরণার্থীরাও যদি পাশের জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয় তাদেরও কিন্তু মানবিকতার খাতিরে তাদের আশ্রয় দিতে রাষ্ট্র বাধ্য থাকে।’ হাবড়ার সভা থেকে সিএএ নিয়ে মতুয়াদের বারবার  সাবধান করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়ারা একটা বিরাট ফ্যাক্টর। 

রাজ্যে এই মুহূর্তে ১ কোটি ৮০ লাখ তফসিলি জাতির প্রায় ১৭.৪ শতাংশ মতুয়া। পশ্চিমবঙ্গের ১০টি আসন তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৪টি আসন বিজেপি জিতেছিল ২০১৯ সালে। রানাঘাট এবং বনগাঁ কেন্দ্রসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি আসনে মতুয়াদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেবার সমর্থন আদায় করেছিল বিজেপি। তৃণমূল এবার সেই পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছে। সোমবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘চার বছর ধরে এই সিএএ আইন চালু হবে করে করেও করা হয়নি। ঠিক নির্বাচনের আগেই এই আইন চালু মানে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আইনটা আমি আগে দেখবো তারপর আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো’। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, ভোটের আগে এটা বিজেপি’র রাজনৈতিক চাল।

অরুণাচল নিয়ে চিনের বক্তব্য খারিজ করল ভারত-আজকাল পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অরুণাচল প্রদেশ সফর নিয়ে চিনের মন্তব্য খারিজ করে দিল বিদেশমন্ত্রক। আজ সকালে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, আছে এবং থাকবে। গত ৯ মার্চ অরুণাচল গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে দুই লেনের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করেন তিনি। চিনের তরফে বলা হয়, ভারতের তরফে তৈরি করা তথাকথিত অরুণাচল প্রদেশকে স্বীকার করে না এবং কঠোরভাবে তার বিরোধিতা করে।

বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ভাগীদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে ভারতে: রাহুল গান্ধী-গণশক্তি পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুধবার, ১৩ মার্চ বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশ পরিচালনায় ‘‘ভাগীদারি’’ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এবং কেন্দ্র আসল সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে মোদী সরকার ধনীদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা মকুব করেছে তাহলে ‘‘তাহলে সরকার কেন কৃষকদের বকেয়া মকুব করতে পারছে না?’’ প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির দাবি, ৭০ কোটি মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, দেশের ২২ জনের সেই পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ১৩

ট্যাগ