ইরানি গল্প ও রূপকথা: চগুনদুজ (পর্ব-৭)
আমরা ‘চগুন দুজ’ গল্পের গত পর্বে দেখেছি ইব্রাহিম তার হাতটা শাহজাদির চোখের সামনে তুলে ধরে বলেছিলো: ‘এই যে আংটি টা দেখছো! সবই এই আংটির কারসাজি’। তার মানে ইব্রাহিম সকল রহস্যের কথাই জানিয়ে দিলো শাহজাদিকে। রহস্যের কথা জেনে শাহজাদির কৌতূহল বেড়ে গেল। ইব্রাহিমের কাছ থেকে পুরো ঘটনা সে শুনলো। তারপর শাহজাদি বললো:‘কই! দেখি তো আংটি টা একবার’। তারপরের ঘটনা শুনবো আজকের পর্বে।
শাহজাদির অনুরোধে ইব্রাহিম সুবোধ বালকের মতো আংটিটা খুলে দিলো। শাহজাদি আংটিটা অনেকটা আনমনে দেয়ালের তাকে রেখে ইব্রাহিমের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটালো। ইব্রাহিম মুগ্ধ চিত্তে শুয়ে পড়লো। শাহজাদিও শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুমালো না। অপেক্ষা করতে লাগলো ইব্রাহিমের ঘুমের জন্য। নিশ্চিত হবার পর শাহজাদি পালঙ্ক ছেড়ে উঠে আংটিটা নিজের হাতে পরে সোলায়মান নবীর নাম নিয়ে ঘঁষা দিতেই সেই পাঁচ দৈত্য এসে হাজির। সবচেয়ে বিশালদেহি দৈত্যকে শাহজাদি বললো: ‘তোর এবং তোর বাবার জীবন আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবো,যদি না আমাকে আমার প্রাসাদসুদ্ধ আগের জায়গায় নিয়ে রেখে আসো’।
দৈত্যের দল ভয় পেয়ে ইব্রাহিমকে তার হাত-পা বেঁধে প্রাসাদের বাইরে ছুঁড়ে মারলো। তারপর প্রাসাদকে তুলে নিয়ে শহরের দিকে রওনা হয়ে গেল এবং ঠিক আগের জায়গায় নিয়ে স্থাপন করলো।
সকাল বেলায় প্রাসাদের পাশের দোকানদাররা যথারীতি তাদের দোকান খুলতে গিয়ে দেখলো প্রাসাদ আগের মতোই যথাস্থানে এসে গেছে,বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের। চোখ কচলে নিয়ে ভালো করে দেখলো সবই ঠিক আছে। একেবারে আগের মতোই,হুবহু সেই প্রাসাদটিই। বোঝার কোনো উপায় নেই যে এই প্রাসাদ কোনোদিন এখান থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল,আবার ফিরে এসেছে। তারা দ্রুত চলে গেল বাদশাহর প্রাসাদে। বাদশাহ খবরটা পেয়েই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল শাহজাদির প্রাসাদে। প্রাসাদে ঢুকে আপন কন্যাকে সুস্থ সমস্ত, সহিহ-সালামত দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে আদেশ দিলো পুরো শহরকে যেন জাঁকজমকের সাথে সাজানো হয়,আলোকসজ্জা করা হয়।
সবাইকে আনন্দ –উৎসবে মেতে উঠতে বললো বাদশাহ। ক্ন্তিু কিছুক্ষণ পরই আবার বাদশার চেহারাটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। চোখে মুখে এক ধরনের ভীতির চিহ্ন ভেসে উঠলো বাদশার। দ্রুত জ্যোতিষীকে খবর দেওয়া হলো। জ্যোতিষীকে বললো:
‘তোমার বই-পুস্তক ভালো করে দেখো! কী করে শাহজাদির এই প্রাসাদ এখান থেকে হাওয়া হয়ে গেল আবার ফিরিয়ে আনা হলো’।
জ্যোতিষী তার যন্ত্রর মন্তর হাড্ডি-বাটি,বই পুস্তক দেখে শুনে বাদশাকে বললো: ‘এটা দৈত্য আর পরীদের কাজ। এক শ বারও যদি প্রাসাদকে ফিরিয়ে আনা হয়,তাতে কোনো কাজই হবে না,প্রাসাদ এবং শাহজাদিকে জিন-পরীরা নিয়ে যাবেই যাবে’।
জ্যোতিষের কথা শুনে বাদশা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
বলছিলাম জ্যোতিষের কথা শুনে বাদশা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এদিকে দৈত্যরা ইব্রাহিমকে প্রাসাদ থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার পর তার প্রহরী কুকুর এবং বেড়াল দৈত্যদের পেছনে পেছনে দৌড়ালো শহরের দিকে। দৈত্যরা প্রাসাদসহ শূন্যে মানে আকাশপথে গেল আর কুকুর বেড়াল স্থল পথে। যেতে যেতে পথের পাশে দেখলো ইঁদুরের দল একটা বড় টিলা খুঁড়ে নিজেদের জন্য চমৎকার একটা শহর বানিয়েছে। বেড়াল কুকুরের দিকে তাকিয়ে বললো:
‘শহরে গিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই। শহরে পা পড়তেই বাচ্চারা পাথর ছুঁড়ে মারবে, লাঠি হাতে নিয়ে মারতে আসবে। তারচেয়ে বরং চলো এক কাজ করি! এই ইঁদুরগুলোর ওপর আংটি ফিরিয়ে আনার কাজটা চাপিয়ে দেই’।
কুকুর বেড়ালের কথায় রাজি হয়ে গেল এবং দু’জনেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ইঁদুর শিকারে। সুড়ঙ্গগুলোকে ভেঙে আরও বড় করলো এবং ইঁদুর ধরে ধরে খেতে শুরু করে দিলো। এ অবস্থা দেখে ইঁদুরেরা তাড়াতাড়ি তাদের বাদশাকে খবর দিলো। বললো: ‘একটা কুকুর এবং একটা বেড়াল এসে তোমার সেনাদের ধরে ধরে মেরে ফেলছে আর খাচ্ছে’।
এ কথা শুনেই ইঁদুররাজ কয়েকটি ইঁদুরকে পাঠালো কুকুর আর বেড়ালের কাছে। তারা দ্রুত গিয়ে বেড়াল এবং কুকুরকে বললো:
‘আপনাদের সমস্যার কথাটা আমাদের বাদশাকে জানান। চলুন আমাদের সাথে। ইঁদুরেরা আপনাদের কী ক্ষতি করেছে বলবেন। কেন তাদের ওপর অতর্কিত এই হামলা’।
কুকুর আর বেড়াল বাদশার প্রস্তাব শুনে গেল ইঁদুররাজের কাছে। ইঁদুররাজ তাদের কাছে আক্রমণের কারণ জানতে চাইলে তারা তাদের সকল ঘটনা জানালো।
বিশেষ করে যে আংটি শাহজাদি নিয়ে এসেছে তাদের মনিবের হাত থেকে,ওই আংটিটা যে করেই হোক তাদেরকে ফেরত নিতে হবে। এ কাজে ইঁদুর রাজের সহযোগিতা চাইলো তারা।
ইঁদুররাজ একথা শুনেই আদেশ দিয়ে দিলো সবাই যেন শহরের অলিগলিতে ছুটে যায়। যে করেই হোক কুকুর এবং বেড়ালের জন্য যেন তাদের মনিবের আংটি খুঁজে নিয়ে আসে। আদেশ পেয়েই ইঁদুরেরা ছুটলো শহরের দিকে। যেখানেই গর্ত কিংবা সুড়ঙ্গ দেখেছে সেখানেই ছুটে গেছে তারা। তবে দুটি ইঁদুর তখনও যেতে পারে নি। একটি ছিল অন্ধ আর অপরটি খোঁড়া। খোঁড়া ইঁদুরটি অন্ধটিকে বললো: চলো,আমরা দু’জন একসাথেই যাই, সেটাই ভালো হবে।
অন্ধটি বললো: চলো,তাই যাই।
দুজনই শেষ পর্যন্ত একসাথে রওনা হলো তাদের রাজার আদেশ পালন করতে। আস্তে আস্তে খোঁড়াতে খোঁড়াতে তারা এক সময় গিয়ে পৌঁছলো শহরে। তারপর কী হলো সে কাহিনী শুনবো পরবর্তী পর্বে। (চলবে)
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/৩/টি-১০২/অ-১০৭