ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬ ০১:৫০ Asia/Dhaka

মহানবী (সা.) বলেছেন : যখন তাঁর ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : ‘আমরা তাদের বিভিন্ন দলকে যেসব সম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ করেছি তার দিকে তোমার চোখ দুটিকে নিবদ্ধ করো না...’ তখন বললেন : যার ওপর আল্লাহর সান্ত্বনা প্রভাব ফেলে না তার মন দুনিয়ার আফসোসে মরে।

আর যে ব্যক্তি অন্য লোকের হাতে দুনিয়ার যা কিছু রয়েছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয় তার দুঃখ দীর্ঘায়িত হয় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তার জন্য যে রুজি বরাদ্দ রেখেছেন তাতে অসন্তোষ দেখায়, জীবন তার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। আর যে ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয় ছাড়া তার ক্ষেত্রে আল্লাহর অন্য কোন নেয়ামতকে দেখতে পায় না, সে নির্ঘাত মূর্খ এবং আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করেছে। তার চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ আর তার শাস্তি আসন্ন।

রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন : মুসলমান না হয়ে কেউই বেহেশতে প্রবেশ করবে না। তখন হযরত আবু যর (রা.) বললেন : হে রাসূলুল্লাহ্! ইসলাম কী? তিনি বললেন : ইসলামের পোশাক হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি। তার বাইরের আবরণ হলো হেদায়েত। আর তার ভেতরের আবরণ হলো লজ্জা। আর তার মাপকাঠি হলো সংযমশীলতা, আর তার পূর্ণাঙ্গতা হলো দীন বা ধর্ম আর তার ফল হলো সৎ কাজ। আর প্রত্যেক জিনিসের একটি ভিত থাকে। ইসলামের ভিত হলো আমার আহলে বাইত (আ.)-কে ভালোবাসা। 

বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কিছু বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। তারা পরোপকারে তৃপ্তি লাভ করে এবং দানশীলতাকে মহৎ কাজ বলে মনে করে। আর আল্লাহ্ উত্তম চরিত্রকে পছন্দ করেন। 

তিনি আরো বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহর কিছু বান্দা রয়েছে মানুষ বিপদ-আপদে যাদের শরণাপন্ন হয়। এরাই হলো তারা যারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে। 

মহানবী বলেছেন : নিশ্চয় মুমিন আল্লাহর শিষ্টাচারকে ধারণ করে। যখন আল্লাহ তাকে প্রশস্ততা দান করেন তখন সে প্রশস্ত হস্ত আর যখন তাকে সংকীর্ণতায় রাখেন সেও তখন নিবৃত্ত থাকে। 

আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল বলেছেন : মানুষের জন্য এমন এক সময় আসবে যখন তার ধর্মে কতোটা ক্ষতি হলো এ বিষয়ে সে কোনো পরোয়া করবে না যদি তার দুনিয়া ঠিক থাকে।

মহানবী (সা.) আরো বলেন : যে আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে সদাচার করে তাদের তথা বান্দাহদের অন্তরে আল্লাহ ওই ব্যক্তির জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করেন আর যে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আল্লাহ তার জন্য বান্দাহদের মধ্যে ঘৃণা জন্ম দেন। আল্লাহ এই স্বভাব দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। 

মহানবী আরো বলেছেন: যখন আমার উম্মত পনেরটি কাজ করে তখন তারা বিপদগ্রস্ত হয়: যখন গনিমতকে নিজেদের (একদলের) মধ্যে হাত বদল করবে (এবং তা থেকে সম্পদ জমা করবে), আমানতকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ করবে (এবং নিজের অধিকারভুক্ত করে নেবে), যাকাত দেয়াকে ক্ষতি বলে মনে করবে, পুরুষ নিজ স্ত্রীর অনুসারী হবে, তার মায়ের সঙ্গে অবিচার করবে, বন্ধু বা সঙ্গীর উপকার করলেও নিজ পিতার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করবে, মসজিদগুলোয় উচ্চস্বরে আওয়াজ করবে, কোনো ব্যক্তিকে তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সম্মান করবে, সম্প্রদায়ের নেতা হবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ব্যক্তি, রেশমি কাপড় পরবে, মদপান করবে ও বাইজী বা গায়িকার দল পুষবে এবং উম্মতের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্ববর্তীদেরকে অভিশম্পাত দেবে। আর এ অবস্থায় তিনটি ঘটনার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে : লোহিত ঝড় বা রক্তের ঝড়, দৈহিক রূপান্তর ও সামাজিক নৈরাজ্য। 

বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন: দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফেরের জন্য বেহেশত। 

তিনি আরো বলেন : মানুষের জন্য এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ হবে নেকড়ে। আর যে নেকড়ে না হবে তাকে অন্য নেকড়েরা খেয়ে ফেলবে।রাসূল (সা.) বলেন : শেষ জামানায় সবচেয়ে কম যে জিনিস থাকবে তা হলো বিশ্বস্ত ভাই, আর হালাল অর্থ।মহানবী বলেন : মানুষ সম্পর্কে কুধারণা থেকে দূরে থেকো। 

বিশ্বনবীর সামনেই একদল লোক জনৈক ব্যক্তির ভূয়সী প্রশংসা করলো। এমনকি তারা সমস্ত গুণের কথা তার জন্য উল্লেখ করলো। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : লোকটির বুদ্ধিমত্তা কেমন? তারা বলল : হে রাসূলুল্লাহ্! আমরা তাঁর ইবাদত ও সৎ কাজের পেছনে তার অবিশ্রান্ত চেষ্টার কথা আপনাকে জানাচ্ছি আর আপনি তার বুদ্ধিমত্তার কথা জানতে চেয়েছেন? তিনি বললেন : বুদ্ধিহীন লোক তার বোকামির কারণে লম্পটের লাম্পট্যের চেয়েও বড় অপকর্মের কবলে পড়ে আর কাল কিয়ামতে লোকেরা তাদের বুদ্ধিমত্তার অনুপাতে মর্যাদা লাভ করবে এবং নিজ প্রতিপালকের নৈকট্য অর্জন করবে। 

মহানবী (সা.) বলেছেন : আল্লাহ বুদ্ধিমত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যার মধ্যে সেগুলোর সব কয়টি থাকে তার বুদ্ধিমত্তা পূর্ণতা লাভ করে। আর যার মধ্যে সেগুলোর কোনোটিই নেই তার বুদ্ধিমত্তা নেই। আর সেই তিনটি দিক হল : আল্লাহকে ভালো মতো জানা, আল্লাহকে ভালোমতো আনুগত্য করা আর আল্লাহর কাজে ভালো মতো ধৈর্য ধারণ করা।

মহানবী আরো বলেন : নাজরানের জনৈক খ্রিষ্টান মদীনায় আসল, সে ছিল স্পষ্টভাষী, প্রতিভাবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। আরজ করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! এ খ্রিস্টান লোকটির কি বুদ্ধিমত্তা রয়েছে? রাসূলুল্লাহ্ (সা.) প্রশ্নকারীকে থামিয়ে দিলেন এবং বললেন : চুপ থাকো। প্রকৃত বুদ্ধিমান হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে এক বলে জানে এবং তাঁর আনুগত্য করে।

বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন: জ্ঞান মুমিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অধ্যবসায় তার সহযোগী, আর বুদ্ধিমত্তা তার দিশারি, ধৈর্য তার সেনাদলের সেনাপতি এবং মমতা তার পিতা ও পুণ্যকর্ম তার ভাইয়ের মত। আদম (আ.) থেকেই বংশ আর তাকওয়া বা খোদাভীতি হচ্ছে মানুষের (আসল) পরিচয়। আর পৌরুষত্ব হলো সম্পদের পরিশুদ্ধি।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১৫ 

ট্যাগ