ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka

হ্যাঁ ভাইয়েরা ঠিকই বালতি উপরে তোলার জন্য সূতা ধরে টানতে লাগলো। কূপের প্রায় অর্ধেকটায় আসার পর তারা দড়িটা কেটে দিল এবং মালেক মুহাম্মাদ নীচে পড়ে গেল। ভাইয়েরা এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল এবং নিজ নিজ স্ত্রীকে নিয়ে তারা নিজেদের শহরের দিকে রওনা হলো। স্ত্রীদের হুমকি দিয়ে বলল: কেউ যদি এই ঘটনা কোনোক্রমে অন্য কারো কাছে ফাঁস করে তাহলে তাকে মেরে ফেলা হবে। মহিলারা ভয়ে নিজেদের মুখে কুলুপ আঁটলো। সবাই সবাইকে সতর্ক করে দিল: খবরদার একদম চুপ, টু শব্দটিও করবে না।


মালেক মুহাম্মাদ কূপের ভেতর পড়ে বেহুশ হয়ে যায়। যখন তার হুশ ফিরে আসে সারা শরীর তারা ব্যথা করতে শুরু করে। সে উপরে কূপের মুখের দিকে তাকায়। দেখতে পায় একটা লোক কূপের মুখে দাঁড়িয়ে আছে এবং থেকে থেকে তার দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা বালতি ভেতরে ফেলল পানি তুলতে। মালেক মুহাম্মাদ এই সুযোগে বালতির ভেতর বসে পড়তে চাইলো যাতে উপরে উঠে যেতে পারে। কিন্তু লোকটা যখন মুহাম্মাদকে দেখলো বলল: তোকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি বল্ কে তুই? আমাকে পানি দে। তুই বিনিময়ে যা চাস তাই পাবি। মালেক বলল: আমি কিছুই চাই না,শুধু কূপ থেকে আমাকে উপরে তোলো! লোকটা মেনে নিল এবং মালেকও লোকটার জন্য পানি পাঠাল।

কূপের ভেতর থেকে উপরে উঠে এসে মালেক লোকটার দিকে তাকাল। জিজ্ঞেস করলো: কে তুমি!
লোকটি বলল: আমি একজন ব্যবসায়ী। ভারতে গিয়েছিলাম এখন ফিরে যাচ্ছি নিজ শহরের দিকে। তুমিও চলো আমার সাথে। তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য। মালেক মুহাম্মাদ রাজি হয়ে গেল এবং লোকটার সঙ্গে যেতে উদ্যত হলো। পা বাড়াবার আগে কূপের চারপাশে একবার নজর বুলাতেই দেখলো তার দস্তরখান, পাত্র আর লাঠি পড়ে আছে কূপের পাশে। ভাইয়েরা যেহেতু এগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতো না সে জন্য ভাবছিল পুরোণো জিনিসগুলো হয়ত মূল্যহীন। সেজন্য তারা জিনিসগুলোকে সেখানেই ফেলে রেখে চলে গেছে। মালেক মুহাম্মাদ সেগুলোকে একত্রিত করে ব্যবসায়ী লোকটার সঙ্গে রওনা হয়ে গেল।

পাঠক! আপনাদের কি মনে আছে দরবেশের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে মালেক মুহাম্মাদ এই জিনিসগুলো মানে দস্তরখান, লাঠি এবং একটি পাত্র নিয়েছিল তার ঘোড়া আর তলোয়ারের বিনিময়ে।
মালেক মুহাম্মাদ তখন জিজ্ঞেস করেছিল: এগুলোর বৈশিষ্ট্য কী?
দরবেশ বলেছিল: পাত্রটা হাতে নিয়ে যত মেহমানই তোমার আসে শুধু ভেতরে হাত রেখে বলবে: হে সোলায়মান নবী! আমার মেহমান আছে। এরপর পাত্র থেকে যতই খাবার নেবে কমবে না। দস্তরখানের বৈশিষ্ট্য হলো এটা বিছিয়ে সোলায়মান নবীকে স্মরণ করে বলবে আমার মেহমান আছে। তারপর যতই রুটি নেবে শেষ হবে না। আর লাঠিটা হাতে নিয়ে বলবে: আমি অমুকের মাথাটা চাই। অমনি মাথাটা লাউয়ের মতো কাটা হয়ে যাবে।

কিন্তু মালেক মুহাম্মাদের ভাইয়েরা এসব জিনিসের বৈশিষ্ট্য না জানার কারণে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই ফেলে রেখে চলে যায়। আর মজার ব্যাপার হলো এইসব জিনিস দিয়েই মালেক মুহাম্মাদ সকল বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। ভাইদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায় এবং তার পিতাও সেসব বুঝতে পারে। অবশেষে যে যার মতো পরিণতি আর পুরস্কার লাভ করে। বাদশা যে স্বপ্ন দেখেছিল সে স্বপ্নের কথাটা নিশ্চয়ই মনে আছে! স্বপ্নটা ছিল এরকম: বাদশার মাথার ওপরে ঝুলছে একটি সোনার খাঁচা। খাঁচার ভেতর বসে আছে চমৎকার একটা তোতা পাখি। ঘুম ভেঙে যাবার পর বাদশা চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবছিল এই সোনার খাঁচার মানে কী কিংবা ওই তোতা পাখিরই বা কী অর্থ। অর্থ যা-ই হোক বাদশা কিন্তু ওই তোতা পাখির প্রেমে পড়ে গেছে। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকেই ভাবতে শুরু করেছে কী করে ওই তোতা পাখি আর সোনার খাঁচা হাতে পাওয়া যায়।

অপরদিকে বাদশাও কিছুদিন থেকেই ভাবছিল বাদশাহির দায়িত্ব কোনো এক ছেলের হাতে সোপর্দ করবে যাতে তার অবর্তমানে বাদশাহি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না দেখা দেয়। স্বপ্ন দেখার পর বাদশা ভাবলো:ভালোই হলো। এবার সাত সন্তানকেই পরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। সাত সন্তানের মধ্যে যে সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তার হাতে বাদশাহীর দায়িত্ব দিয়ে দেবে। মালেক মুহাম্মাদ সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি ছয় ভাই নিয়ে এলেও পরক্ষণেই ভাইদের সকল অপকর্মের কথা জানতে পেরে বাদশা। তাই বাদশা শেষ পর্যন্ত মালেক মুহাম্মাদকেই তাঁর পরবর্তী বাদশা ঘোষণা করেন আর ছয় ভাইকে করেন তিরস্কার।