জানুয়ারি ৩১, ২০১৭ ২১:২৩ Asia/Dhaka

সুরা ত্বাহা পবিত্র কুরআনের বিশতম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায় রয়েছে ১৩৫ আয়াত। মানুষের উৎস ও পরিণতি মাক্কি সুরাগুলোর মত এই সুরারও প্রধান আলোচ্য বিষয়।

সুরা ত্বাহার ৮০ আয়াত জুড়ে রয়েছে হযরত মুসা নবীর (আ) ঘটনা। একত্ববাদের সুফল ও শিরকের পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে এ সুরায়। মহান আল্লাহর নানা বৈশিষ্ট্য বা গুণ, কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব, আদম-হাওয়ার কাহিনী এবং কিছু সতর্কবাণীও সুরা ত্বাহার আলোচ্য-বিষয়।  এবারে এই সুরার প্রথম দু'টি আয়াতের অর্থের দিকে নজর দেব।

'পরম করুণাময় ও দাতা আল্লাহর নামে শুরু করছি। তোয়া-হা, আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি। কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্য এ কুরআন নাজিল করেছি যারা ভয় করে। '

এখানে বিশ্বনবী (সা)-কে মহান আল্লাহ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কারণ, মহানবী কুরআনের আয়াত নাজিল হওয়ার পর দায়িত্ব পালন ও প্রতিজ্ঞা পূরণের তীব্র-অনুভূতির জন্য খুবই কষ্ট পেতেন। পথহারা মানুষের দুরবস্থার জন্য তীব্র মর্মবেদনা অনুভব করতেন তিনি।  আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল ব্যাপক ইবাদত করতেন এবং এত বেশি নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত।

মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলছেন যে এত বেশি কষ্ট করার দরকার নেই। কারণ, কুরআন কেবল তাদেরকেই পথ দেখাবে যারা আল্লাহকে ভয় করে।

সুরা ত্বাহার নবম আয়াত থেকে শুরু হয়েছে মুসা নবীর (আ) ঘটনা। নবম ও দশম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,  

'আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? তিনি যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারবর্গকে বললেন: তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত: আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনে পৌঁছে পথের সন্ধান পাব।'

হযরত মুসা (আ) ও ফেরাউনের সংঘাত সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন সংঘাতের অংশ। এইসব সংঘাতের সবচেয়ে শিক্ষণীয় দিকগুলোই পবিত্র কুরআন তুলে ধরেছে যাতে মানুষ এসব নিয়ে ভাবে ও শিক্ষা নেয়। ফেরাউন ও নমরুদের মত খোদাদ্রোহী শক্তিগুলো প্রবল পরাক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত  সেনাবাহিনীর অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর শক্তির মোকাবেলায় একেবারেই শক্তিহীন। মহান আল্লাহর শক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে গিয়ে এইসব জালিম শক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এইসব সত্য কাহিনী মু'মিনদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতে অবিচল থাকতে বলে ও নিজ নিজ যুগের ফেরাউন আর যাদুকরদের চিনে নিয়ে তাদের  বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে এবং বিচ্যুতি ও অধঃপতনের ধারা থেকে দূরে থাকতে বলে।

হযরত মুসার কাহিনীর রয়েছে নানা অংশ। যেমন, আল্লাহর সঙ্গে  একান্ত সান্নিধ্য ও কথোপকথনের পর্ব, ফেরাউন ও তার  দলবলের প্রতি মুসা এবং তার ভাই হারুনের (আলাইহিমুসসালাম) পক্ষ থেকে ঈমানের দাওয়াত ও শত্রুদের সঙ্গে তাঁদের সংঘাতের পর্ব। মিশর থেকে মুসা (আ) ও বনি-ইসরাইলের বের হয়ে যাওয়া এবং  পানিতে ডুবে ফেরাউন ও তার দলবলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের নাগ-পাশ থেকে বনি-ইসরাইলের মুক্তি লাভের পর্ব।

এরপর রয়েছে একত্ববাদ থেকে বনি-ইসরাইলের বিচ্যুতির ঘটনা এবং সামেরির মাধ্যমে সূচিত এই বিচ্যুতির বিরুদ্ধে মুসা নবীর (আ) সুদৃঢ় সংগ্রামের পর্ব সংক্রান্ত আলোচনা। 

ফিরে আসছি সুরা ত্বাহার নবম ও দশম আয়াতের ব্যাখ্যায়। হযরত মুসা (আ) তাঁর স্ত্রী ও সন্তানসহ মাদায়েন বা বর্তমান যুগের বাগদাদ অঞ্চল থেকে মিশরের দিকে রওনা দিলেন।  শীতের এক  অন্ধকার রাতে তারা পথ হারিয়ে ফেলেন। হযরত মুসা (আ) শীতল আবহাওয়ার কারণে আগুনের সন্ধানে বের হন। এমন সময় মুসা নবীর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী বেদনা অনুভব করতে থাকেন। অন্যদিকে এল প্রবল ঝড়। একই সময়ে হঠাৎ দূরে আগুনের মত কিছু একটা জিনিস মুসা নবীর চোখে ধরা পড়ল। 

মুসা নবী তাঁর পরিবারকে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। আমি আগুন দেখতে পেয়েছি। সেখান থেকে কিছুটা আগুন আনব যাতে শীতে কাঁপতে না হয়। আগুনের কাছে এসে মুসা (আ) শুনতে পেলেন অদৃশ্য থেকে তাঁকে বলা হচ্ছে: হে মুসা! আমি তোমার প্রতিপালক, তোমার জুতা খুলে ফেল। কারণ, তুমি এখন পবিত্র তুবা উপত্যকায় রয়েছ। মুসা (আ) একটি গাছের মধ্যে আগুন দেখতে পেলেন। তাই এটা স্পষ্ট হল যে আগুনটি সাধারণ আগুন নয়, বরং তা মহান আল্লাহর নূর।

প্রভুর কথা শুনতে পেয়ে মুসা নবী যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহর নূর পড়েছে যে জমিনে সেখানে কি আর জুতো পরে থাকা যায়! তাই মুসা নবী জুতো খুলে ফেললেন। এই উপত্যকা এ কারণেও মহান যে এখানেই নবুওত পান হযরত মুসা (আ)। ফলে শুরু করতে হয় তাকে মানুষকে সুপথ দেখানোর মিশন।

এ সময় সর্বপ্রথম ঐশী প্রত্যাদেশ পান এই মহান নবী। এতে বলা হয়েছে:

'এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক। আমিই আল্লাহ আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।' (সুরা ত্বাহা-১৪)

নবী-রাসূলদের দাওয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথা তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াতের পরই এসেছে নামাজের নির্দেশ।

কোনো নবী আসলেই তিনি আল্লাহর আসল নবী কিনা তা প্রমাণের জন্য দরকার হয় অলৌকিকতা বা মু'জেজা। তা না হলে তো যে কেউ নিজেকে নবী বলে দাবি করতে পারে। এইসব মু'জেজা হতে পারে আহ্বান বা দাওয়াতের বিষয়বস্তু কিংবা আসমানি কিতাব অথবা অনুভবযোগ্য বা দৈহিক কোনো বিষয়ও হতে পারে।#

পার্সটুডে/মু.আ. হুসাইন/আবু সাঈদ/৩১