জুলাই ১০, ২০১৭ ১৭:৪৫ Asia/Dhaka

সুরা মু’মিনুনে মহান আল্লাহর নানা সৃষ্টি কৌশলের কথা বলা হয়েছে। এইসব নিদর্শন আল্লাহকে চেনা ও জানার মাধ্যম। মানুষ, আকাশ, গাছপালা, নানা প্রাণী ও পৃথিবীর সৃষ্টিসহ বিশ্ব-জগতের বিস্ময়কর নানা ব্যবস্থাই এইসব নিদর্শনের কয়েকটি দৃষ্টান্ত।

সুরা মু’মিনুনের ১২ নম্বর আয়াতে হযরত আদম (আ) ও তাঁর সন্তানদের সৃষ্টিসহ মানব সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে। মহান আল্লাহ বলছেন,

‘আমি মানুষকে কাদার সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।’

যে মানুষের এত যোগ্যতা ও মর্যাদা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মূল্যহীন বা সাধারণ পদার্থ মাটি থেকে! এমন অসম্ভবকে সম্ভব করা একমাত্র মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকেই সম্ভব। অর্থাৎ এ বিষয়টি মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন।

সুরা মু’মিনুনের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন,‘এরপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ ও সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।’

যদিও মানব-সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল মাটি থেকে। কিন্তু মানুষের বংশধারা বিস্তৃত হয়েছে নর ও নারীর শুক্রাণু আর ডিম্বানুর মিলনের মাধ্যমে যা মিলিত হয় নারীর জরায়ুতে। মায়ের গর্ভে ভ্রুণের ক্রমবিকাশের বিস্ময়কর নানা স্তরের বিষয়ে একই সুরার ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

‘এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে হাড় সৃষ্টি করেছি,এরপর হাড়কে গোশত দিয়ে ঢেকে দিয়েছি,অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। অভিনন্দিত হোক মহান আল্লাহ নিপুণতম ও শ্রেষ্ঠ স্রস্টা হিসেবে!!’

 

বিজ্ঞানীরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের এমন নিখুঁত বক্তব্যে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। কারণ,সেই ১৪০০ বছর আগে ভ্রুণবিদ্যা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের এত সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত ধারণা ছিল না। 

 

যদি আল্লাহ মানুষের হাড়গুলোকে গোশত দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে মানুষকে খুবই অসুন্দর দেখা যেত। এ ছাড়াও এই গোশত মানুষের জন্য পোশাকের কাজ করে। অর্থাৎ গোশত তাকে ঠাণ্ডা ও গরম হতে রক্ষা করে মানুষের হাড়গুলোকেও নানা ধরনের আঘাত ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে শরিরের গোশত এবং মাংসপেশী।

‘অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি’-এই বক্তব্যের মাধ্যমে পরিপূর্ণ দেহের অধিকারী মানুষ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল মানুষ।

তার মধ্যে ফুকে দেয়া হয়েছে আত্মা বা রুহ। আর এ জন্যই মানুষ সৃষ্টি জগতে আল্লাহর প্রতিনিধি তথা খলিফা। এমন এক অনন্য সত্তার মানুষকে সৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহ সর্বোত্তম অভিনন্দন ও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। অন্ধকার মাতৃগর্ভে এমন সুন্দর ও সর্বোত্তম সৃষ্টিকে জন্ম দেয়ার সাধ্য মহান আল্লাহ ছাড়া আর কার রয়েছে? তাই আল্লাহই কি সর্বোত্তম স্রষ্টা নন?

 

স্রষ্টার সৃষ্টি-কুশলতার নিদর্শন হল সৃষ্টির প্রতিটি অংশ আর অঙ্গকে যথাযথ মাত্রায় যথাস্থানে রাখা। যেমন, মানুষের নাকটি যেখানে থাকা দরকার সেখানেই দেয়া হয়েছে। তার চোখ দুটি যেখানে যেভাবে থাকা উচিত সেখানে সেভাবেই দেয়া হয়েছে। মানুষের শরীর ও বাহ্যিক নানা দিকের রহস্য এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা। আত্মার বিষয়টি তো প্রায় পুরোপুরি রহস্যময় ও অজ্ঞাত বিষয়। মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে কত বিচিত্রময় প্রতিভা ও যোগ্যতা এবং নেয়ামত দিয়েছেন। তাই এইসব অশেষ নেয়ামতের কেবল কোনো একটির জন্যও মহান আল্লাহর  যথাযথ প্রশংসা করা সমস্ত সৃষ্টিকুলের পক্ষেও করা সম্ভব নয়।

সুরা মু’মিনুনে নবী-রাসুলদের কয়েকটি শিক্ষণীয় ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে। বিশিষ্ট রাসূল হযরত নুহ (আ)’র কাহিনীও তুলে ধরা হয়েছে এই সুরায়।

 

নুহ নবীর যুগে সবলরা দুর্বলের ওপর জুলুম করত। সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে কিছু ছিল না। সে যুগের লোকেরা ছিল মূর্তি-পূজারি ও মুশরিক। নুহ নবীকে পাঠানো হয় তাদের কাছে। তিনি তাদেরকে এক খোদার ইবাদতের দাওয়াত দেন।  কিন্তু নুহের জাতির অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা বলে: এই ব্যক্তি তো অন্যদের মতই সাধারণ মানুষ। শুধু পার্থক্য হল ইনি অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব খাটাতে চান। তার পক্ষ থেকে এক খোদার ইবাদতের দাওয়াত দেয়া ও ধর্মের কথা বলা-এসবই তার কর্তৃত্বকামীতার অজুহাত মাত্র। সে যদি বড় কিছু হত তাহলে ফেরেশতাদের মত নয় কেন? তারা আরও বলে, আল্লাহ যদি কোনো রাসুল পাঠাতে চাইতেন তাহলে তো ফেরেশতাই পাঠাতেন!  কোনো মানুষ নবী বা আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার দাবি করে- এমন কথা তো আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে কখনও শুনিনি!   

 

তাদের এইসব আজগুবি ও অদ্ভুত কথায় প্রভাবিত না হয়ে হযরত নুহ (আ) একত্ববাদের দাওয়াত দিয়ে যেতে থাকেন। ফলে কাফির-মুশরিকরা এই নবীকে পাগল বলে অভিহিত করে। তারা বলে: এই লোক তো উম্মাদ! আমাদের কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে যাতে এই লোক তথা নুহ মারা যায় অথবা তার পাগলামির অবসান ঘটে!

 

হযরত নুহ (আ) ৯৫০ বছর ধরে মানুষের কাছে এক আল্লাহ ও খোদায়ী ধর্মের দাওয়াত দিয়ে যান। কিন্তু অতি অল্প সংখ্যক মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। এরপর নুহ নবী খোদায়ী সাহায্য চান। এ প্রসঙ্গে  সুরা মুমিনুনের ২৬ ও ২৭  নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

 

নূহ বলেছিলঃ হে আমার পালনকর্তা,আমাকে সাহায্য কর;কেননা,তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে। এরপর আমি তার কাছে আদেশ পাঠালাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী নৌকা তৈরী কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়,তখন নৌকায় তুলে নাও প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। আর তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা ডুবে যাবে।

 

নুহ নবীর লোকালয়ের আশপাশে কোনো পানি না থাকা সত্ত্বেও হযরত নুহ (আ) মহান আল্লাহর নির্দেশে বিশাল কিশতি বানাতে শুরু করেন। কাফির লোকজন যখন দলে দলে তার পাশ দিয়ে যেত তখন তারা এই মহান নবীর নৌকা নির্মাণের কাজ দেখে তাঁকে  নানা ধরনের উপহাস করত! অবশেষে নুহ নবীর কিশতি নির্মাণের কাজ শেষ হল। এরপর কি হয়েছিল তা আমরা বলব এই অনুষ্ঠানের আগামী আসরে। আশা করছি তখনও আমাদের সঙ্গ দিতে ভুলবেন না। #

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/১০