জুলাই ২৭, ২০১৭ ২১:২০ Asia/Dhaka

সুরা যুখরুফ পবিত্র কুরআনের ৪৩ তম সুরা। তবে নাজিল হওয়ার কালক্রম অনুযায়ী এটি কুরআনের ৬৩ নম্বর সুরা। এই সুরায় রয়েছে মোট ৮৯ আয়াত। এর মধ্যে কেবল ৪৫ নম্বর আয়াতটি ছাড়া বাদ-বাকি সব আয়াতই মক্কায় নাজিল হয়েছিল।

যুখরুফ শব্দের অর্থ হল স্বর্ণের সাজ-সজ্জা ও গয়নাগাটি। এই সুরার ৩৫ নম্বর আয়াতে যুখরুফ শব্দটি রয়েছে।  

পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র নবুওতের গুরুত্ব, একত্ববাদের কিছু প্রমাণ, মহান আল্লাহ সম্পর্কে অসঙ্গত ও অশালীন নানা অপবাদ এবং অংশীবাদিতা বা শির্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সুরা যুখরুফ-এর কয়েকটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। এ ছাড়াও এ সুরায় রয়েছে অতীতের কয়েক জন নবীর কিছু ঘটনা ও কয়েকটি জাতির কাহিনী। পরকাল, মুমিনদের পুরস্কার ও কাফিরদের পরিণতি এবং কুসংস্কার ও অযৌক্তিক বা অসার কিছু রীতি নিয়েও বক্তব্য রয়েছে সুরা যুখরুফে।

এই সুরার প্রথম চার আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি নাজিল করেছি কুরআন আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝ।নিশ্চয়ই এ কোরআন আমার কাছে সমুন্নত অটল রয়েছে উম্মুল কিতাব বা কিতাবগুলোর মাতা তথালওহে মাহফুযে এবং তা প্রজ্ঞাপূর্ণ।

 

এখানে প্রথমেই শপথ নিয়ে মহান আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে পবিত্র কুরআনের বাণীগুলোর বাস্তবতা স্পষ্ট,এর অর্থও পরিস্কার এবং এ মহাগ্রন্থের দিক-নির্দেশনাগুলোও সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ়। বাস্তবতা ও সত্য তুলে ধরার জন্য যেসব ভাষা সবচেয়ে বেশি উপযোগী আরবি ভাষা সেসবের অন্যতম। অনেক ভাষাবিদ মনে করেন এখানে আরবি বলতে  প্রাঞ্জলতা, স্পষ্টতা ও বোধগম্যতাকে বোঝানো হয়েছে।

 

উম্মুল কিতাব বা কিতাবগুলোর মাতা বলতে সব আসমানি কিতাবের ভিত্তি ও মূলনীতিকে বোঝানো হয়েছে। উম্মুল কিতাব হচ্ছে মহান আল্লাহর জ্ঞান যাতে বিশ্ব জগতের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছুই রেকর্ড করা আছে। আর এই তথ্য ভাণ্ডারে ঢোকার সাধ্য কারও নেই। একমাত্র আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে এর জ্ঞান দান করেন। মহান আল্লাহর অশেষ জ্ঞান থেকেই উৎসারিত হয়েছে পবিত্র কুরআন এবং যার মূল বাস্তবতা সংরক্ষণ করা হয় আল্লাহর কাছে থাকা লওহে মাহফুজে বা সংরক্ষিত ফলকে। আর এরই অন্য নাম উম্মুল কিতাব বা কিতাবগুলোর মা যা প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সুদৃঢ়।

 

সুরা যুখরুফের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় অজ্ঞতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তাওহিদ বা একত্ববাদ সম্পর্কে কয়েকটি যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরার পর এই সুরায় শেষ নবী (সা)-কে সান্ত্বনা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। তিনি বলেছেন, এমন কোনো নবী নেই যাকে উপহাস করা হয়নি। এরপর অজ্ঞতাপূর্ণ কিছু সংস্কৃতির বিষয় তুলে ধরে সেসবকে তিরস্কার করা হয়েছে।

 

মক্কার মূর্তিপূজারি মুশরিকরা পবিত্র কুরআনকে অগ্রাহ্য করার জন্য নানা ধরনের অজুহাত দেখাত। যেমন, তারা বলতো কেনো কুরআন মক্কা ও তায়েফ শহরের কোনো নেতৃস্থানীয় এবং সম্পদশালী ব্যক্তির ওপর নাজেল হয়নি? তাদের কাছে এটা ছিল মহা-বিস্ময়ের বিষয় যে মহাগ্রন্থ কুরআন নাজিল হয়েছে মুহাম্মাদ নামের একজন দরিদ্র  ব্যক্তির কাছে।

 

আসলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও জাহেলি ব্যবস্থাগুলোর নিয়ম হল এতে বাস্তবতাগুলোকে উল্টোভাবে দেখে। বাস্তবদর্শী হলে তারা এটা বুঝতে পারতো যে খোদায়ী আহ্বানের বাহক হওয়া উচিত এমন ব্যক্তির যিনি হবেন সাহসী, ন্যায়বিচারকামী এবং মজলুম ও বঞ্চিত মানুষের ব্যথা-বেদনা সম্পর্কে সচেতন। সুন্দর সুন্দর পোশাক, বিপুল অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা জাঁকজমকপূর্ণ বড় বড় প্রাসাদ ও নানা ধরনের দামী বিলাসবহুল সাজ-সজ্জার অধিকারী হওয়াটা নবী হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। পবিত্র কুরআন মুশরিকদের নানা ধরনের অজ্ঞতা ও কুসংস্কারপূর্ণ চিন্তাধারার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়। সুরা জুখরুফের ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

‘হে নবী! তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক হিসেবে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে,আপনার পালনকর্তার রহমত তার চেয়ে উত্তম।’

 

মানুষ সামাজিক জীব। পরস্পরের সহযোগিতা ছাড়া মানুষ সমাজে টিকে থাকতে পারে না। তাই আল্লাহই এক মানুষকে অন্য মানুষের মুখাপেক্ষী করেছেন। কিন্তু কোনো কোনো মানুষের বাহ্যিক শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ ও চাকচিক্যময় জীবন দেখে প্রতারিত হওয়া ঠিক নয় এবং এসব বিষয়কেই মানবীয় মূল্যবোধের মাণদন্ড করা উচিত নয়।

তাই সুরা যুখরুফের পরের তিন আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

‘যদি সব মানুষের কাফির ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তবে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে আমি তাদেরকে দিতাম তাদের ঘরের জন্যে রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যার উপর তারা চড়ত। এবং তাদের ঘরের জন্যে অনেক দরজা দিতাম এবং পালংক দিতাম যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত এবং স্বর্ণনির্মিত সাজসজ্জা ও গয়নাগাটিও দিতাম। এগুলো সবই তো পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র। আর আপনার পালনকর্তার কাছে পরকাল হচ্ছে তাঁদের জন্যেই যারা আল্লাহকে ভয় করে।’#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/২৭