আগস্ট ০৮, ২০১৭ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka

সুরা যুখরুফের ৩২ থেকে ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি সব মানুষের কাফির ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত,তবে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে আমি তাদেরকে দিতাম তাদের ঘরের জন্যে রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যার উপর তারা চড়ত এবং তাদের ঘরের জন্যে অনেক দরজা দিতাম এবং পালঙ্ক দিতাম যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত এবং স্বর্ণনির্মিত সাজসজ্জা ও গয়নাগাটিও দিতাম।

এগুলো সবই তো পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র। আর আপনার পালনকর্তার কাছে পরকাল হচ্ছে তাঁদের জন্যেই যারা আল্লাহকে ভয় করে।’

এই তিন আয়াতে মহান আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে দুনিয়াপ্রেমিক বা দুর্বল ইমানের অধিকারী লোকদের জন্য যদি পুরোপুরি কাফের বা ইমানহীন হওয়ার আশঙ্কা না থাকতো তাহলে আল্লাহ সব পার্থিব সম্পদ কেবল কাফেরদের জন্যই বরাদ্দ রাখতেন। আর এভাবে আল্লাহ অন্যদের কাছে এটা তুলে ধরতেন যে জালিম ও  কাফেরদের ধন-সম্পদের প্রাচুর্য তাদের শ্রেষ্ঠত্বের এবং মু’মিনদের পার্থিব সম্পদের অভাব তাদের নিচু অবস্থার মাপকাঠি নয়। ইসলাম যৌক্তিক মাত্রায় ধন-সম্পদ অর্জনের পরামর্শ দেয়।

 

অর্থাৎ জীবন-যাপনের জন্য যা অপরিহার্য কেবল তা-ই ব্যবহার করতে বলে এই পবিত্র ধর্ম। পবিত্র কুরআন তথা ইসলামের এ পরামর্শের কারণেই খোদাভীরু ব্যক্তিরা ধন-সম্পদ অর্জনের নেশায় মত্ত হয়ে থাকেন না। বাহ্যিক চাকচিক্য ও বিলাসী জীবনকেও তারা বর্জন করেন। পরকালীন মুক্তিই তাদের সব কাজের বড় লক্ষ্য। মহান আল্লাহর নবী-রাসুলরাও পার্থিব চাকচিক্য ও বিলাসিতাকে তুচ্ছ বিষয় হিসেবে বর্জন করতেন। তারা জ্ঞান, খোদাভীরুতা ও পবিত্রতাকেই প্রকৃত মূল্যবোধ হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিতেন। 

 

সুরা যুখরুফের ৩৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ থাকে,আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োগ করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।’

 

যারা বস্তুবাদে ডুবে থাকে ও দুনিয়ার মোহনমালায় আচ্ছন্ন করে রাখে নিজ মন তাদেরকে আল্লাহ খোদাদ্রোহী বলেই মনে করেন এবং মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা হচ্ছে শয়তানের দাস।

 

সুরা যুখরুফের ৩৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতএব,আপনার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়,তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরল পথে রয়েছেন।’

 

মহান আল্লাহ এখানে তার সর্বশেষ রাসুলকে (সা) বলছেন যে,আপনার কর্মসূচিতে ও কুরআনে কোনো ধরনের ভুল ও বক্রতা নেই। কোনো একদল মানুষ কুরআন ও আপনার কর্মসূচিকে গ্রহণ না করায় তার অর্থ এই নয় যে আপনি সত্য-নবী নন, বরং মিথ্যার ওপরে ভর করে আছেন। যে কুরআন আপনার কাছে নাজেল হয়েছে তা আপনার প্রতি ও আপনার জাতির প্রতি সতর্ক-বার্তা এবং এই কুরআনই হওয়া উচিত জীবনের কার্যসূচি। আর শিগগিরই প্রশ্ন করা হবে যে এই খোদায়ী কর্মসূচি এবং ওহি’র ব্যাপারে আপনি আর আপনার জাতি কি করেছে?

 

একদিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ওয়ালিদ বিন মুগাইরার সঙ্গে মসজিদে বসেছিলেন। নাদ্‌র বিন হারেসও সেখানে এসে তাদের পাশে বসে। মহানবী (সা) একদল কুরাইশ সর্দারদের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন। নাদ্‌র মহানবীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। রাসুলে খোদা (সা) নানা অকাট্য যুক্তি তুলে ধরে মূর্তি পূজার অসারতা তুলে ধরে নাদরের নিন্দা জানান। এরপর তিনি একটি আয়াতও তুলে ধরেন যেখানে বলা হয়েছে:

 

তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের পূজা করছ-সেইসব উপাস্য দোযখের জ্বালানি হবে। এইসব উপাস্য ও তাদের পূজারীর সবাইই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এরা যদি খোদা হত তাহলে কখনও দোযখে প্রবেশ করতো না। অথচ তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।

 

এরপর মহানবী সেখান থেকে উঠে চলে যান। এ সময় আবদুল্লাহ বিন জুবেরি সেখানে আসে। ওয়ালিদ তখন আবদুল্লাহকে বলে: নাদ্‌র মুহাম্মাদের মোকাবিলায় কথা বলতে গিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।

 

মুহাম্মাদ মনে করে যে আমরা ও আমাদের যত খোদা আছে সবাই দোযখের জ্বালানী হব!‍ আবদুল্লাহ বললো: খোদার শপথ! যদি তাকে দেখতাম তাহলে তার কথার জবাব দিতাম। তাকে জিজ্ঞেস কর সব খোদাই কি তাদের উপাসকসহ দোযখবাসী? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে আমরা তো ফেরেশতাদের পূজা করি, ইহুদিরা উজাইর নবীর পূজা করে,আর খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মরিয়মের উপাসনা করে। তাহলে আমরা যদি ফেরেশতাদের ও উজাইর ও ঈসার মত নবীদের পূজা করি তাহলে কি তা ভুল হবে?

ওয়ালিদ তাদের এই কথা মহানবীর (সা) কাছে তুলে ধরেন।

 

মহানবী (সা) তখন বলেন, হ্যাঁ যারাই খোদা হতে চায় তারাও পূজারীসমেত দোযখে যাবে। এইসব মূর্তিপূজারী আসলে শয়তানের পূজা করে। শয়তান তাদের যা বলে তারা তা-ই করে। আর এ অবস্থায় সুরা যুখরুফের ৫৭ নম্বর আয়াত ও সুরা আম্বিয়ার ১০১ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।

 

সুরা যুখরুফের ৫৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যখনই মরিয়ম তনয় ঈসার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হল,তখনই আপনার সম্প্রদায় হট্রগোল শুরু করে দিল। আর সুরা আম্বিয়ার ১০১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, যাদের জন্য প্রথম থেকেই আমার পক্ষ থেকে কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে তারা দোযখ থেকে দূরে থাকবে।

 

আর সুরা আম্বিয়ার ৯৮ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পূজা কর,সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।

 

-এই আয়াতের ভিত্তিতে মুশরিকরা উপহাস করে বলতো, যেহেতু ঈসাকেও অনেকে খোদা বা উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করেছে তাই এ আয়াতের বিধান অনুযায়ী ঈসা নবীও দোযখে যাবেন! আর এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে যে আমরা ও আমাদের মূর্তিগুলোও ঈসা নবীর প্রতিবেশী হব! এরপর তারা বলতো:

 

 আমাদের যে খোদাগুলো আছে সেসব ভালো না ঈসার খোদা ভালো? যখন ঈসাই দোযখে যাবেন তখন আমাদের খোদাগুলো নিম্ন পর্যায়ের বলে তাদের অবস্থা যে কি হবে তা তো বোঝাই যায়!  এরপর মহান আল্লাহ নবীকে (সা)  বলছেন: তারা এই উপমা তর্ক হিসেবে নয় বরং আপনার প্রতি বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার কারণেই তুলে ধরছে।  তারা এটা ভালোভাবেই জানে যে কেবল সেসব  উপাস্যই দোযখে যাবে যাদের পূজারী বা উপাসকদের ওপর তারা সন্তুষ্ট হয়েছিল।  যেমন, ফেরাউনকে যারা খোদা বলতো ফেরাউন তাদের ওপর সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু ঈসা নবীর ব্যাপার ছিল ঠিক এর বিপরীত।

 

এরপর সুরা যুখরুফের ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ঈসা তো কেবল আল্লাহর এক দাস এবং আমরা তাঁকে নবুওত দিয়েছিলাম নেয়ামত হিসেবে ও তাঁকে বনি ইসরাইলের জন্য আদর্শ ব্যক্তিত্ব করেছিলাম। ঈসা (আ) নিজেও সব সময় নিজেকে আল্লাহর দাস বা বান্দা বলে উল্লেখ করতেন এবং তিনি সবাইকে আল্লাহর ইবাদত করতে বলতেন। তিনি কাউকেই তাওহীদ বা একত্ববাদ থেকে বিচ্যুত হওয়ার অনুমতি দেননি। সব সন্দেহ দূর করার জন্য তিনি বলতেন, নিঃসন্দেহে আমার প্রতিপালক আল্লাহ তোমাদেরও প্রতিপালক। তাই তাঁরই ইবাদত কর এবং এটাই হচ্ছে সরল পথ। (৬৪ নম্বর আয়াত) #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/৮