আগস্ট ২৮, ২০১৭ ১৮:০৬ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের ৪৫তম সুরার নাম সুরা জাসিয়া। তবে নাজিল হওয়ার ধারাক্রম অনুযায়ী এটি মহাগ্রন্থ কুরআনের ৬৫তম সুরা। জাসিয়া শব্দটি এসেছে এই সুরার ২৮ নম্বর আয়াতে। এ শব্দের অর্থ হচ্ছে নতজানু অবস্থা।

পবিত্র কুরআনের মহত্ত্ব ও পথ-প্রদর্শনে এর ভূমিকা,একত্ববাদের নানা যুক্তি, মাদায়ুন অঞ্চলের লোকদের নানা দাবির জবাব ও বনি ইসরাইলের মতো কোনো কোনো জাতির পরিণতি এই সুরার অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

 

পথভ্রষ্টদের প্রতি হুঁশিয়ারি,ক্ষমা করার তথা ক্ষমাশীল হওয়ার আহ্বান,কিয়ামত বা পুনরুত্থান তথা বিচার-দিবসের নানা ভয়ানক ঘটনা এবং মানুষের কৃতকর্মের হিসাব তথা আমলনামা নিয়েও বক্তব্য এসেছে এ সুরায়।  

 

সুরা জাসিয়ার তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূ-মণ্ডলে মুমিনদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

মহাকাশের বিশালত্ব ও সৃষ্টি-জগতের বিস্ময়কর সব ব্যবস্থা হাজার হাজার কোটি বছর ধরে টিকে আছে। ভূমণ্ডলের গঠন ও বিস্ময়ে-ভরা বিচিত্রময় বহু দিক-এসবই মহান আল্লাহর কিছু নিদর্শন। পৃথিবী নিজের চারদিকে ও সূর্যের চারদিকে দ্রুত গতিতে ঘুরছে। আর সৌর জগতের সব গ্রহ-নক্ষত্রও অসাধারণ দ্রুত গতিতে ছায়াপথের অক্ষকে কেন্দ্র করে গতিশীল। তাদের এই ভ্রমণ চলছে তো চলছেই- এ ভ্রমণ যেন অন্তহীন।

 

তবুও এই সব কিছুই এতোই প্রশান্ত যে মানুষ আর তার প্রশান্তির বাহন ও সব সৃষ্টি রয়েছে সচল,জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত। অসীম শূন্যে বা মহাশূন্যে ভাসমান বাহনের এতো দ্রুত গতির আবর্তন ও ঘূর্ণন সত্ত্বেও কোনো আরোহীই সেসবের গতি টেরই পায় না।

 

ভূমণ্ডলেরও নানা ঐশ্বর্য আর বিস্ময়রাশি মানুষকে করে বিস্ময়ে হত-বিহ্বল। অজস্র সম্পদ,মূল্যবান পদার্থের বিপুল সংখ্যক খনি ও নানা ধরনের নেয়ামতের প্রাচুর্য মানুষসহ নানা জীবকে বাঁচিয়ে রাখছে ধরণীর মাঝে। পাহাড়-পর্বত,সাগর-মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল–এসবই হচ্ছে বিশ্ব-জগতের স্রষ্টার একত্ব আর মহত্ত্বের অকাট্য কিছু নিদর্শন। অবশ্য দাম্ভিক খোদাদ্রোহী ও অচেতন মানুষেরা এসব নিদর্শনের মহিমা বুঝতে পারে না।

সুরা জাসিয়ার পরের আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব-জন্তু সৃজনের মধ্যেও নিদর্শনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য।

মানুষের শরীরের একটি কোষের গঠন একটি বড় শিল্প-নগরীর মতই রহস্যময়। খুবই ক্ষুদ্র ও বড় নানা ধরনের এবং হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রগ আর শিরা-উপশিরা বিন্যস্ত রয়েছে মানব শরীরে। নানা ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও স্নায়বিক সিস্টেম মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের যোগাযোগ রক্ষা করছে। মস্তিষ্কে বা মগজে রয়েছে এসব কিছুর কেন্দ্রীয় কমান্ড ব্যবস্থা। এসবই মানব-শরীরের অনন্য কিছু বিস্ময় যা তুলে ধরছে স্রষ্টার মহা-কৌশলী সৃষ্টি কুশলতা!

মানব শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্ম-কৌশল ও বাইরের নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের মোকাবেলায় চৌকস প্রতিরোধ-ব্যবস্থা—ইত্যাদিও মহান আল্লাহর অশেষ মহিমার কিছু নিদর্শন। 

মানুষ ছাড়াও রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির জীব। এদের মধ্যে রয়েছে খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে অতিকায় হাতি বা তিমির মত বিশাল প্রাণী! এইসব জীবের নানা ধরনের বিচিত্রময় কাঠামো, রং ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা আর জ্ঞানের প্রকাশ! মহান আল্লাহই হচ্ছেন সব সৃষ্টির উৎস ও স্রষ্টা।

সুরা জাসিয়ার ৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, 

‘দিন ও রাতের আবর্তন বা পরিবর্তনে,আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিজিক তথা বৃষ্টি বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন,তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে।’

দিন ও রাত এবং আলো ও আঁধারের আবর্তন অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতাধীন। এটা খুবই বিস্ময়কর বিষয়। যদি দিন চিরস্থায়ী বা খুব দীর্ঘ হত তাহলে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠত এবং তাতে সব জীবই মারা যেত। আবার যদি সব সময়ই রাত থাকতো তাহলে তীব্র শীতে সবাই মারা যেত। অন্যদিকে বৃষ্টি হচ্ছে সজীবতা ও প্রাণের নিদর্শন।  

বাতাসের প্রবাহ অক্সিজেনে-ভরা হাওয়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়। ফলে জীবকুল বেঁচে থাকে। বায়ু-প্রবাহ দুষিত বা কার্বনযুক্ত বাতাসকে শোধনের জন্য পাঠিয়ে দেয় বনাঞ্চলে ও সমতল প্রান্তরে। আর সেখান থেকে বিশুদ্ধ বাতাস ফিরে আসে শহর ও জন-বসতিতে। এভাবে পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য এনে জীবন-ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে বায়ু-প্রবাহ।

এ ছাড়াও বাতাসের প্রবাহ ফুলের পরাগায়নের মাধ্যম। বাতাসের ধাক্কায় সাগর ও মহাসাগরে সৃষ্টি হয় প্রবল ঢেউ। আর এভাবে সাগরের পানি দূষণ ও পঁচন থেকে মুক্ত থাকে। আর এই বাতাসই সাগরের বুকে জাহাজ ও নৌকা চলাচলে ভূমিকা রাখে।

সুরা জাসিয়ার ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

‘এগুলো আল্লাহর আয়াত,যা আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথরূপে। অতএব, তারা যদি এসবে বিশ্বাস না করে তাহলে আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন্‌ কথার ওপর  ঈমান আনবে?

সুরা জাসিয়ার পরের দুই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

‘প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর দুর্ভোগ। সে আল্লাহর আয়াতগুলো শুনে,এরপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে কুফরির ওপর অবিচল থাকে,যেন সে আয়াত শুনেইনি। অতএব,তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।’

কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর বাণী বা আয়াতের ব্যাপারে বিদ্বেষী নীতি গ্রহণ করে এমন সব ব্যক্তি যাদের পুরো অস্তিত্ব পাপাচার ও মিথ্যায় কলুষিত হয়ে গেছে। ফলে তারা এ মহাগ্রন্থের আয়াত শোনার পরও এর বিরোধিতায় অবিচল থাকে ও এমন আচরণ করে যে মনে হবে যেন তারা এর আয়াতই শোনেনি। আর তাই এরা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে।#

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/ ২৪