ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮ ১৮:২৭ Asia/Dhaka

বন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। জীবনযাপনের ইসলামি পদ্ধতি ও দিক নির্দেশনা বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান “আদর্শ জীবনযাপনের" আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি আখতার জাহান এবং আমি গাজী আব্দুর রশীদ।

আমরা গত আসরে সুন্দর ভাষা ও বাচনভঙ্গি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলাম যে,কারও ব্যক্তিত্বে আঘাত হানা কিংবা কারো অবমাননা করাকে এক ধরনের জুলুম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে কুরআনের বহু আয়াতে মুমিনদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন কাউকে তাচ্ছিল্য করা, কারো দোষ ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো কিংবা কাউকে নোংরা উপাধি বা উপনামে ডাকা ইত্যাদি থেকে নিজেদের বিরত রাখে।

সূরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: "হে ঈমানদারগণ!এক কওম যেন অন্য কওমকে বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না"।

আরও বলেছিলাম, অপরের সঙ্গে সম্পর্ক করা ব্যক্তির নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে। তবে এই সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন শিষ্টাচার রক্ষা করে চলা অর্থাৎ অপরকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া। এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যের উদ্ধৃতিও তুলে ধরেছিলাম। তাঁর বক্তব্যের অসমাপ্ত অংশ দিয়েই শুরু করবো আজকের আসর। আপনাদের সঙ্গ যথারীতি কামনা করছি।

 

সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন: জ্ঞান ও সভ্যতার বাহ্যিক উন্নতি যদি আপাত দৃষ্টিতে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরেও আরোহন করে, তারপরও সেই সমাজকে মানবীয় পূর্ণতায় সমৃদ্ধ সমাজ বলা যাবে না। যে সমাজের লোকজন একে অপরের কাছে অনিরাপদ বোধ করে কিংবা একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করে, পরস্পরের মঙ্গল কামনা করে না বরং ভেতরে ভেতরে শত্রুতা ও ক্ষতি কামনা করে, ষড়যন্ত্র করে, অপরের সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা লালন করে, সেই সমাজে কোনোরকম শান্তি ও স্বস্তির অস্তিত্ব নেই।

সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন: পক্ষান্তরে যদি কোনো সমাজের জনগণের অন্তরাত্মায় নৈতিক গুণাবলি বিরাজ করে, একে অপরের প্রতি দয়াপরবশ হয়, সেবা-যত্ন করে, পরস্পরের প্রতি রহমদিল ও ক্ষমাশীল দৃষ্টি পোষণ করে, দুনিয়াবি সম্পদ ও স্বার্থের মোহে লোভাতুর না হয়ে পড়ে, পরস্পরের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ায় এবং যে সমাজের লোকজন ধের্যশীল, সহিষ্ণু ও নম্র চরিত্রের অধিকারী, এই ধরনের সমাজ যদি পার্থিব সম্পদের দিক থেকে খুব বেশি অগ্রসরও না হয় তারপরও ওই সমাজের লোকজন সুখে শান্তিতে জীবন কাটায়...এরকম সমাজই আমাদের প্রয়োজন। আমাদের উচিত অন্তরে এ ধরনের ইসলামি নৈতিক গুণাবলি লালন করা"।

সর্বোচ্চ নেতা যে নৈতিক গুণাবলি অন্তরে লালন করার কথা বললেন পবিত্র কুরআনেও ঈমানদারদের উদ্দেশে একই কথা বলা হয়েছে। কুরআনে আরও বলা হয়েছে যদি কখনো কোনো সংকীর্ণমনা মানুষের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে কেবল তার শিষ্টাচারবর্জিত আচরণকে উদার মানসিকতা দিয়ে মেনে নিলেই চলবে না বরং তাকে সুন্দর কথাবার্তা ও বাচনভঙ্গির সাহায্যে অর্থাৎ সে সন্তুষ্ট হয় এমন সুন্দর উপাধিতে ভূষিত করে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন "ইবাদুর রাহমান" অর্থাৎ আল্লাহর বান্দার বর্ণনা দিতে গিয়ে সূরা ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন: রহমানের আসল বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়:তোমাদের সালাম।

এমন বহু লোক আছে যারা অপরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্য, বিদ্রূপ করার জন্য মানে তার ব্যক্তিত্বকে ছোট করার জন্য হাসি-তামাশার আশ্রয় নেয়। কোনো মজলিশে কিংবা বন্ধুদের মাঝে ঠাট্টা মশকরা করে কথা বলে। ইশারা ইঙ্গিতে অপরের গ্রহণযোগ্যতায় আঘাত হানার চেষ্টা করে। হাসি মজাকের মধ্য দিয়ে সে আপাতদৃষ্টিতে তার বন্ধু ও শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করলেও আসলে তার মনের ভেতরে রয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ প্রবণতা। কিন্তু যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বান্দা তারা সম্পর্ক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বুদ্ধি বিবেচনা কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভাষা ও বাচনভঙ্গির মধ্য দিয়ে শিষ্টাচার প্রকাশ করে। এ ধরনের লোকেরা যখন কোনো নাদান মূর্খের সঙ্গে কথা বলে তখন তারা তাদের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে দু:খিত না হয়ে বরং তাদের সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করে। কুরআনের ভাষায়-'ভালো দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করে'।

মানুষের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুন্দর ভাষা ও শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহারের প্রভাব অনস্বীকার্য। পবিত্র কুরআনের শত্রুর সঙ্গেও সুন্দর ভাষায় কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে 'মানুষের উচিত শত্রুর নোংরা কথার জবাব সুন্দর কথা দিয়ে দেওয়া'। সূরা ফুসসিলাতের ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 'সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে'।

বিদ্রূপ যাকেই করা হোক না কেন তা নেতিবাচক। সমাজের ব্যক্তিত্ববান কোনো সদস্যকে যদি ঠাট্টা-মশকরা করে অপমান করা হয় তাহলে সমাজে তিনি যা দিতে পারতেন তা থেকে বঞ্চিত হতে হয় সেই সমাজকে। সুতরাং তাতে সমাজেরই ক্ষতি হয়।

অপরকে তাচ্ছিল্য করার মধ্যে সমাজ ছাড়াও বিদ্রূপকারী নিজেও আক্রান্ত হতে পারে। আল্লাহর স্মরণ থেকে সে দূরে সরে যেতে পারে যা সমাজের অন্যান্য সদস্যের বিশ্বাসের ভিত্তিকে দুর্বল ও নড়বড়ে করে দিতে পারে। কুরআন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে এ ধরনের আচরণকে অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করে এ ধরনের আচরণ পরিহার করতে বলেছে।

যাই হোক বন্ধুরা! হাতে আজ আর সময় নেই। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সমাজে চলার ক্ষেত্রে বহুরকম মানুষের মুখোমুখি হই। সবার সঙ্গেই আমরা যেন শিষ্টাচারপূর্ণ সুন্দর আচরণ করতে পারি সেই প্রত্যাশা রেখে পরিসমাপ্তি টানছি আজকের আসরের। যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/৩