লেবাননে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ কি সম্ভব?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i151214-লেবাননে_হিজবুল্লাহর_নিরস্ত্রীকরণ_কি_সম্ভব
পার্স টুডে: সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমেরিকার চাপ এবং ইসরায়েলের সমর্থনে লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এই প্রস্তাব পশ্চিম এশিয়ার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। 
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ১৬, ২০২৫ ২০:২১ Asia/Dhaka
  • লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ
    লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ

পার্স টুডে: সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমেরিকার চাপ এবং ইসরায়েলের সমর্থনে লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এই প্রস্তাব পশ্চিম এশিয়ার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। 

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইসরায়েল ও কিছু আঞ্চলিক সরকারের সমর্থনে যে পরিকল্পনা উত্থাপিত হয়েছে, তা লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াবে।

ঐতিহাসিক শিকড় ও হিজবুল্লাহর অবস্থান

১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিক্রিয়ায় হিজবুল্লাহ গড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে সামরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকার এক বহুমাত্রিক শক্তিতে রূপ নেয়। দক্ষিণ লেবানন মুক্তি (২০০০) এবং ৩৩ দিনের যুদ্ধে (২০০৬) বিজয়ের মধ্য দিয়ে এটি জাতীয় প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয়। তায়েফ চুক্তি (১৯৮৯) হিজবুল্লাহর অস্ত্রকে প্রতিরোধের বৈধ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব (২০০৬) এবং নভেম্বর ২০২৪-এর যুদ্ধবিরতি অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিরস্ত্রীকরণে জোর দিলেও তা বাস্তবে ব্যর্থ হয়।

মার্কিন প্রস্তাবের উদ্দেশ্য

ওয়াশিংটনের পরিকল্পনায় হিজবুল্লাহর সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ, লেবানন সেনাবাহিনীর দক্ষিণে মোতায়েন, ইসরায়েলের পাঁচটি দখলকৃত এলাকা থেকে প্রত্যাহার, সীমান্ত ইস্যু সমাধান ও 'জাতীয় সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ' অন্তর্ভুক্ত। তবে এটি মূলত ইসরায়েল ও মার্কিন স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে তৈরি। ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না করে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত, শর্তযুক্ত প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অভাব এই পরিকল্পনাকে অবাস্তব করে তুলেছে।

লেবাননের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ

সম্প্রদায়গত বিভাজন: সম্প্রতি লেবানন মন্ত্রিসভায় শিয়া মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনৈতিক রীতি লঙ্ঘন করেছে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। হিজবুল্লাহ ও আমল আন্দোলন এটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। শিয়া মুসলমানরা নিরস্ত্রীকরণকে অস্তিত্ব সংকট হিসেবে দেখে। ২০০৮ সালের অভিজ্ঞতাও দেখায়, এমন পদক্ষেপ গৃহযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে।

লেবানন সেনাবাহিনীর দুর্বলতা: সেনাবাহিনী আংশিকভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হলেও পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ক্ষমতা নেই। অর্থনৈতিক সংকট এ দুর্বলতাকে আরও তীব্র করেছে। তাই সেনাবাহিনীর পক্ষে নিরস্ত্রীকরণ কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব।

সার্বভৌমত্বের অবমূল্যায়ন: যখন ইসরায়েল প্রতিদিন লেবাননের ভূখণ্ডে আক্রমণ চালাচ্ছে এবং কিছু অঞ্চল দখল করে রেখেছে, তখন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা মানে একমাত্র প্রতিরোধশক্তিকে বিলুপ্ত করা।

আঞ্চলিক প্রভাব

হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য হলো "আল আকসা তুফান" অভিযানের পর প্রতিরোধ অক্ষকে দুর্বল করা। ইসরায়েল এই পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আগ্রাসন বৈধতা দিতে চাইছে, ফলে আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। একইসঙ্গে বিদেশি হস্তক্ষেপ, ড্রোন ও স্যাটেলাইট নজরদারি লেবাননের সার্বভৌমত্বকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও পরিণতি

  • রাজনৈতিক অচলাবস্থা বজায় থাকবে এবং পরিকল্পনাটি কাগজেই সীমিত থাকবে।
  • সরকার জোর করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে।
  • জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে যৌথ প্রতিরক্ষা কৌশল প্রণয়ন হতে পারে; যদিও ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে এবং বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না থাকলে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা সম্প্রদায়গত ঐকমত্য ভঙ্গ, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অভাব এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে শুধু অবাস্তবই নয়, বরং লেবাননকে অস্থিতিশীলতা ও বিদেশি নিয়ন্ত্রণের মুখে ঠেলে দিতে পারে। যতদিন না ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হয় এবং কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রতিরোধের অস্ত্রকে জাতীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসেবে দেখা হবে এবং তা কোনোভাবেই আলোচনার টেবিলে আসবে না।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৬