মাথাবিহীন পুত্রের মুখে শেষ চুমু দিতে পারলেন না এক ইরানি শহীদের মা
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i152274-মাথাবিহীন_পুত্রের_মুখে_শেষ_চুমু_দিতে_পারলেন_না_এক_ইরানি_শহীদের_মা
পার্সটুডে- আবুল ফজল রেজায়ি রোশান তেহরানের উপর ইসরায়েলের আক্রমণের সময় তার সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
(last modified 2025-09-23T14:18:18+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫ ২০:১৩ Asia/Dhaka
  • • শহীদ একতেদার আবুল ফজল রেজায়ি রোশান
    • শহীদ একতেদার আবুল ফজল রেজায়ি রোশান

পার্সটুডে- আবুল ফজল রেজায়ি রোশান তেহরানের উপর ইসরায়েলের আক্রমণের সময় তার সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

২৩ জুন দুপুর ১২:০০ টায়, তেহরানের নীল আকাশ ধূসর বর্ণে পরিণত হয়। শত্রুর যুদ্ধবিমানের ভারী ছায়া দেখে আবুল ফজলের ঘুমন্ত চোখ জেগে ওঠে এবং সে দ্বিধা ছাড়াই সৈনিক সহকর্মীদের আবাসস্থলের দিকে ছুটে যায়। সে তার বন্ধুদের জাগিয়ে তোলে এবং বলে: "ওরা আক্রমণ করেছে, এখান থেকে দ্রুত চলে যাও!" দৈনিক হামশাহরি পত্রিকার অনলাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, তার সহকর্মীরা চিৎকার করছিল: "আবুল ফজল, তুমিও জলদি বেরিয়ে এসো!" তখন আবুল ফজল বলেন: "না, আমার আরেকজন সহকর্মী হলের শেষ প্রান্তে ঘুমাচ্ছে, আমাকে তাকে জাগিয়ে তুলতেই হবে।" যখন শেষ বোমাটি ফেলা হয়েছিল, তখন আবুল ফজল এবং তার সহকর্মী দুজনেই ধ্বংসস্তূপের নীচে পড়ে ছিলেন।

তাবারিস্তানের একজন যোদ্ধা

২১ বছর বয়সী শহীদ আবুল ফজল রেজায়ি রোশান পাঁচ মাস ধরে তেহরানের ফারাজে সেনা ব্যারাকে কর্মরত ছিলেন; মাজান্দারান অঞ্চলের একজন সেনা সদস্য এবং রোশানাবাদ গ্রামের একজন সাহসী মানুষ। তার বাবা একজন কৃষক, একজন কৃষক যার হাত ধানক্ষেতের সুবাস ছড়ায়। তার মা আবুল ফজল এবং ইব্রাহিমকে তার সমস্ত হৃদয় ও প্রাণ দিয়ে বড় করেছিলেন, কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরায়েল ২০২৫ সালের ২৩ জুন তাদের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে দেয়।

আবুল ফজলের বাবা, মোহাম্মদ আলী রেজায়ি রোশান বলেন: “আবুল ফজল বলতেন যে আমাদের রক্ত ​​তাবারি, তাবারিরা এত সহজে আত্মসমর্পণ করে না। আমাদের রক্তে একজন যোদ্ধা আছে। আমাদের ভূমি রক্ষার কথা বলতে গেলে, আমরা মরব। যখন আমি আবুল ফজলকে ফিরে আসতে বললাম, তখন সে(পুত্র) বলল, "বাবা, আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার লোক নই, আমি শেষ পর্যন্ত থাকব; আমরা শহীদ হব; তোমার বাবা শহীদ হবেন এবং তোমার মা শহীদ হবেন।"

আল্লাহ চেয়েছিলেন তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি হোন

গ্রামের সকল মহিলা যদি এই শহীদের মাতা সামানা খানুমের হাত ধরেন, তবুও তিনি আর উঠতে পারবেন না। তার পুত্র আবুল ফজল মাথাবিহীন অবস্থায় লাশ হয়ে ঘরে ফিরে এসেছে। মা বলেন: "আমি দুই মাস ধরে তাকে দেখিনি। যখন আমি তার দেহ দেখছিলাম, আমি বলেছিলাম যে আমি তার মুখ চুম্বন করতে চাই। তারা বলেছিল: 'তোমার পুত্রের মাথা নেই'। আমি বললাম: আমাকে অন্তত তার পা চুম্বন করতে দিন। আমি আমার পুত্রের মাথাবিহীন, খণ্ডিত দেহ আবুল ফজলের জন্য মরবো। আমি আল্লাহর কাছে শপথ করছি যে যদি আমি তাকে শহীদ ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে হারিয়ে ফেলতাম, তাহলে আমি এক মুহূর্তও টিকতে পারতাম না। যেন এটিই শাহাদাতের গুণ যা পরিবারের ধৈর্য এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।"

শহীদ রেজায়ি রোশান তার পরিবারের সাথে

মা, আমাকে হালাল করো!

যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন সৈন্যদের বলা হয় যে রাতে সেনা আবাস্থলে না থাকাই ভালো; কোনো আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতদের বাড়িতে যাওয়া উচিত। কিন্তু আবুল ফজলের তেহরানে কেউ ছিল না। সে এতটাই লাজুক ছিল যে সে তার বন্ধুদের বাড়িতেও যেত না। শেষবার যখন সে তার মায়ের সাথে কথা বলেছিল, তখন সে বলেছিল যে "আমরা রাতে ইমাম জাদেহের মাজারে গিয়ে ঘুমাই।" কিন্তু ঘটনার আগের রাতে তারা আর ইমাম জাদেহে যায়নি। সেসহ বেশ কিছু সৈন্য ব্যারাক এলাকায় অবস্থান করছিল। তার সহকর্মীরা আবাস্থলে ঘুমাচ্ছিল। যখন আবুল ফজল পাহারা শেষ করল, তখন সে ক্লান্ত চোখে আকাশের দিকে তাকাল, দেখল যুদ্ধবিমানগুলো নির্দয়ভাবে সেনা ব্যারাকের দিকে এগিয়ে আসছে।

শহীদ ইকতেদার আবুল ফজল রেজায়ি রোশান

মা বলেন: "আবুল ফজলের দাফনের সাত দিন পর, তেহরান থেকে বেশ কয়েকজন সৈন্য আমাদের বাড়িতে এসেছিল।

তাদের মুখের বিষণ্ণতা আমার জ্বলন্ত হৃদয়কে সতেজ করে তুলেছিল। তারা এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলল: মা, আমাদের ক্ষমা করুন! আমরা আবুল ফজলের কাছে ঋণী। আমরা যদি এখন বেঁচে থাকি, তাহলে তা তোমার ছেলের পৌরুষত্ব এবং বীরত্বের জন্যই। যখন তারা প্রথম বোমাটি ফেলেছিল, তখন সে দৌড়ে যাওয়ার পরিবর্তে আমাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছিল। সে আবাস্থলে ফিরে গিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে একজন হলের শেষ প্রান্তে ঘুমাচ্ছিল। আবুল ফজল তাকে জাগিয়ে তুলতে গিয়েছিল। যখন তারা শেষ বোমাটি ফেলেছিল, তখন তারা দুজনেই একসাথে শহীদ হয়ে গিয়েছিল।"

সে পাইলট হতে চেয়েছিল

মা বলেন: আবুল ফজল পাইলট হতে চেয়েছিল। এমনকি সে পাইলট পরীক্ষাও দিয়েছিল এবং ৩০০ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। তার সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর পাইলট প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই সে তার শাহাদাতের ডানা মেলে উড়ে চলে গেল।"#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।