সিরিয়ায় সংকট ও সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য কী?
-
ইসরায়েলি আক্রমণের ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি
পার্সটুডে- সিরিয়ার দামেস্ক শহরের উপকণ্ঠে বিইত-জিন গ্রামে রক্তক্ষয়ী গণহত্যা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি বাহিনী আবারও সামরিক যান ও ট্যাঙ্ক নিয়ে এই অঞ্চলে এবং দক্ষিণ সিরিয়ার দিকে আক্রমণ চালিয়েছে।
গতকাল শনিবার দামেস্ক শহরের উপকণ্ঠে বিইত-জিন গ্রাম এবং আরও কিছু এলাকায় আবারও প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের সবচেয়ে রক্তাক্ত আক্রমণটি ঘটেছে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিইত-জিন এলাকায়; এই আক্রমণে স্থানীয় সূত্রের মতে, অন্তত ১৪ জন সিরীয় নাগরিক নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে এবং জরুরি সহায়তা বাহিনীর প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি ইসরায়েলি বাহিনীর বিইত-জিন গ্রামে আক্রমণ ও বেশ কয়েকজন সিরীয় নাগরিকের হত্যার নিন্দা করেছেন।
বেইত-জিন গ্রাম দামেস্ক শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সেই সিরীয় ইসলামপন্থী গ্রুপের সদস্যদের আটক করা, যারা ইসরায়েলি বাহিনীর সিরিয়া দখলের বিরোধিতা করছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর দামেস্কের পতনের পর থেকে সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানটি ১৯৮২ সাল থেকে ফিলিস্তিনের বাইরে কোন আরব দেশের প্রতি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় স্থল আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংকট, অর্থনৈতিক ধ্বংসাবশেষ এবং সশস্ত্র বাহিনীর দুর্বলতাকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করেছে এবং আকাশ পথে ৫০০টিরও বেশি হামলা চালিয়ে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন সামরিক ঘাঁটি, রাডার সিস্টেম, বিমানবাহিনীর নানা স্থাপনা, গোয়েন্দা সদর দপ্তর, গবেষণা কেন্দ্র, এমনকি দামেস্ককে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
সিরিয়ায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণ, মার্কিন-ইসরায়েলি শান্তি পরিকল্পনার ব্যর্থতা ও প্রতারণামূলক প্রকৃতিকেই তুলে ধরছে, কারণ এসব আক্রমণ শান্তির প্রতিষ্ঠার কোনো ইঙ্গিত বহন করে না বরং এর উল্টো বার্তা দিচ্ছে। শান্তির কথা বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ, দখল এবং বিমান ও স্থল হামলা সিরিয়ার প্রতি তাদের বিদ্বেষী আচরণের ইঙ্গিত দেয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর মানবতাবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডে পশ্চিমা নিষ্ক্রিয় ও নীরব থেকে এর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দখলদার ইসরায়েলের বাহিনী সিরিয়ায় নিজেদের দখল টিকিয়ে রাখতে মার্কিন সমর্থনে তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে, যা এই অঞ্চলের জনগণের মনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের শান্তি প্রস্তাবের প্রতি গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য শান্তি নয় বরং সিরিয়ার বিভক্তি, কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা এবং তেল আবিবের জন্য নিরাপত্তার পরিবেষ্টন গড়ে তোলা।
অন্যদিকে, এসব হামলা আঞ্চলিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি করতে পারে।
যদিও ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ায় সংকট সৃষ্টি করে প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী করতে চাইছে এবং দখলকৃত অঞ্চলে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে গোলান মালভূমি দখল এবং সিরিয়ার উপর একাধিক আক্রমণ জাতিসংঘে বারবার নিন্দিত হয়েছে। যদিও এমন নিন্দা ইসরায়েলের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি, তবে এটি তেল আবিবের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সুবিধায় আঘাত ফেলছে।
তবে এসব করেও পার পাবে না দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় এবং আঞ্চলিক প্রতিরোধের মনোবল শক্তিশালী হবে। এ কারণে তেল আবিব তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।#
পার্সটুডে/এসএ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।