দুর্নীতি মামলায় ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু: মন্ত্রীদের সাফাই, বিরোধীদের সমালোচনা
https://parstoday.ir/bn/news/event-i154590-দুর্নীতি_মামলায়_ক্ষমা_চাইলেন_নেতানিয়াহু_মন্ত্রীদের_সাফাই_বিরোধীদের_সমালোচনা
দীর্ঘদিনের দুর্নীতি মামলায় প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনমতের তীব্র চাপের মধ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
(last modified 2025-12-01T10:44:31+00:00 )
নভেম্বর ৩০, ২০২৫ ১৯:৫২ Asia/Dhaka
  • প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু'র চিঠি
    প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু'র চিঠি

দীর্ঘদিনের দুর্নীতি মামলায় প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনমতের তীব্র চাপের মধ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জমা দেওয়া এবং আজ (রোববার) প্রকাশিত এক পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, 'জনস্বার্থে' এই ক্ষমা অত্যন্ত জরুরি। নেতানিয়াহু লিখেছেন, তার বিচার ইসরায়েলি সমাজে তীব্র বিভেদ সৃষ্টি করেছে। জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। তিনি অবশ্য চিঠিতে কোনো অপরাধ স্বীকার করেননি এবং রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো প্রতিশ্রুতিও দেননি।

লিখেছেন, "অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছি—যাতে জাতীয় ঐক্য পুনরুদ্ধার করা যায় এবং সরকার দেশের নিরাপত্তা সংকট মোকাবিলায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। রাষ্ট্রের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"

ইসরায়েলি আইন অনুযায়ী ক্ষমা দেওয়ার একমাত্র অধিকার প্রেসিডেন্টের হাতে। হারজগের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, তাঁরা চিঠি পেয়েছেন এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর সই করা চিঠিটি আইনজীবী অমিত হাদাদ প্রেসিডেন্টের দপ্তরে জমা দেন।  নেতানিয়াহুর মতে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি আদালতে নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে আগ্রহী, কিন্তু 'জনস্বার্থ ভিন্ন কিছু দাবি করে'।

মন্ত্রীদের সাফাই

এদিকে, ক্ষমা চেয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠানোর পর থেকেই নেতানিয়াহুর হয়ে সাফাই গাইছে তার মন্ত্রিসভা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমার আবেদন মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েল কাটজ বলেন, "ইসরায়েল আজ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে জটিল নিরাপত্তা বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। একদিকে পুরানো শত্রুরা তাদের শক্তি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছে; অন্যদিকে, এই অঞ্চলে নতুন শক্তি ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ লক্ষ্য নিয়ে উত্থানের চেষ্টা করছে। এই সময়ে, আমাদের সামনে কৌশলগত হুমকির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রয়োজন।" 

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্টে যেমন উল্লেখ করেছেন, ক্ষমা প্রদানই হল ইসরায়েলি সমাজের সাথে প্রায় এক দশক ধরে বিদ্যমান গভীর বিভেদের অবসান ঘটানোর এবং আমাদের সামনের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশকে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করার একমাত্র উপায়। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন এবং তাকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের নেতৃত্ব অব্যাহত রাখার অনুমতি দিতে হবে।"

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, "আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়াও যেকোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যক্তির কাছে এটা স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। তাই আমি প্রেসিডেন্টর কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা করার আহ্বান জানাচ্ছি।" 

বিরোধীদের সমালোচনা

এদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইয়ার ল্যাপিডসহ ইসরায়েলের অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতারা। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতির বিচার ক্ষমার মাধ্যমে শেষ হলে আইনের শাসনের চরম ক্ষতি হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার অভিযুক্ত কর্মকাণ্ডের জন্য দায় এড়ানোর সুযোগ করে দেবে।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, “দোষ স্বীকার, অনুশোচনা প্রকাশ এবং অবিলম্বে রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া নেপালনিয়াহুকে ক্ষমা দেওয়া সম্ভব নয়।”

বামপন্থী ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা ইয়াইর গোলান এক্স–এ লিখেছেন, “শুধুমাত্র দোষী মানুষই ক্ষমা চায়। আট বছরের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে যখন কোনো মামলা ভেঙে পড়েনি, তখন নেতানিয়াহু ক্ষমা চাইছেন।”

মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হারজগকে চিঠি পাঠিয়ে নেতানিয়াহুর পক্ষে ক্ষমা দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি লিখেন,
“আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পূর্ণ ক্ষমা দিন। তিনি যুদ্ধের সময় দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখন দেশকে শান্তির পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়- ৪৮% মানুষ নিঃশর্ত ক্ষমার বিপক্ষে, ৪৪% পক্ষে এবং ৮% অনিশ্চিত।

ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট জানায়, সাধারণত রায় ঘোষণার পরই ক্ষমা দেওয়া হয়। বিচারাধীন অবস্থায় ক্ষমা দেওয়া হলে বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কার্যত পাশ কাটানো হয়।

নেতানিয়াহুই প্রথম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর বিচার শুরু হয় মে ২০২০ সালে, তিনটি আলাদা মামলায়। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে। এছাড়া, প্রত্যেক মামলায় জালিয়াতি এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এসব মামলায় বিচার শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি বিচার কাজ।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩০