মার্চ ২৩, ২০১৮ ১৬:২৯ Asia/Dhaka

সুরা তুর পবিত্র কুরআনের ৫২ তম সুরা। মক্কায় নাজিল-হওয়া এই সুরায় রয়েছে ৪৯ আয়াত। তুর শব্দটির অর্থ পাহাড়। সুরা তুরের প্রথম আয়াতেই রয়েছে এই শব্দটি।

সুরা তুরের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে খোদায়ী শাস্তি, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্য, কাফিরদের শাস্তি, বেহেশতের নানা নেয়ামত ও মহান আল্লাহর নানা অনুগ্রহ, বিশ্বনবী (সা)'র নবুওত ও শত্রুদের নানা অপবাদ এবং একত্ববাদ।  এ ছাড়াও ধৈর্য ধরতে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মহানবী (সা)'র আহ্বানও এই সুরায় স্থান পেয়েছে।

সুরা তুরের প্রথম দিকে রয়েছে বেশ কয়েকটি শপথসূচক বাক্য। এই শপথ-বাক্যগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কিয়ামত বা পুনরুত্থান এবং মানুষের কৃতকর্মের বিচার অনুষ্ঠানের অনিবার্য ও গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরতে।

 

সুরা তুরের উল্লেখিত তুর পর্বত হচ্ছে সেই পর্বত যেখানে হযরত মুসা (আ)'র ওপর নাজিল হয়েছিল মহান আল্লাহর ওহি।

এই সুরার প্রথম ছয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'কসম তূরপর্বতের (যেখানে নাজিল হয়েছিল ওহি),এবং শপথ লিখিত কিতাবের, প্রশস্ত পত্রে, কসম আবাদ গৃহের, এবং সমুন্নত ছাদের তথা আসমানের, এবং উত্তাল সমুদ্রের।'

কোনো বিষয়কে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য শপথ নেয়া হয়। মহান আল্লাহ যেসব বস্তু বা বিষয়ের নামে শপথ নেন সেসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শপথগুলো মহান আল্লাহর সার্বজনীন বিধানের জগত ও নির্বাচনযোগ্য বিধানের যে জগত- এ উভয় জগতের ওপরই আল্লাহর কর্তৃত্বের অক্ষকে ঘিরে আবর্তিত হয়। যেমন, অসীম সুউচ্চ আকাশসহ নানা সৃষ্টি মহান আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন। তদ্রূপ পবিত্র কুরআন ও কাবা ঘর মহান আল্লাহর অতুল ক্ষমতার প্রকাশ। তাই মহান আল্লাহ শপথ নিয়েছেন আকাশের এবং কাবা ঘর বা আবাদ-ঘরের ও পবিত্র কুরআনের। আর এটা স্পষ্ট যে এ বিষয়গুলোসহ মোট ছয়টি শপথ নিয়ে মহান আল্লাহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছেন এখানে। আর ওই বিষয়টি হল কিয়ামত ঘটানোর এবং মৃতদেরকে আবারও জীবিত করার ক্ষমতা। তাই কিয়ামত ঘটার বিষয়ে ও মৃতদের জীবিত হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।  

 

সুরা তুরের সপ্তম ও অষ্টম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: 'আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।'

কিয়ামত বা পুনরুত্থানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এই সুরার নবম ও দশম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'সেদিন আকাশ গতিশীল ও প্রকম্পিত হবে প্রবলভাবে এবং পর্বতমালা হবে চলমান।'

- মহান আল্লাহর এই বক্তব্যের আলোকে বোঝা যায় কিয়ামতের প্রাক্কালে গ্রহ-নক্ষত্র ও মহাকাশের বিরাজমান ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে। গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্ররাজি তাদের কক্ষপথ এবং অক্ষ থেকে বিচ্যুত হবে। পুরনো মহাকাশ-ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে দেখা দেবে এক নতুন বিশ্ব-জগত। সেদিন পাহাড়-পর্বতগুলো গতিশীল হয়ে ছিন্ন-ভিন্ন হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। কিয়ামতের সময় ভূমি সমতল,পানিহীন ও গাছপালাহীন হয়ে যাবে। মোটকথা পৃথিবীতে ও বিশ্ব-জগতে মানুষের জন্য সেদিন কোনো আশ্রয়-স্থল থাকবে না। মানুষকে সেদিন তার কৃতকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

 

সুরা তুরের ১১ নম্বর আয়াতে মিথ্যাবাদীদের পরিণতির দিকে ইশারা করে মহান আল্লাহ বলছেন:  'সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।'

-লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া বিশ্ব-জগতে সবাই যখন আতঙ্কে শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থার শিকার হবে সে সময় আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকারকারী খোদাদ্রোহীরা আরও বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত হবে এবং তারা সেদিন খোদায়ী শাস্তির শিকার হবে।

সুরা তুরের ১২ নম্বর আয়াতে এই মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলছেন: 'যারা ক্রীড়া-কৌতুকের ছলে মিছেমিছি কথা বানায়।'

-কাফিররা পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোকে মিথ্যা ও ইসলামের নবীর নানা মু’জিজা বা অলৌকিক ঘটনাগুলোকে জাদু বলে উল্লেখ করত। এভাবে তারা বাস্তবতাকে উপহাস করত এবং মহানবী (সা)-কেও পাগল বলতো কুরআনের অধিকারী হিসেবে। কাফিররা সত্যের মোকাবেলায় লড়াই করতে যে কোনো ধরনের অপবাদ প্রচার ও মিথ্যা বলতে কুণ্ঠিত হত না।

 

এর পরের দুই আয়াতে খোদাদ্রোহী কাফেরদের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলছেন:'সেদিন তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর বলা হবে: এই সেই আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে।'

 

তাদেরকে আরও বলা হবে: 'এই শাস্তিটা কি জাদু,তোমরা কি চোখে দেখছ না? এতে তথা জাহান্নামে প্রবেশ কর অতঃপর তোমরা সবর কর অথবা না কর, উভয়ই তোমাদের জন্য সমান। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হবে।'

-হ্যাঁ, কাফেরদের কৃতকর্ম আজ তাদেরকেই গ্রাস করেছে। অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে তথা ইহ-জগতে যা যা করেছে তা-ই প্রতিমূর্ত হবে কিয়ামত বা বিচার দিবসে। এই আয়াত এটাও বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহান আল্লাহ ন্যায়-বিচারক। জাহান্নামের আগুন মানুষ অর্জন করেছে তারই কৃতকর্মের মাধ্যমে। অন্য কথায় মহান আল্লাহ কারো ওপর জুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজেই নিজের ওপর জুলুম করে।#

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/২৩