এপ্রিল ১৮, ২০১৮ ১৯:২৯ Asia/Dhaka

সুরা নাজমের গত পর্বের আলোচনায় আমরা বিশ্বনবীর (সা) মে'রাজের বর্ণনা শুনছিলাম। মহানবী (সা) পবিত্র মে'রাজের সফরে আধ্যাত্মিকভাবে খোদাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। অন্য কথায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম হাবিব ও শেষ রাসুলের পবিত্র হৃদয়ের চোখে অনুভূত ও দৃশ্যমান হয়েছেন।

মে'রাজে এভাবেই তিনি মহান আল্লাহর সবচেয়ে কাছে তথা সিদরাতুল মুনতাহা নামক পর্যায় বা অবস্থানে আসেন। অর্থাৎ কোনো মানুষ বা বান্দাহর পক্ষে আল্লাহর এতো ঘনিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি যতটা মেরাজে অর্জন করেছিলেন বিশ্বনবী (সা)। অথচ আলোর পর্দাগুলোয় ঢাকা ছিল সিদরাতুল মুনতাহা। সিদরাতুল মুনতাহা হচ্ছে বেহেশতের কাছাকাছি একটি স্থান  যা মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমতে ভরপুর। মহানবী (সা) সেই আলোকময় তথা নুরানি জগতে আল্লাহর সর্বোচ্চ নৈকট্য বা দিদার লাভ করেন। সেখানে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম হাবিব বা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে নানা বিধি-বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন যেগুলো হাদিসে কুদসি নামে মে'রাজের চির-স্মরণীয় নিদর্শন হয়ে আছে।

 

ওয়ালিদ বিন মুগিরা যখন বিশ্বনবী (সা)'র কাছে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের উদ্যোগ নেয় তখন কোনো কোনো মুশরিক তাকে তিরস্কার করে বলেছে: আমাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ধর্ম ত্যাগ করেছ ও তাদেরকে বিভ্রান্ত বলে ভাবছ এবং ভেবেছ তারা সবাই খোদার দোযখে যাবে! জবাবে ওয়ালিদ বলে, সত্যিই আমি আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করি। ওই তিরস্কারকারী মুশরিক তখন বলল: তোমার মালের কিছু অংশ যদি আমাকে দাও এবং শির্ক তথা অংশীবাদীতায় ফিরে আস তাহলে তোমার শাস্তি আমি আমার গর্দানে নেব। ওয়ালিদ ওই তিরস্কারকারীর এ প্রলোভনে বিভ্রান্ত হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নেয়।  তবে সে যে অর্থ বা সম্পদ এ জন্য ওই মুশরিককে দেবে বলে কথা হয়েছিল তা তাকে না দিয়ে অতি অল্প অর্থ বা সম্পদ দেয়। এ অবস্থায় সুরা নাজম্-এর এই আয়াত তথা ৩৩ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। এই আয়াতে ঈমান আনার পরও বেঈমান হয়ে-পড়া ওয়ালিদকে তিরস্কার করা হয়। একজনের গোনাহ বা অপরাধের কারণে অন্যকে শাস্তি দেয়া কিংবা কারো গোনাহ'র বোঝা অন্য কারো পক্ষে বহন করা সম্ভব – এমন অবাস্তব ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছে এই আয়াত। এ আয়াত বলছে যে প্রত্যেক ব্যক্তিই কেবল নিজের কাজের ফল পাবে।

 

সুরা নাজম্-এর ৩৩ নম্বর ও পরের কয়েক আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

আপনি কি তাকে দেখেছেন,যে ইসলাম ও দান থেকে  মুখ ফিরিয়ে নেয়? এবং দেয় সামান্যই ও (বেশি দেয়ার বিষয়ে)পাষাণ হয়ে যায়- (তার ধারণা এটা যে অন্য কেউ তার গোনাহর বোঝা বহন করবে)। তার কাছে কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে,  বাস্তবতাকে কি সে দেখে? তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে,  এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে তার দায়িত্ব পালন করেছিল? কিতাবে এই আছে যে, কোনো ব্যক্তি কারও গোনাহ নিজে বহন করবে না। এবং মানুষ তা-ই পায়,যা সে করে,...

অর্থাৎ কে তাদেরকে খবর দিয়েছে যে একজনের পাপের বোঝা অন্য কেউ বহন করতে সক্ষম?

-এখানে মহান আল্লাহর সার্বজনীন একটি নীতি তুলে ধরে বলা হচ্ছে যে হযরত ইব্রাহিম ও মুসা নবীর শরিয়ত তথা তাদের কাছে নাজিল-হওয়া ধর্ম গ্রন্থেও এই একই নীতি বা বিধান বজায় ছিল। আর খোদায়ী এ বিধান বা নীতি হল কেউই অন্য কারো পাপের বোঝা বহন করতে সক্ষম নয়, বরং প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার পাপ বা কাজের পরিণতি ভোগ করতে হবে। সব যুগে ও সব নবীর শরিয়তেই খোদায়ী এই বিধান বজায় ছিল এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। 

এখানে এটাও বলা হচ্ছে যে মানুষ যা অর্জন করে তা তারই পরিশ্রম বা চেষ্টার ফসল। কেউ যদি কোনো কাজ করে থাকে সৎ উদ্দেশ্যে তাহলে মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ সৎ-উদ্দেশ্যকেও পছন্দ করেন কেবল সৎ কাজকেই নয়। তাই মানুষের সৎকাজের প্রচেষ্টার ফল তাদেরকে শিগগিরই দেখাবেন মহান আল্লাহ। কিয়ামত বা বিচার-দিবসে তাদের এসব কাজ স্পষ্টভাবে বা সরাসরি তাদের চোখের সামনেই তুলে ধরা হবে এবং তাদেরকে এসব কাজের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান দেয়া হবে।  অতীতের ধর্মগ্রন্থগুলোতেও এই খোদায়ী নীতি তুলে ধরা হয়েছিল যে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজ ও প্রচেষ্টা অনুযায়ী ফল পাবেন এবং প্রত্যেকেই নিজ পাপের জন্য নিজেই দায়বদ্ধ।  

মহান আল্লাহর এই মহান নীতি- তথা প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল নিজেই নিজের পাপের জন্য দায়ী এবং একের পাপের দায় বা বোঝা অন্য কেউ বহন করবে না- এ নীতি ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে। তাই মুক্তির জন্য সবাইকে পাপ বর্জন করতে হবে ও  সৎ কাজের পাশাপাশি ভুলে কোনো পাপ করে ফেললেও সে জন্য তওবা করতে হবে। এইসব আয়াত থেকে  এটা স্পষ্ট যে পাপের শাস্তি কেবল প্রকৃত পাপীকেই গ্রাস করবে এবং কেউই অন্যের পাপের বোঝা বহন করতে সক্ষম নয়।

সুরা নাজম্-এর ৪২ নম্বর আয়াতের পর এটা তুলে ধরা হয়েছে যে এই বিশ্ব চরাচরে যা কিছু ঘটে ও যত ব্যবস্থাপনাই দেখা যায় তা মহান আল্লাহরই হুকুম বা বিধানের আওতাধীন। মানুষের জন্ম ও মৃত্যু থেকে শুরু করে সব কিছুই আল্লাহর হুকুম বা বিধানের আওতাধীন। একত্ববাদের বাস্তবতা তুলে ধরার পর এই সুরার শেষ আয়াতে শির্ক বর্জনের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন:

অতএব আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর।

-অর্থাৎ যদি সরল-সঠিক পথে এগুতে চাও এবং অতীতের খোদাদ্রোহী জাতিগুলোর পরিণতি এড়াতে চাও তাহলে বিশ্বজগতের সব কিছুর উৎসমূল ও স্রষ্টার পবিত্র সত্তার উদ্দেশেই সিজদা কর। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/ ১৮