এপ্রিল ২৬, ২০১৮ ১৬:৩৮ Asia/Dhaka

সুরা কামার পবিত্র কুরআনের ৫৪ নম্বর সুরা। মক্কায় নাজিল-হওয়া এ সুরার আয়াত-সংখ্যা ৫৫। কামার শব্দের অর্থ চাঁদ।

এ সুরার প্রথম আয়াতে এসেছে এই শব্দ। সুরা কামারে যেসব বিষয়ে বক্তব্য এসেছে সেসবের মধ্যে রয়েছে: কিয়ামতের সময় ঘনিয়ে আসা,চাঁদ বিদীর্ণ করার ঘটনা,খোদায়ী নিদর্শন বা মু'জিজার সত্যতা অস্বীকার করা ও এ ব্যাপারে গোঁড়ামি বজায় রাখা, হযরত নুহ নবীর জাতির খোদাদ্রোহীতা ও তুফান বা মহাপ্লাবনের ঘটনা,আদসামুদ ও লুত জাতির খোদাদ্রোহীতার কাহিনী,ফেরাউন ও তার দলবলের শাস্তি এবং এই জাতিগুলোর সঙ্গে মহানবীর (সা) বিরোধী ও মুশরিক গোত্রগুলোর তুলনা।  এ ছাড়াও কিয়ামত বা বিচার-দিবসে পাপীদের শাস্তি ও খোদাভীরুদের জন্য নির্ধারিত মহাপুরস্কার সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে এই সুরায়।

 

সুরা কামারের আয়াতগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট তবে খুবই জোরালো ও আবেদনময়।  

 

এ সুরার প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:  'কিয়ামত আসন্ন, াঁদ স্পষ্টভাবেই দুই ভাগে বিদীর্ণ হয়েছে।'

-এখানে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইশারা করা হয়েছে। প্রথমত কিয়ামত বা বিচার-দিবস আসন্ন যার ফলে বদলে যাবে গোটা বিশ্ব-জগত ও এর মাধ্যমে ইহকালের অবসানের পর ঘটবে পারলৌকিক জগতের সূচনা। দ্বিতীয়ত বিশ্বনবীর হাতের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা যা মহান আল্লাহর সব কিছু করার ক্ষমতা তুলে ধরে। এ ঘটনা বিশ্বনবী (সা)'র দাওয়াতের সত্যতাকেও তুলে ধরে।

 

চাঁদ বিভক্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়: সে রাতটি ছিল মাসের ১৪ তারিখের রাত।  আবুজাহ্‌লসহ একদল মুশরিক ও একদল ইহুদি মহানবীর (সা) কাছে এসে বলে যে,হে মুহাম্মাদ! প্রত্যেক নবীই তাঁর নবুওতের সত্যতা প্রমাণের জন্য মু'জিজা দেখিয়ে গেছেন। আপনিও আপনার নবুওতের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে আমাদেরকে কোনো মু'জিজা বা অলৌকিক ঘটনা দেখান। মহান আল্লাহর কাছে যদি আপনার বিশেষ কোনো মর্যাদা থেকে থাকে তাহলে  চাঁদকে আমাদের জন্য দুই ভাগ বা দুই টুকরো করুন। আর তা ঘটার জন্য বিশ্বনবী (সা) মহান আল্লাহর কাছে আবেদন করেন। ফলে চাঁদ হঠাৎই দুই ভাগ হয়ে যায়। মহান আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাতে মহানবী সিজদা আদায় করেন এবং মহানবীর সাহাবিরাও একইভাবে সিজদা করেন। এরপর চাঁদ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু মুশরিকরা বলল: হে মুহাম্মাদ! আমাদের লোকেরা যখন ইয়েমেন ও সিরিয়া থেকে ফিরে আসবে তখন তাদেরকে প্রশ্ন করবো যে তারা সেখানেও চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখেছিল কিনা।  যদি তারা বলে যে তারা সেখানে এ ধরনের কিছু দেখেনি তাহলে বুঝবো যে আপনার কাজটা ছিল যাদু বা সম্মোহন মাত্র।

 

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যক্তিরা মক্কায় পৌঁছে জানায় যে তারা চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখেছে।  কিন্তু তা সত্ত্বেও মুশরিকরা ঈমান আনেনি। এ প্রসঙ্গে সুরা কামারের দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'তারা তথা কাফির মুশরিকরা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো  একের পর এক চলতে থাকা বা স্থায়ী জাদু।' -অর্থাৎ এই ইশারা করা হচ্ছে যে মক্কার কাফির-মুশরিকরা এর আগেও বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা)’র অনেক মু’জিজা দেখেছে,কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাঁকে মহান আল্লাহর নবী বলে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। আর এ জন্য তারা অজুহাত দেখিয়ে বলতো যে মুহাম্মাদ তো জাদুকর! (নাউজুবিল্লাহ) আসলে সত্যকে অস্বীকার করার জন্যই কাফির-মুশরিকরা নানা অজুহাত দেখাতো।

 

উল্লেখ্য আবুজাহ্‌লসহ ওই আরব মুশরিকরা এই মু’জিজা অস্বীকার করে একে জাদু বলে অভিহিত করে। কিন্তু  উপস্থিত ইহুদিরা চাঁদ দুই ভাগ হওয়ার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কারণ,ওই ইহুদিরা তাওরাতে পড়েছিল যে হযরত মূসা (আ.)’র উত্তরসূরি হযরত ইউশা (আ.)’র জন্য মহান আল্লাহ চাঁদ ও সূর্যকে স্থির করে রেখেছিলেন। রাসূল (সা.) চাঁদকে এত স্পষ্টভাবে দুই টুকরা করেন যে ওই দুই টুকরার ব্যবধানের মধ্যে হেরা পর্বত দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু আবু জাহ্‌ল বলে ওঠে, “তিনি নজরবন্দি করেছেন। যেসব লোক বিদেশে গেছে তারা ফিরে এসে সমর্থন জানালে তখন বুঝব।” বিদেশ থেকে আসা লোকেরা দেশে ফিরে এসে এ ঘটনার সত্যতাকে সমর্থন করলেও আবুজাহ্‌ল বলে,“তিনি গোটা পৃথিবীর সব লোককে নজরবন্দি করেছেন।

 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মালাবার রাজ্যের তৎকালীন রাজা চক্রবর্তী ফারমাস তথা চেরামান পিরুমেল আকাশে চাঁদ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার ওই অলৌকিক ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে আরব দেশে শেষ নবী(সা.)’র আবির্ভাব ঘটেছে তখন তিনি মক্কায় আসেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ভারতের ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখে ফেরেশতা’য় ওই ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে।
মার্কিন মহাশূন্য সংস্থা নাসার নভোচারীদের মাধ্যমে তোলা ছবিতেও চাঁদের মধ্যে গভীর ফাটলের চিহ্ন বা দাগ দেখা গেছে এবং এ থেকে স্পষ্ট হয় যে কোনো এক সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। ভারতীয় রাজা যে ওই  ঘটনা দেখেছিলেন তার লিখিত বিবরণের একটি প্রাচীন দলিল বর্তমানে লন্ডনে ভারতীয় দপ্তরের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই দলিলে ভারতীয় সেই রাজার ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ওই রাজা ভারতের দিকে ফেরার পথে ইয়েমেনে মারা যান।

 

সুরা কামারের তৃতীয় আয়াতে খোদায়ী নিদর্শন বা মু'জিজা ও বিশ্বনবী (সা)'র দাওয়াত অস্বীকারের কারণ এবং এর অশুভ পরিণতির কথা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলছেন: 'তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজের পরিণতি যথাসময়ে স্থির করা হয়।'

-কাফির মুশরিকরা প্রবৃত্তির তাড়নার বা নিজ খেয়াল-খুশির আনুগত্যের কারণে খোদায়ী নিদর্শন বা মু'জিজা ও বিশ্বনবী (সা)'র দাওয়াত এবং তাঁর নবুওতকে অস্বীকার করছে। ভোগবাদ, পাপাচার ও লাগামহীনতায় আসক্তির কারণে কাফির-মুশরিকরা সত্যের আহ্বানকে গ্রহণ করেনি। কারণ এই আহ্বান বা দাওয়াতকে গ্রহণ করলে অনেক ধরনের দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে। #

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/ ২৬