"তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না": কুরআন
সুরা আররাহমানের ষষ্ঠ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: এবং তৃণলতা ও গাছপালা সিজদারত আছে।
-এখানে তৃণলতা ও গাছপালার সিজদা বলতে সৃষ্টি জগতের খোদায়ী বিধানের প্রতি এইসব জীবের শর্তহীন আনুগত্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর মানুষের কল্যাণেই তারা এ ধরনের আনুগত্য তথা খোদায়ি বিধানের শতভাগ আনুগত্য করছে। প্রতিটি গাছপালা ও গাছের পাতা এবং গাছের বীজ মহান আল্লাহর একত্বের নিদর্শন। এইসব গাছপালা, বীজ ও পাতা মহান আল্লাহর বিধান মেনে চলছে। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কখনও হয় না অঙ্কুরিত কোনো বীজ এবং ঝরে পড়ে না গাছের কোনো পাতা।
সুরা আররাহমানের ৭ থেকে নয় নম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং তাতে স্থাপন করেছেন দাড়িপাল্লা ও বিধান, যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তথা ন্যয়বিচার থেকে বিচ্যুত না হও। তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।
-আকাশকে সমুন্নত করা বলতে এখানে যা বলা হয়েছে তা থেকে আকাশের মহানেয়ামতের গুরুত্ব ফুটে উঠছে। আকাশ বলতে সৌর-জগতের মহাকাশ কিংবা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দুটোই হতে পারে। বায়ুমণ্ডলের নানা স্তর পৃথিবীর ঢাল বা ছাদ হিসেবে মহাজাগতিক নানা রশ্মি ও পাথর বা ধুমকেতুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করছে পৃথিবীকে। তাই সত্যিই আকাশ হল এক নজিরবিহীন খোদায়ী মহানেয়ামত। তাই এই আকাশ বা বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবী টিকে থাকতে পারত না কিংবা তাতে মানুষও বসবাস করতে পারত না।
আকাশ থাকাতেই তা দিয়ে আমাদের কাছে আসছে আলো, তাপ ও বাতাস। আর এসবই হচ্ছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান। আর আকাশ থেকেই ঝরে পড়ে বৃষ্টির পানি। সমুন্নত বা সুউচ্চ আকাশ মহান আল্লাহর অশেষ শক্তি ও ক্ষমতার নিদর্শন। তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা কত অসীম ও ব্যাপক এবং তা পরিমাপ করা-এমনকি সে বিষয়ে যথাযোগ্য ধারণা রাখাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
বিশ্বাসী বিজ্ঞ মানুষ যখন মহাকাশের দিকে তাকায় তখন খোদায়ি নানা নিদর্শন দেখে নিজের অজান্তেই বলে ওঠেন: হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এইসব মহাজাগতিক বিষয় অনর্থক সৃষ্টি করোনি।
মহান আল্লাহ সুরা আররাহমানে আকাশের পর মিজান বা মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন। মিজান বা পাল্লা দিয়ে পার্থক্য করা যায় সত্য ও মিথ্যার, ন্যায়বিচার ও জুলুমের। এ দিয়ে মাপা যায় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারসহ নানা ধরনের সামাজিক পথ-মতও। পাল্লা বলতে বস্তুর ওজন মাপার যন্ত্রকেও বোঝায়। তবে আকাশের সৃষ্টির পর এখানে যে মিজান বা পাল্লার কথা বলা হচ্ছে তা অনেক ব্যাপক অর্থবোধক। এর আওতার মধ্যে পড়ে প্রকৃতিগত বা সৃষ্টিগত বিধান ও ধর্মীয় বিধানও। আকাশকে সমুন্নত রাখা ও মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রসহ নানা অংশে নিখুঁত মাপ ও শৃঙ্খলার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট বিধান বা সূত্র ও মানদণ্ড ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ পরের আয়াতে বলছেন যে বিশ্বজগতে মানদণ্ড স্থাপনের উদ্দেশ্য হল এটা যে তোমরাও পাল্লা বা মানদণ্ডকে মেনে চল ও এইসব মানদণ্ডের সীমা লঙ্ঘন করো না। কারণ তোমরা মানুষেরাও এই সুবিশাল বিশ্ব-জগতেরই অংশ হিসেবে অনিয়ম করে টিকে থাকতে পারবে না।
সুরা আররাহমানের নবম আয়াতে আবারও ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গ টেনে মহান আল্লাহ বলেছেন: তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।
- অনিয়ন্ত্রিত তথা বিচার-বিবেচনাহীন বা পাল্লাহীন জীবন মানে বল্গাহীন জীবন। মানুষের জীবনে যদি ন্যায়-নীতি ও ওজনের মানদণ্ডগুলো না থাকে তাহলে বেচা-কেনা থেকে শুরু করে সামাজিক লেন-দেন - সবই অচল হয়ে পড়বে। অর্থাৎ জীবনের সবক্ষেত্রে ন্যায়নীতির মানদণ্ড মেনে চলতে হবে মানুষকে ঠিক যেভাবে প্রাকৃতিক জগত মেনে চলছে নিয়মের শাসন আর মানদণ্ডকে। এভাবেই মহান আল্লাহ বিশ্ব-জগতে তথা অস্তিত্বের জগতে মানদণ্ডের বিধান দিয়েছেন যাতে মানুষ সীমালঙ্ঘন না করে ও ন্যায়বিচারের পথ থেকে বিচ্যুত না হয়। মোটকথা এ আয়াতে উল্লেখিত ওজন ও ন্যায়বিচার ব্যাপক বিস্তৃত অর্থবোধক।
পরের আয়াতে অর্থাৎ সুরা আররাহমানের দশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,
তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্যে।
-পৃথিবী নামক গ্রহ মহান আল্লাহর এক বড় নেয়ামত। কুরআনের অন্য আয়াতে পৃথিবীকে দোলনা বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। এই পৃথিবী জিন ও মানুষ থেকে শুরু করে সব জীবের জন্যই এক প্রশান্ত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। বেশিরভাগ মানুষই পৃথিবী ও এর নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি উপলব্ধি করেন না। কিন্তু যখনই সামান্য ভূমিকম্প ঘটে ও সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায় তখনই আমরা বুঝি যে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা কত বড় নেয়ামত। পৃথিবী নিজ অক্ষ ও সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ ও জীবজগতের জন্য পৃথিবীর এইসব গতি হুমকি হয়নি কখনও।
সুরা আররাহমানের ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ অন্য এক নেয়ামত প্রসঙ্গে বলেছেন: এতে আছে ফলমূল এবং বহিরাবরণবিশিষ্ট খেজুর গাছ।
- পৃথিবীতে নানা ধরনের ফল ও খেজুর ফল থাকার কথাই বলা হয়েছে এখানে। খেজুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হয়তো এটা যে এই ফলে মানুষের জন্য রয়েছে ব্যাপক কল্যাণ। খেজুর গাছ প্রথম দিকে গিলাফ বা আবরণে ঢাকা থাকে বলে এ আয়াতে খেজুর গাছকে 'বহিরাবরণবিশিষ্ট খেজুর গাছ' বলা হয়েছে। এই আবরণের কারণে খেজুরের চারাকে খুবই সুন্দর দেখায়। খেজুর গাছের এই আবরণের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের উপকার।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/ ১৩