ভার্চুয়াল জগত (পর্ব ১৬) : ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল
ভার্চুয়াল জগত: সম্ভাবনা ও শঙ্কা শীর্ষক ধারাবাহিকের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
গত আসরে আমরা বলেছি,প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নৈতিক জ্ঞানহীন কিছু মানুষ ভার্চুয়াল জগতকে অপরাধের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। শিশুদেরকে নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঠিক তদারকির অভাবে শিশু-কিশোররা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আজকের আসরে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল নিয়ে আরও আলোচনার চেষ্টা করব।
ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত সাড়া পৃথিবীটাকেই যেন আজ হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ভার্চুয়াল জগতের কিছু সুবিধা আমাদের সবারই কাজে লাগানো উচিত। যেমন তথ্য শেয়ারিং করা। ভালো তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম ভালো মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। কল্যাণকামী অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী এখন ভার্চুয়াল জগতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ারিং করছেন। কারণ এই জগতে শেয়ার করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ। এর ফলে ভার্চুয়াল জগত এখন এক বিশাল তথ্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে যেখান থেকে যে কেউ তার কাঙ্ক্ষিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। আর ভার্চুয়াল জগতের সুবিধা হলো বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় এর সেবা নেওয়া যায়। বিশ্বে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর তাৎক্ষণিক সংবাদ পেতেও এখন নির্ভর করা যায় ভার্চুয়াল জগতের ওপর। এখন বিশ্বের অধিকাংশ বড় গণমাধ্যমেরই রয়েছে ওয়েব সাইট। এসব ওয়েবসাইট কিছু সময় পর পর তাদের নতুন আপডেট দেয়। তবে ভার্চুয়াল জগতেও রয়েছে ইয়েলো জার্নালিজমের অস্তিত্ব। ফলে সব খবরই চোখ বুঝে বিশ্বাস করা যাবে না।

নিজের চাহিদা মতো বিভিন্ন ধরনের চাকরির খোঁজ করা যায় ইন্টারনেটে। সারা বিশ্বের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন লোক নিয়োগের জন্য অনলাইনেও বিজ্ঞপ্তি দেয়। সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায় নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির খোঁজ করা যায় খুব সহজেই। ভার্চুয়াল জগত তথা ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগকে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে। অনেক দূর-দূরান্তের মানুষের সঙ্গে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। কমে গেছে যোগাযোগের খরচ। ইন্টারনেটের কারণে চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে অজানা বিস্ময়, না-দেখা নতুন জগৎ। আর নতুনের প্রতি আকর্ষণের কারণে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। এর ফলে মানুষ হয়তো অনেক কিছু সহজে পেয়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রাও হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহজ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আবার ইন্টারনেটে অতিমাত্রায় আসক্তি থেকে ঘটছে নানা সমস্যা।
ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করলে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষকরে পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে ভার্চুয়াল জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। গবেষকরাও বলছেন,একটা নির্দিষ্ট সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করা ক্ষতির কিছু না। তবে সেটা যেনো কোনোভাবেই সপ্তাহে মোট ২৫ ঘণ্টার বেশি না হয়। সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টার বেশি সময় ইন্টারনেটে থাকলে মানুষ একটা সময় নিজের অজান্তেই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারেন। যারা সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টার বেশি সময় ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকেন তারা একটা সময় পর একাকিত্বে ভোগেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকেও তারা একাকী বোধ করেন। এর ফলে জন্ম নিতে পারে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহ। ঘটতে পারে পারিবারিক অশান্তি। শিশুরা বড়দের দেখে অনেক কিছু শেখে। বড়দের আচার-আচরণ ও কথাবার্তা ছোটদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ কারণে শিশুদেরকে ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে হলে বড়দের সতর্ক হতে হবে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শিশুদের মধ্যে মাদকাসক্তির মতো ইন্টারনেট আসক্তিও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ শিশুদের সঠিকভাবে শিক্ষিত না করেই তাদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভার্চুয়াল জগতের নিষিদ্ধ বিষয়গুলো এত সহজলভ্য যে,তারা সহজেই তাতে প্রবেশ করতে পারছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর উচিত এমন দেশিয় ব্রাউজার উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া যাতে নিজে থেকেই পর্নো ও ক্ষতিকর কনটেন্টগুলো ফিল্টার হয়ে যাবে। এছাড়া বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো শিশুদেরকে ইন্টারনেটের সুফল-কুফল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। পাশাপশি শিশুদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানো এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি করা উচিত। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শিশুদের সঠিকভাবে শিক্ষিত না করেই তাদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দেওয়া যাবে না। #
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ২