জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ ১৭:২৯ Asia/Dhaka
  • সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৪৫-৪৮ (পর্ব-১৪)

পবিত্র কুরআনের তাফসির বিষয়ক অনুষ্ঠানের 'কুরআনের আলো'র এ পর্বে সূরা বনী ইসরাইলের ৪৪ থেকে ৪৮ নম্বর পর্যন্ত আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। এই সূরার ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ حِجَابًا مَسْتُورًا (45) وَجَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوهُ وَفِي آَذَانِهِمْ وَقْرًا وَإِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِي الْقُرْآَنِ وَحْدَهُ وَلَّوْا عَلَى أَدْبَارِهِمْ نُفُورًا (46)

"যখন তুমি কুরআন পড়ো তখন আমি তোমার ও যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না তাদের মাঝখানে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দেই।*(১৭:৪৫)

"এবং তাদের মনের ওপর এমন আবরণ চড়িয়ে দেই যেন তারা কিছুই বোঝে না এবং তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেই৷ আর যখন তুমি কুরআনে নিজের একমাত্র রবের কথা পড়ো তখন তারা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।* (১৭:৪৬)

এ আয়াত দু’টিতে নবীজীকে সম্বোধন করে বলা হয়েছেঃ মুশরিকরাসহ যারা কিয়ামত দিবসকে মানে না তারা কুরআনের সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে অক্ষম। যখনই সৃষ্টিকর্তার একক সত্ত্বার দিকে তাদের ডাকবেন বা এ ব্যাপারে তাদের বোঝাবেন-তাদের মধ্যে যারা শির্কে লিপ্ত রয়েছে-আপনার কাছ থেকে সরে যাবে এবং এমনকি তারা কুরআনের বাস্তবতার কথাটাও শুনতে চাইবে না।  আখেরাতকে অস্বীকার করার মানে হলো উসূলে দ্বীন অর্থাৎ তাওহিদ এবং নবুয়্যতকেও অস্বীকার করা। সেজন্যে আল্লাহর কথা অর্থাৎ কুরআনে কারিমের বাণীগুলো এ ধরনের লোকদের জন্যে খুবই কঠিন এবং অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক যেন কুরআন এবং তাদের মাঝখানে একটা অদৃশ্য পর্দা পড়ে গেছে তাই তারা আর সত্যের বাণী শোনা কিংবা সত্যকে দেখার ক্ষমতা রাখে না।

এ দুই আয়াত থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় হলোঃ

এক. মানুষ যদি অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যানের অবস্থানেই থাকে তাহলে হিদায়াতের যোগ্যতা হারায়। সেজন্যে রাসূলে খোদার মুখনিসৃত আল্লাহর কালাম তথা কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত হবার পরও তাদের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়ে না।

দুই. কুরআনের বাস্তবতা এবং আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করতে না পারাটা একগুঁয়ে, ঝগড়াটে ব্যক্তিবর্গের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের শাস্তি বৈ ত নয়।

তিন. মুশরিকরা কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করত। কিন্তু কিয়ামতকে অস্বীকার করার কারণে এবং কাজেকর্মে শির্কে বিশ্বাস করার কারণে আল্লাহর কালাম এবং বার্তাকে তারা কিছুতেই গ্রহণ করত না।

সূরা বনী ইসরাইলের ৪৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

  نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُونَ بِهِ إِذْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ وَإِذْ هُمْ نَجْوَى إِذْ يَقُولُ الظَّالِمُونَ إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًا مَسْحُورًا (47)

“আমি জানি, যখন তারা কান লাগিয়ে তোমার কথা শোনে আমরা ভালো করেই জানি তারা কেন শোনে এবং যখন তারা বসে পরস্পর কানাকানি করে তখন কি বলে। এ জালিমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে তোমরা এই যে লোকটির পেছনে চলছো এতো একজন জাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।” (১৭:৪৭)

এ আয়াতে কাফের এবং তাদের নেতাদের কথাবার্তা, আচার আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছেঃ যখন কুরআন তিলাওয়াত কর তারা তখন তারা শোনে কিন্তু যেহেতু তারা গোঁড়া এবং অস্বীকারকারী সেজন্যে গ্রহণ করে না, এমনকি অন্যদেরকেও কুরআন শুনতে নিষেধ করে। তারা নবীজীকে জাদুকর বলে প্রচার করে বেড়ায়। কেননা মানুষ তাঁর কথা শুনেই মুগ্ধ হয়ে যায় মোহগ্রস্তের মতো।

এ আয়াত থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় হলোঃ

এক. আল্লাহ পাক সবারই ভেতরকার খবর জানেন, তাঁর দৃষ্টি থেকে কোনো কিছুই লুকানো সম্ভব নয়। আল্লাহ সবারই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কথা জানেন।

দুই. দ্বীনের শত্রুরা বিভিন্নভাবে অবমাননার মাধ্যমে আল্লাহর ওলিদের ব্যক্তিত্বে কাদা লাগাতে চায়, কিন্তু তাঁদের পিছ পা হওয়া উচিত নয় বরং জেনে রাখা উচিত সবকিছুই আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে।

সূরা বনী ইসরাইলের ৪৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

  انْظُرْ كَيْفَ ضَرَبُوا لَكَ الْأَمْثَالَ فَضَلُّوا فَلَا يَسْتَطِيعُونَ سَبِيلًا (48)

“(হে পয়গাম্বর!) দেখুন,বিরোধীরা কী সব উপমা-উদাহরণ তোমার জন্যে ছুঁড়ে দিচ্ছে, এরা পথভ্রষ্ট হয়েছে, এরা সঠিক পথের নাগাল পাবে না।” (১৭:৪৮)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতে নবীজীকে সান্ত্বনা বা সহানুভূতি জানিয়ে বলা হয়েছেঃ তারা যতোই তোমাকে জাদুকর কিংবা পাগল বলে প্রচার করে কিংবা তোমাকে এ ধরনের উপমা উদাহরণে ভূষিত করে, তাতে কোনো ক্ষতি নেই, উল্টো বরং তারাই এসব বলে বিপথগামী হচ্ছে এবং সত্যের নাগাল বা উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সত্য বিরোধীদের জেনে রাখা উচিত আজেবাজে কথা বললে সত্য দূরীভূত হয়ে যায় না, কারণ সত্য এমন কোনো জিনিস নয় যে ফালতু কথাবার্তা বললে তা ঢাকা পড়ে যাবে।#