সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮ ১৭:৩৩ Asia/Dhaka

গত পর্বের ধারাবাহিকতায় আজও আমরা সুরা আস সাফের কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করব।

সূরা সাফের ৮ নম্বর আয়াতে ইসলাম ধর্মের সার্বজনীনতা সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে। স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে শত্রুরা আল্লাহর নূর তথা আল্লার ধর্মকে নিভিয়ে দিতে পারবে না। মহান আল্লাহ এখানে অত্যন্ত চমৎকার উপমা ব্যবহার করে বলছেন,

'ওরা আল্লাহর নূরকে মুখের ফু দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে পুরোপুরি বিস্তার করবেন যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।

- আসলে ইসলামের শত্রুরা সবসময় আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু মহান আল্লাহ যেমনটি ইচ্ছে করেছেন দিনকে দিন ইসলাম ধর্মের আলো ছড়িয়ে পড়ছে তাই এই খোদায়ি নূরকে নিভিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কারোরই নেই।

সূরা সফ-এর নয় নম্বর আয়াতে আবারো ইসলামের সার্বজনীনতার কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলছেন:

তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছেন,যাতে একে সব ধর্মের উপর বিজয়ী করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।

-ইসলাম ও কুরআন হচ্ছে মহান আল্লাহর নুর। আলোর ধর্ম হল তা যেখানেই যায় সেখানেই নানা ধরনের কল্যাণ বয়ে আনে এবং তা বিজয়ের মাধ্যম। তাই কাফির-মুশরিকদের অসন্তুষ্টি আলোর বন্যাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। বর্তমানে সবার কাছেই এটা স্পষ্ট যে ইসলাম যুক্তি ও বাস্তব অগ্রগতির দিক থেকে সব ধর্মের তুলনায় জোরালো হয়েছে। শত্রুদের বিরতিহীন ও অন্তহীন নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও এই মহান ধর্মের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়ছে। অবশ্য ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় ও অগ্রগতি হযরত ইমাম মাহদি (আ)'র আবির্ভাবের পর বাস্তবায়ন হবে।

 

সুরা সাফে মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে একটি লাভজনক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ সুরা সাফের ১০ ও ১১ নম্বর বলছেন:

'হে মুমিনরা! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিব,যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে,তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ইমান আনবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন বিলিয়ে দিয়ে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম;যদি তোমরা বোঝ।'

মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান বিচ্ছিন্ন বা পৃথক বিষয় নয়। ঠিক একইভাবে জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করাকেও আলাদা করা সম্ভব নয়। কারণ জিহাদ করতে হলে ও আত্মরক্ষা করতে হলে সাজ-সরঞ্জাম ও নানা উপায়-উপকরণের দরকার হয়। তাই জিহাদ করতে হলে আর্থিক সহায়তাও জরুরি। তাই এ দুই জিহাদই পরস্পরের পরিপূরক।  এই আয়াতে যে ব্যবসার কথা বলা হয়েছে তার রয়েছে তিনটি প্রধান স্তম্ভঃ প্রথমত এখানে ক্রেতা হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ। আর বিক্রেতা হলেন ঈমানদার মানুষেরা। এক্ষেত্রে পণ্য হল জান ও মাল। জান ও মালের বিনিময় দেবেন মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ এ ব্যবসাকে অত্যন্ত লাভজনক বলে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যবসার লাভগুলোর কথা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলছেন:

'তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন,যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতে বসবাসের উত্তম ও পবিত্র বাসগৃহে স্থান দেবেন। এটা মহাসাফল্য।'

 

পরের আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন যা তোমরা পছন্দ কর। আর তা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।'

-এইসব অশেষ ও অকল্পনীয় লাভের চেয়ে বেশি মুনাফার ব্যবসা আর কি হতে পারে? বিজয় আর অফুরন্ত ও অজস্র নেয়ামতে ভরপুর এই ব্যবসা। এরপর এই বিশাল ব্যবসার ব্যাপারে মুমিনদের সুসংবাদ ও অভিনন্দনও দেয়া হয়েছে।

 

সুরা সাফের শেষ আয়াতে আবারও জিহাদের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহর সহযোগী হতে বলছেন খোদ মহান আল্লাহ। আর আল্লাহ হচ্ছেন তিনি যার কাছ থেকে উৎসারিত হয় সমস্ত শক্তি এবং সব কিছু তাঁরই দিকে ফিরে যায়।

 

 এরপর সুরা সাফে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হচ্ছে:

'হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও,যেমনিভাবে ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার হাওয়ারিবর্গ বা বিশেষ ঘনিষ্ঠ শিষ্যদেরকে বলেছিল,আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তার বিশেষ ঘনিষ্ঠ শিষ্যরা তখন বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথের তথা তাঁর ধর্মের সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা ঈমান এনেছিল,আমি তাদেরকে শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম,ফলে তারা বিজয়ী হল।

 

-হযরত ঈসা ইবনে-মরিয়মের হাওয়ারিবর্গ বা বিশেষ ঘনিষ্ঠ শিষ্যরা আল্লাহর ধর্ম রক্ষা করতে শত্রুদের মোকাবেলায় লড়াইয়ের ময়দানে ছুটে এসেছিলেন। বনি-ইসরাইলের একদল মানুষ তাদের সহযোগী হয়েছিলেন। কিন্তু অন্য ইহুদিরা কাফির-বেঈমানদের পক্ষ নেয়। এ অবস্থায় মু'মিনদের জন্য ধেয়ে আসে মহান আল্লাহর সহায়তা এবং তারা শত্রুদের মোকাবেলায় বিজয়ী হন।

 

আসলে এ আয়াতে মুসলমানদের এটা বলা হচ্ছে যে, তোমরা হলে মুহাম্মাদ (সা)'র হাওয়ারি। তাই তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সাহায্য কর। আর তাহলে ঈসা নবীর সাহায্যকারীদের আল্লাহ যেমন বিজয়ী করেছিলেন শত্রুদের মোকাবেলায় তোমাদেরকেও তিনি ঠিক সেভাবেই বিজয়ী করবেন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/  ৩

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন