সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮ ১৮:০৬ Asia/Dhaka

সাপ্তাহিক আলোচনা অনুষ্ঠান- ধরণীর বেহেশত মসজিদে। আজকের আসরের শুরুতে আমরা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে নারীর উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব। আর শেষাংশে থাকবে লন্ডনের সেন্ট্রাল মসজিদ পরিচিতি।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মুসলমানের জন্য মসজিদের দরজা উন্মুক্ত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র মূল্যবান বক্তব্য শোনার জন্য নারীরা মসজিদে যেতেন। কখনো নারীদের বিশেষ অনুরোধে তাদের জন্য আলাদা জমায়েতে ভাষণ দিতেন আল্লাহর রাসূল (সা.)। বর্তমান যুগেও বড় মসজিদগুলোতে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী আলেম নারীগণ সাধারণ নারীদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন এবং তাদেরকে মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা দেন। বিশ্বের বহু অমুসলিম দেশে অবস্থিত মসজিদগুলোতেও নারীদের এ কর্মতৎপরতা চোখে পড়ে।

নববী মসজিদ

এসব দেশে অবস্থিত মসজিদগুলো মুসলমানদের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া, অমুসলিমরা মসজিদের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। কাজেই বলা যায়, ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে মসজিদ। নও মুসলিমদের ইসলামি জ্ঞান অর্জনেরও উত্তম স্থান মসজিদ। অমুসলিম দেশগুলোর স্কুলে অধ্যয়নরত মুসলিম শিশুরা তাদের স্কুল থেকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষা পায় না। কাজেই তাদের জন্যও মসজিদে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসগত তৎপরতা পর্যালোচনা করার জন্য ফেইথ ম্যাটার্স (Faith Matters) নামের একটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্র ২০১০ সালে ব্রিটেনের ৫০০ মসজিদের ওপর জরিপ চালিয়ে নারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১০০টি মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত করে। এগুলোর মধ্যে ৫০টি মসজিদ পাঁচ তারকা এবং বাকি ৫০টি চার তারকার মর্যাদা লাভ করে।

মসজিদে নারীর অংশগ্রহণ

তবে নামাজ আদায়ের জন্য মুসলিম নারীদের মসজিদে গমনের এই ইতিবাচক প্রবণতার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিচ্যুতি এবং ভ্রষ্টতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  মসজিদে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে চান কেউ কেউ। মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাবেক প্রতিবেদক আসরা নুমানি সম্প্রতি ‘মসজিদে নারীর অধিকার’ বিষয়ক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এই প্রস্তাব মুসলিম সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারণ, ওই প্রস্তাবে ইসলামি হুকুম-আহকামের বিপরীতে গিয়ে মসজিদে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু অধিকার দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারীদেরকে পুরুষের সঙ্গে একই কাতারের ভেতরে দাঁড়াতে দিতে হবে এবং নারী ও পুরুষের মিলিত সেই নামাজে নারী ইমাম নিয়োগ দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর নির্দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত এই দাবি মেনে নেয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

অবশ্য পশ্চিমা সমাজে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য ও জুলুম করা হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের দাবি ওঠা অস্বাভাবিক নয়। ইসলামে নারীকে যে কত বেশি অধিকার দেয়া হয়েছে তা উপলব্ধি করতে না পেরে পশ্চিমা চিন্তাবিদরা বাহ্যিকভাবে নারীর জন্য সমান অধিকার দাবি করেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের বুকে ইসলামের আবির্ভাবের পরপরই দলে দলে মানুষ এই শান্তির ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল নারীর প্রতি সব ধরনের জুলুম ও নির্যাতনের অবসান ঘটানোর কর্মসূচি একমাত্র ইসলামই দিতে পেরেছিল। গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ ও আর্থিক দিক দিয়ে উঁচু-নীচুর ভেদাভেদের মূলে আঘাত হেনেছিল ইসলাম। এই আসমানি ধর্ম নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, আরব-অনারব, সাদা-কালো, সুন্দর-কুৎসিত নির্বিশেষে সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। এই ধর্মে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় একমাত্র তাকওয়া বা খোদাভীতির মাণদণ্ডে। মহান আল্লাহ সূরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন: “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।  নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,সবকিছুর খবর রাখেন।”

বন্ধুরা! আসরের এ পর্যায়ে আমরা লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদকে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মধ্যাঞ্চলীয় ওয়েস্টমিনিস্টার এলাকায় অবস্থিত সেন্ট্রাল মসজিদকে রিজেন্টস পার্ক মসজিদও বলা হয়। অপূর্ব ইসলামি স্থাপত্যশৈলি ব্যবহার করে তৈরি করা মসজিদটিতে একত্রে পাঁচ হাজার মানুষ জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৪০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল লন্ডনে মুসলমানদের জন্য একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করে দিতে সম্মত হন। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর চার্চিলের মন্ত্রিসভা মধ্য লন্ডনে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা কিনতে এক লাখ পাউন্ড বরাদ্দ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে চার্চিল এ কাজ করেছিলেন।

       

 ১৯৪৪ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন রাজা ষষ্ঠ জর্জ এই মসজিদ উদ্বোধন করেন। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে উদ্বোধনের পরও মসজিদে নামাজ আদায় হয়নি এবং পরবর্তীতে আরো কিছু কারণে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মসজিদটির দরজা বন্ধ থাকে। ওই বছর মসজিদটি সকল মুসলমানের নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়। লন্ডনের সেন্ট্রাল মস্কে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য দুটি বড় হলরুম রয়েছে। এ ছাড়া, মসজিদের তিন তলাবিশিষ্ট একটি অংশ রয়েছে যেখানে লাইব্রেরি, অডিটরিয়াম, প্রশাসনিক অফিস এবং মিনারগুলো অবস্থিত। লন্ডনের ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে মসজিদের প্রধান হলরুমে পাঁচ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হলেও বর্তমানে সেখানে জামায়াতে নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, গত বছর ঈদুল আজহার জামায়াতে এই মসজিদে ৬০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। অবশ্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে এজন্য ছয়টি জামায়াতের ব্যবস্থা করতে হয় এবং প্রতি জামায়াতে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।  প্রথম জামায়াত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতি ঘণ্টায় একটি করে জামায়াত করতে করতে দুপুর ১২টায় সব মুসল্লির নামাজ আদায় শেষ হয়।

ন্ডনে মুসলমানদের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় তারা লন্ডনের নিউম্যান এলাকায় আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে চান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সে মসজিদ নির্মাণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রী গ্রেগরি ক্লার্ক নির্দেশ দিয়েছেন, নিউম্যান এলাকায় মুসলমানরা নামাজ আদায়ের জন্য যে অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেছেন সেটিও ভেঙে ফেলতে হবে। আঞ্জুমান ইসলাহুল মুসলিমিন নামক একটি সংস্থা মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল এবং এটি নির্মিত হলে সেখানে নয় হাজার মুসল্লি একত্রে জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারতেন। #

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ৩০

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিনhttps://www.facebook.com/parstodaybn/

ট্যাগ