নভেম্বর ১৮, ২০১৮ ২০:১১ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনার শেষের দিকে আমরা সুরা তালাক্বের দ্বিতীয় আয়াত নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এ আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে:

আর যে আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহ তার জন্যে নানা সংকট থেকে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।

এরপর সুরা তালাক্বের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। -

স্বামী-স্ত্রী যদি খোদাভীরু হন তাহলে তারা সত্য থেকে বিচ্যুত হবেন না এবং পরস্পরের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রী ও সাক্ষীদের সতর্ক করে দিয়ে বলছেন তারা যেন সমস্যা বা সংকটের মুখে ভেঙ্গে না পড়েন কিংবা হতাশ না হন বরং সংকটের সুরাহার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। খোদাভীরুদের সংকটের সুরাহার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মহান আল্লাহ। তিনি তাদের এমন স্থান থেকে রিজিক এনে দেবেন যে তারা তা কখনও কল্পনাও করতে পারে না।

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে সংকট ও অচলাবস্থা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হল মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা। তাই সুরা তালাকের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট।

-  খোদাভীতি ও আল্লাহর ওপর ভরসা অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দু'টি মাধ্যম। কারণ সব কিছুই মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব ও নির্দেশ মানতে বাধ্য। মহান আল্লাহ কোনো কিছু করার ইচ্ছে করার সাথে সাথে তা ঘটে যায়। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছার মোকাবেলায় কোনো বাধা বা অচলাবস্থাই টিকে থাকতে পারে না। যদিও সুরা তালাকের এ আয়াতটি তালাকের বিধান বর্ণনার প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছে। কিন্তু এর পরিধি অনেক বেশি বিস্তৃত। আল্লাহর ওপর ভরসাকারী ও খোদাভীরু ব্যক্তিরা যে আল্লাহর রহমত পাবেন এবং সব সমস্যা ও সংকটের জটাজাল থেকে মুক্ত হবেন তার ওয়াদা দিয়েছেন মহান আল্লাহ এ আয়াতে। তাই মহান আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতির আলোকে খোদাভীরু ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসাকারীরা কখনও হতাশ হতে পারেন না।

সুরা তালাক্বের চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই,তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।

-এখানে তালাক সংক্রান্ত কিছু বিধান তুলে ধরা হয়েছে।

সুরা তালাকের ষষ্ঠ আয়াতে তালাক-পরবর্তী পর্যায়ে নারীর অধিকার সম্পর্কে কিছু বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন:

তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ ঘরে বাস কর,তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ ঘর দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়,তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে,তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর,তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।

 

-অর্থাৎ তালাক-প্রাপ্তা নারীকে সাবেক স্বামীর বাসার সমমানের বাসা দিতে হবে । এরপর বলা হয়েছে এ ধরনের বাসায় তার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যাতে সে ওই বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ঘৃণা বা প্রতিহিংসার প্রভাবে তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে বাসা-বাড়ি বা ভরণ-পোষণের বিষয়সহ অন্যান্য অধিকারের বিষয়ে এমন আচরণ করা উচিত নয় যাতে তারা চাপ অনুভব করে। তালাকপ্রাপ্তা নারী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তাহলে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব সাবেক স্বামীর ওপরই বর্তায়। এরপর শিশুকে দুধ পান করানোর বিষয়ে তালাকপ্রাপ্তা নারীর অধিকার ও সন্তানদের ভবিষ্যতের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মতবিরোধের কারণে যেন শিশুদের মানসিক, শারীরিক ও স্নেহকাতর মনের কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। সন্তানদের কল্যাণের ব্যাপারে সাবেক স্ত্রীর পরামর্শ নেয়াকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

 

ইসলাম যে পরিবার, নারী ও সন্তানদের অধিকারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয় তা ফুটে উঠেছে এ আয়াত থেকে। ইসলাম যতটা সম্ভব তালাক ঠেকাতে বলে। এরপর দাম্পত্য-জীবনে অচলাবস্থা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে তালাকের অনুমতি দিলেও স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার রক্ষা করতে বলে। এ ছাড়াও ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা এমন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রীর পুনর্মিলনের জোরালো সুযোগ থাকে।

 

 সুরা তালাকের ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:  

'একজন রসূল,যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পাঠ করেন, যাতে বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনেন। যে আল্লাহর প্রতি ইমান আনে ও সৎকর্ম করে,তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে,যার তলদেশে তথা পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত,সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাকে উত্তম রিযিক দেবেন।'

-নবী-রাসুলদের মিশনের উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে তারা মানুষকে শির্কসহ নানা পাপ ও অন্ধকারের পথ থেকে ঈমান ও একত্ববাদ তথা তাওহিদের আলোর পথে নিয়ে আসবেন যা হল মুক্তি এবং চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের পথ। এখানে অন্ধকার বলতে কুরআনে জুলুমাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা বহুবচন। অন্যদিকে আলো বা নুর শব্দটি একবচন। এর অর্থ হল পাপ, মিথ্যা, কুফরি ও শির্কের রয়েছে অনেক পথ এবং তা বিচ্ছিন্নভাবে তথা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। অন্যদিকে সত্যের পথ কেবলই একটি।

 

সুরা তালাকের শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:

আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং ভূমণ্ডল বা জমিনও সেই পরিমাণে,এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়,যাতে তোমরা জানতে পার যে,আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত।

-এখানে মহান আল্লাহর অশেষ জ্ঞান ও শক্তির দিকে ইশারা করা হয়েছে। এই বিশাল অস্তিত্বের জগত ও সৃষ্টি জগত চলে মহান আল্লাহর পরিচালনায়। তাই এই সৃষ্টি জগত বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। বরং মহান আল্লাহর হিকমাত বা  প্রজ্ঞা জড়িয়ে আছে সৃষ্টি জগত ও তার পরিচালনার সঙ্গে। মহান আল্লাহ যে সব কিছুর ওপর কর্তৃত্বশীল ও শক্তিমান এবং তিনি যে সব কিছুই জানেন তা এসব নিদর্শন থেকেই স্পষ্ট।  আমাদের সবারই এটা মনে রাখা উচিত যে মহান আল্লাহর কাছে কোনো রহস্যই গোপন নয় এবং তিনি আমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব তৎপরতা সম্পর্কেই জানেন।  #
 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৮

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন