এপ্রিল ১৬, ২০১৯ ১৫:১৩ Asia/Dhaka

ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলন যে কেবল মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার ক্ষত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তা নয় বরং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এমনকি বহু রকমের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

হালকা ব্যায়ামের সুফল নিয়ে বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে ব্যায়াম কেবলমাত্র সব ধরনের স্থায়ী এবং অস্থায়ী কার্ডিয়াক আর্থ্রাইটিসকেই হ্রাস করে না এবং এটি হৃৎপিণ্ডের ধমনীর জমাট রক্তকে দ্রবীভূত করার মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য এমনকি যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন তাদের জন্যও ব্যায়াম সুফল বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আরও যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আজকের আসরে আমরা পরিবারের জন্য সর্বোত্তম ব্যায়াম হাঁটার বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

শারীরিক সুস্থতা, প্রশান্তি এবং পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ুর জন্য সাহায্য করতে পারে এরকম বিনোদনমূলক সবচেয়ে উপযোগী একটি ব্যায়াম হলো হাঁটা। হাঁটা এয়ারোবিক ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে। এই ব্যায়ামটি বেশ অ্যানার্জিবহুল। হাঁটার সময় পায়ের পেশী এবং বাহু সুশৃঙ্ক্ষলভাবে ছন্দে ছন্দে ব্যবহৃত হয়। ক্রীড়াবিদ, হার্টের রোগ বিশেষজ্ঞ, পাঁজর ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞগণ এবং স্থূলতা বিশেষজ্ঞগণ হাঁটার ব্যায়ামকে সকল বয়সের মানুষের জন্য উপকারী বলে মতামত দিয়েছেন। এটি সাধারণ একটি ব্যায়াম। সকলের জন্যই এই ব্যায়ামটি প্রযোজ্য। পরিবারের সকল সদস্য যুবক, বৃদ্ধ এমনকি শয্যাশায়ী রোগী যে সুস্থ হয়ে উঠেছে সেও এই ব্যায়ামে অংশ নিয়ে আনন্দ ভোগ করতে পারে। হাঁটার জন্য বিশেষ কোনো দক্ষতারও প্রয়োজন নেই কিংবা নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা সময়েরও বাধ্যবাধকতা নেই।যখন খুশি যেখানে সুবিধা হাঁটা যেতে পারে।

সুশৃঙ্ক্ষলভাবে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কর্মক্ষেত্র কিংবা ঘরের আশপাশকে বেছে নেয়া।আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন যে ঘরের পাশের কোনো পার্ক, সমুদ্র সৈকত কিংবা কোনো পাহাড়ের পাদদেশে হাঁটা শুরু করবেন তাহলে সবসময়ই আপনার সামনে কোনো না কোনো একটা অজুহাত এসে দাঁড়াতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমড়ি করতে পারেন। সেজন্য বিশেষজ্ঞগণ পরামর্শ দিয়েছেন যে বাসার আশেপাশের কোনো জায়গা যেখানে হাঁটা যায় সেরকম স্থান বেছে নেয়াই ভালো। বাসা কিংবা কর্মস্থল অথবা আশেপাশের কোনো স্থান থেকেই হাঁটা শুরু করুন এবং পুনরায় সেখানে ফিরে আসুন হাঁটতে হাঁটতে। তবে হাঁটার সময় লম্বা দম নিতে ভুলবেন না।হাঁটার আগে পানি খাওয়া ভালো। ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে পানি খাবেন।আবার হাঁটার ৫ মিনিট আগে আরেক গ্লাস পানি খাবেন।পিচ ঢালা পথের চেয়ে মাটির রাস্তা বেছে নেয়া হাঁটার জন্য উত্তম।  

বিশেষজ্ঞদের মতে আমরা যদি দৈনিক মাত্র আধা ঘণ্টা হাঁটি-খুব বেশি দ্রুত হাঁটার দরকার নেই-তাহলে বহু দূরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পারি। অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশ ভাগ দূরারোগ্য রোগের আশংকা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে চিকিৎসাবিদদের অভিমত। হাঁটার ব্যায়াম থেকে আমরা যদি আরও বেশি উপকৃত হতে চাই তাহলে সপ্তায় কমপক্ষে তিন থেকে চারদিন ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা নাগাদ অনুশীলন করা উচিত। আমরা সাধারণত যেই গতিতে হাঁটি তার চেয়ে খানিকটা দ্রুত হাঁটতে হবে। এভাবে নিয়মিত অনুশীলন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন কমানো সম্ভব তেমনি শরীর চর্চার অভাবে যেসব রোগ-ব্যাধি হবার আশংকা থাকে সেসব রোগও প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।

চিকিৎসকগণ মনে করেন যে দ্রুত হাঁটার অনুশীলন হার্টের জন্য খুবই উপকারী। কারণ হার্ট বা হৃদয় হচ্ছে পেশী গোত্রের প্রত্যঙ্গ। এই পেশীতে যে-কোনো কারণেই রক্ত চলাচল বাড়বে ততই পেশীটি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। অপরদিকে ছন্দে ছন্দে মানে সুশৃঙ্ক্ষলভাবে হাঁটার কারণে রক্তচাপও কমে যায়। যে ব্যক্তি দৈনিক অন্তত ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলবেন তাঁর ব্রেইন স্ট্রোকের আশংকা অন্তত চল্লিশ ভাগ কমে যায়। মধ্যম গতিতে দৈনিক আধা ঘণ্টার মতো হাঁটলে অন্তত ২০০ কিলো ক্যালোরি পোড়ানো সম্ভব হয়। সেইসাথে বাকি ক্যালোরি বার্ন করার গতিও বেড়ে যায়। হাঁটার অনুশীলনের আরেকটি উপকারী দিক হলো শরীরের পেশীগুলো শক্তিশালী হয়, শরীরের জয়েন্টগুলোর হাঁড়ও শক্তিশালী হয় যার ফলে আর্থারাইটিসের ব্যথাও কমে যায়। এক্ষেত্রে একদিন পরপর হাঁটার অনুশীলন করতে হবে যাতে অস্থিসন্ধিগুলোও বিশ্রামের সুযোগ পায়। তবে অতিরিক্ত ওজন যাদের কিংবা যারা দুরারোগ্য কোনো রোগে ভোগেন তাদের হাঁটুতে চাপ পড়ে এরকম অনুশীলন করা ঠিক নয়।      

স্ট্রেস বা মানসিক চাপে যারা ভোগেন তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ সর্দি কাশি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো রোগ-ব্যাধিতে দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে।হাঁটার ব্যায়াম করলে ব্রেইনে বেটা আ্যন্ডরফিন তৈরি হয় এবং এর ফলে বিষন্নতা বা স্ট্রেসের মতো মানসিক চাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যারা ঔষধ সেবন করার পাশাপাশি হাঁটার অনুশীলন করেছে তারা অন্যদের তুলনায় অর্থাৎ যারা হাঁটা অনুশীলন করে নি শুধু ঔষধ খেয়েছে তাদের চেয়ে দ্রুত মুক্তি পেয়েছে এবং খুব কম ক্ষেত্রে পুনরায় বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং প্রতিদিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি অনুশীলন করুন এবং আপনার বাদবাকি জীবনকে সুখি-সমৃদ্ধি ও আনন্দের সঙ্গে যাপন করুন। হাঁটাহাঁটি ইতিবাচক চিন্তার মতোই উপকারী।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ১৬

ট্যাগ