মে ০২, ২০১৯ ১৫:৫৩ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছি, পবিত্র কুরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শিশুর মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টির ব্যবস্থা করা সন্তানের বাবার দায়িত্ব। বাবাকে অবশ্যই শিশুর মায়ের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে হবে যাতে শিশুর পুষ্টি ও যত্মে কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা মায়ের জন্যও উপকারী। সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মা নিজেও উপকৃত হন। শিশুর জন্য মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আরও আলোচনার চেষ্টা করব।

আল্লাহতায়ালা নারীদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একজন নারী সন্তান জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি শিশুর খাদ্য চাহিদা পূরণেরও ব্যবস্থা করেন। জন্মদাতা মায়ের শরীরেই উৎপাদিত হতে থাকে নবজাতকের সবচেয়ে সুষম খাবার। জন্মের ৬ মাস বা ১৮০ দিন পর্যন্ত শিশুর চাহিদার সব খাদ্য উপাদানই মেটাতে পারে মায়ের দুধ। এ সময় মায়ের দুধ পেলে শিশুর জন্য আর অন্য কিছুর প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন ইসলামি সূত্রে এসেছে, মায়ের জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য বাড়তি কোনো খাবার ও পানির প্রয়োজন হয় না। মায়ের দুধই তার জন্য যথেষ্ট। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, মায়ের বুকেই রয়েছে শিশুর খাদ্য। শিশুর জন্মের মূহুর্ত থেকে শুরু করে প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাবার নিশ্চিত করে মায়ের দুধ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে, জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এসময় পানি বা অন্য কোন পানীয় খাওয়ানোর দরকার নেই। কেননা,মায়ের দুধেই আছে শতকরা ৯৫ ভাগ পানি। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। ৬ মাস এভাবে চলার পর শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দিতে হবে। অন্তত ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। প্রতি রাতে ৮ থেকে ১২ বার বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। প্রসবের পরে মায়ের বুকে প্রথম যে দুধ আসে সেটাকে শালদুধ বলা হয়। এ দুধ ঘন, আঁঠালো এবং একটু হলুদ রংয়ের। প্রসবের পরে প্রথম দুই থেকে তিন দিন যতটুকু শালদুধ আসে তাই নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। চিকিৎসকরা জন্মের পর শিশুকে শালদুধ ছাড়া অন্য কিছু দিতে নিষেধ করেন। তাদের মতে, শালদুধ ছাড়া অন্য কিছু দিলে পাতলা পায়খানা হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একইসঙ্গে শিশুর বুকের দুধ খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়। 

শালদুধ শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসাবে কাজ করে।শালদুধ আমিষ সমৃদ্ধ এবং এতে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে।এতে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শালদুধ শিশুর পেট পরিষ্কার করে এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে। শিশুর জন্ডিস হবার আশঙ্কা কমে যায়। মায়ের বুকের দুধ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত। বায়ু বা পানি বাহিত জীবাণু সংক্রমিত হবার সুযোগ নেই। মায়ের দুধে আছে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদারের উপাদান। ফলে শিশুর অসুখ বিসুখ বিশেষ করে ডায়রিয়া, কান পাকা রোগ,নিউমোনিয়া,শ্বাসনালীর রোগ,হাঁপানী,এলার্জি, চুলকানি ইত্যাদি সংক্রমণের আশংকা কমে যায়। শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মায়ের দুধ উপকারী।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের বুদ্ধির বিকাশ, মায়ের দুধ খায় না এমন শিশুর চেয়ে বেশি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার ফলে অসুস্থ হলেও শিশু তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়। মায়ের দুধ শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে দেয়। মায়ের দুধ সহজে হজম হয়। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর দেহ জটিল খাবার হজম করতে পারেনা। কিন্তু মায়ের বুকের দুধের উপাদান সহজে হজম হয়। মায়ের দুধে পূর্ণমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে বলে শিশুর রাতকানা হবার আশঙ্কা থাকে না। পরবর্তীতে শিশুর ক্যান্সার,ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ হবার আশঙ্কা কমে যায়।

শিশুকে দুধ দেওয়ার মধ্যে মায়ের জন্যও রয়েছে অনেক উপকারিতা। জন্মের পরপরই শিশুকে বুকের দুধ দিলে মায়ের প্রসবজনিত রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হয়। পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা হয় না। গর্ভজনিত স্ফীত জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। যেসব মা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের স্তন,জরায়ু এবং ডিম্বকোষের ক্যান্সার হবার আশঙ্কা কম থাকে। বুকের দুধ খাওয়ালে স্বাভাবিক জন্মনিয়ন্ত্রণে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া যারা ঘন ঘন গর্ভবতী হতে চান না তাদের জন্যও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। শিশুর সাথে মায়ের আত্মিক বন্ধন দৃঢ় হয়।

শিশু মায়ের কল্যাণ নিশ্চিত করতেই মায়ের দুধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তবে এখনও অনেক দেশেই বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি হয় নি। অপ্রতুল জ্ঞান ও অজ্ঞতার কারণে অনেক শিশু মায়ের দুধ পান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সন্তান নেওয়ার আগে থেকেই এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। পাশাপাশি শিশুর নাম রাখার ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি। নবজাতক শিশুর জন্য পিতামাতার একটি বিশেষ দায়িত্ব হলো জন্মের পর তার জন্য শ্রুতিমধুর ও সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা। একটি শিশুর সুন্দর নাম,সে শিশুর জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ উপহার। এমন কোনো নাম রাখা ঠিক নয়,যার অর্থ তুচ্ছ, নিকৃষ্ট। এক্ষেত্রে শিশু বড় হওয়ার পর হীনমন্যতায় ভুগতে পারে। ইসলাম ধর্মে সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

খাদ্য-পুষ্টি প্রাপ্তি এবং ভালো নামের অধিকারী হওয়াটা প্রতিটি শিশুরই ন্যায্য অধিকার। জন্মের পরপরই সবচেয়ে সুষম খাদ্য অর্থাৎ মায়ের দুধ পাওয়াটাও শিশুর অধিকারের মধ্যে পড়ে। পাশাপাশি জন্মের পর সুন্দর ও অর্থবোধক নাম প্রাপ্তিটাও শিশুর অধিকার।কারণ দু'টি ক্ষেত্রেই শিশুর নিজের পক্ষ থেকে কিছু করার ক্ষমতা নেই। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ২